Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#12
মা তখন ঘরে চলে এসেছেশুক্লা মাকে দেখে বললো, ‘মাসীমা, ছেলের এখনো বিয়ে দেন নি কেন? কি করেছেন কি? আমি তো ভাবলাম, এতোদিন বাদে দেবের বাড়ী যাচ্ছি, নিশ্চই ওর বউটাকেও দেখতে পাবো।’
মা বললো, ‘কি আর করবো বলো? এটা তো আমার ছেলেরই মর্জী সবআমি তো কবে থেকে ওকে বলছিউনি শুনবেন, তবে তো কথা।’
মার সাথে শুক্লার আলাপ করালামমাকে