Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#31
বিদিশার সাথে কথা বলার পরে ফোনটা ছেড়ে দিলামঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দুদের গলির মুখটায় একটা কালো রঙের ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।  মাধুরী ট্যাক্সির আওয়াজ শুনেই দৌড় লাগালোআমাদেরকে বললো, ‘বিদিশা এসেছে মনে হয়আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি।’
ট্যাক্সি থেকে বিদিশা নামছেআমি ঘরের জানলা দিয়ে বিদিশাকে দেখতে পাচ্ছিলামএকটা ময়ুরকন্ঠী রঙের ছাপা শাড়ী পড়েছে বিদিশাহাতে ওর সাদা রঙের একটা ভ্যানিটি ব্যাগগলির ল্যাম্পপোষ্টের উজ্জ্বল আলোতে বিদিশার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলামমাধুরী ঘর থেকে বেরিয়ে ওর সামনে যেতেই বিদিশা ওকে জড়িয়ে ধরলোদুজনের দুজনকে জড়িয়ে ধরেই কি যেন একটু কথা হলদুজনে তারপর হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভেন্দুদের বাড়ীর দিকে
 
ঘরের মধ্যে আমি শুভেন্দু আর রনি বসেশুভেন্দু বললো, শোন দেব, ‘তোকে আর বিদিশাকে কিন্তু আমরা আধঘন্টার জন্য আলাদা ছেড়ে দেবোতারপরে কিন্তু পুরো সময়টাই আমাদেরআজকে অনেক গল্প হবে, আনন্দ হবেআর তুই কিন্তু ভালো ভালো কয়েকটা গান গাইবিনইলে তোকে কিন্তু ছাড়বো না আজকে।’
 
আমি কিছু বলতে চাইছিলামরনি বললো, ‘ভ্যানতারা আর করিস না তোবিদিশা কি তোর পালিয়ে যাচ্ছে? এই তো এলোএবারে একেবারে তোর পার্মানেন্ট হয়ে গেলো।’
 
বারান্দা পেরিয়ে বিদিশা মাধুরীর সঙ্গে ঘরে ঢুকছেআমি মুখটা একটু নিচু করে নিলামমনে হল, এই বুঝি বিদিশা ঘরে ঢুকলোআর তার আগে থেকেই আমিও কেমন আড়ষ্ট মতন হয়ে গেলাম
মাধুরী বিদিশাকে ঘরে ঢুকিয়ে বললো, ‘দেখছো তো? ওখানে ওই সোফার ওপরে কে বসে আছেচেনো লোকটাকে? চিনে বলো দেখি, ওই ভদ্রলোকটি কে?
আমি মুখ তুলে বিদিশার মুখের দিকে তাকাতেই, বিদিশাও আমার মুখের দিকে তাকালোপ্রায় বেশ কিছু বছর পরে বিদিশাকে আবার খুব কাছ থেকে দেখছি, আমার মনে হল, সর্ব্বাঙ্গ সুন্দরী বিদিশা, চোখ দিয়ে যার সৌন্দর্য ও শরীরটাকে আকন্ঠে পান করা যায়, তাকে আবার এতো কাছ থেকে দেখছি আমিআমার যেন সব স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছেঠিক যেন চোখের সামনে এক রূপমাধুরীঅথচ প্রথমদিন ওর এই রূপ দেখে আমি কিন্তু ওর প্রেমে পড়িনিবিদিশাই আমাকে প্রথম চিঠি দিলোতারপরেই আমাদের প্রেম শুরু হলমনের সঙ্গে মন মেলাতে লাগলো, দু একটা দিনতারপরে যখন ওর রূপের প্রশংসা শুরু করলাম, বিদিশা বললো, ‘তাই বুঝি? আমি এতো সুন্দর? প্রথম দিনতো দেখে বলোনি আমাকে।’
প্রজাপতির মতো কোমল ওর সুন্দর ঠোঁটদুটোকে দেখছিলাম কলেজে পড়ার সময় ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে কতবার যে আমার গলা জড়িয়ে আমার গালে চুমু খেয়েছিল ওই ঠোঁট দিয়ে, তার ইয়ত্তা নেইমনে হলো সৌন্দর্য ও মনের দিক থেকে বিদিশা যেন এখনো সেই তরুনীই আছেতরুনী নারীর মতোই ভালোবাসার জন্য উন্মুখ, হয়তো আমাকেই আবার সুখী করার জন্য তার হৃদয় মনে এক উজাড় আকাঙ্খাএই আকাঙ্খা অতীতের সেই আকাঙ্খার থেকেও তীব্র আরো উত্তপ্ত
 শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘এই রনি, এদের দুজনের চোখদুটো যে দুজনের দিকে আটকে গেছে রেআমরা ঘরে বসে আছি, অথচ এদের দুজনের কারুর খেয়ালই নেইব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিস?’
 
রনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না রে দেববিদিশা আসছে বলে, তোকে আমরা বাড়ীতে ডাকলামতাই বলে তুই?-
 
মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘বসো না বসোদাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ থাকবে? পারো যদি ওই লোকটার পাশে গিয়ে বসো।’ বলে আমার দিকে আঙুল তুলে মাধুরী বিদিশাকে ইশারা করলো
 
যেটা হয়তো হবারই কথা ছিল নাশুভেন্দু আর রনি এবার সেটাই করে দেখালো দুজনেওরা দুজন এগিয়ে গেলো বিদিশার দিকেবিদিশার হাত দুটো দুপাশ থেকে দুজনে ধরলো, তারপর দুজনে ওকে টেনে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো আমার পাশে
 
শুভেন্দু বললো, ‘নে, এবার তোরা দুজনে পাশাপাশিএখন আর দুজনে দুজনের দিকে তাকাবি নাএখন আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবি, আর আমাদের সাথেই কথা বলবি।’
 
মাধুরী রনিকে বললো, ‘তুমি আর ছোড়দা, তোমরা দুজনে এত হিংসুটে কেন গো? দেখোতো বিদিশা কি ভাবছেআর দেবদার মুখটাও কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে।’
শুভেন্দু বললো, ‘এই ছুড়ী, বাজে বকিস নাদেব কে আমি ভালো করেই চিনিওকে মানা করলেও ও ঠিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিদিশার দিকে তাকাবেআমাকে সামনে থেকে সব লক্ষ্য রাখতে হবে।’
 
রসিকতার মানে যে বোঝে, সে জানেবুঝতেই পারছিলাম, এই শুরু হল এবার শুভেন্দু আর রনি যা করবে, আমাকে আর বিদিশাকে, দুজনকেই এখন মেনে নিতে হবে
 
শুভেন্দু বললো, ‘আচ্ছা দেব, বিদিশা তো ফিরে এলোবড়সড় করে একটা পার্টী কবে দিচ্ছিস বল? আর বিয়ের ডেটটা যদি এখনি ঠিক করে ফেলিসতাহলে কিন্তু বৌভাতের রিসেপশনটা ভালো করে দিতে হবেমেনু কার্ডের আইটেম কি কি করবি, এখন থেকে ঠিক করে ফেলক্যাটারিং এর অর্ডারটা রনিকে দিয়ে দিচ্ছিও বিজলী গ্রীলের সাথে কথা বলে নেবে।’
মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘এই বিদিশা চা খাবে তো? সবার জন্য তাহলে চা করে আনছি।’
 
শুভেন্দু মাধুরীকে বললো, ‘এই দেবকেও ভালো করে একবার জিজ্ঞেসে করে নেবাবু তো একজনের জন্য চা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকদিন আগে, যার জন্য ছেড়েছিলেন, তিনি এখন তার পাশেই বসে আছেনদেব এখন আবার তার সামনে চা খাবেন কিনা?
বলেই ও আমার দিকে তাকালো
 বিদিশা একটু লজ্জা করছিলশুভেন্দু বললো, ‘লজ্জ্বা কোরো না, লজ্জ্বা কোরো নাআমরা সবাই তোমাদের বন্ধুতোমাদের পুরোনো ইতিহাসটা আমরা তো সবাই জানিতাই বলছি।’
মাধুরী চুপ করে দাঁড়িয়েছিল হাঁ করেবিদিশা বললো, ‘তুমি যাও তো মাধুরীচা করে নিয়ে এসোতোমার এই দাদার কথা শুনো নাতোমার দাদাটা ভীষন দুষ্টু।’
রনি হাসছিল দাঁত বার করেশুভেন্দু কে বললো, ‘দেখলি? বিদিশা যেই হ্যাঁ বলে দিলো, অমনি দেবও না করলো নাকি গভীর প্রেম, একেবারে লায়লা মজনুর মতন।’
আমি রনিকে বললাম, ‘চা তো আমি খাইতবে আগে যেরকম ঘনঘন খেতাম, সেটা এখন খাই নাসকালে একবার খাইআর এই বিকেল বা সন্ধেবেলাটা একবার
শুভেন্দু বললো, ‘আগে ঘনঘন যখন খেতিস, তখন সেটাকে কমিয়ে দিলি কেন? কেউ তোকে বারণ করেছিলোসেটা বল না?’
বলেই ও বিদিশার দিকে তাকালো
আমি বললাম, বয়স হলে, সবই কমাতে হয় আসতে আসতেশরীরটার দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে
শুভেন্দু বললো, কত বয়স হয়েছে তোর? এমন ভাবে বলছিস, যেন তুই বুড়ো হয়ে গেছিসএই তো কলেজ পাশ করলাম কয়েক বছর আগেএখনো দিনগুলো সব মনে আছেসেই কফি হাউস, শিয়ালদহর কাফেটরিয়া, বসন্ত কেবিন, কলেজ স্কোয়ারের পাশে শরবতের দোকানটা, কি যেন নাম?
রনি বললো, প্যারামাউন্ট প্যারামাউন্ট ওখানে দেব, বিদিশাকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে যেতো মনে নেই?
শুভেন্দু বললো, হ্যাঁ কি না, বিদিশা শরবত খেতে খুব ভালোবাসে তারপরে যখন আমরা সবাই মিলে একদিন ওদের পিছু নিলাম, দেবের তারপরের দিন থেকে কলেজ স্কোয়ারে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো ব্যাচারা খুব কষ্ট পেয়েছিল বিদিশার জন্য
শুভেন্দু আর রনি দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলোবুঝলাম, দুটোতে মিলে যা শুরু করেছে, পুরোনো কাসুন্দী সব ঘেঁটে বার করছেএবার না মিনুর কথাটাও আলোচনার মধ্যে এসে না যায়
বলতে বলতেই মাধুরী চা নিয়ে ঢুকলোএকটা বড় প্লেটে করে সবার জন্য চা নিয়ে এসেছেবিদিশা বললো, সেকীরে? এত তাড়াতাড়ি চা হয়ে গেল?
রনি বললো, ও খুব ফাস্টসব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি করেরান্নাটাও তাড়াতাড়ি সারেসেই জন্য আমারো খুব সুবিধে হয়
থাক আর অত প্রশংসা করতে হবে নাএবার চা’ টা সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে ধরো তো দেখিবলেই মাধুরী সবার দিকে চা বাড়িয়ে দিতে লাগলোবিদিশা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলোকিন্তু কাপটা প্রথমে আমাকেই দিলোশুভেন্দু উল্টো দিক থেকে সব লক্ষ্য করছিলোআমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলোতারপরেই বললো, দেব কিন্তু আজ গান শোনাবে বলেছে, তোরা সবাই মিলে ওকে আর একবার বলআর বিদিশা, তুমিও একটু বলোনইলে যে বাবু আবার-
চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিবিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলোআমাকে বললো, কি গাইবে না?
 
আমি বললাম, হ্যাঁগাইবো
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 02-07-2021, 12:41 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)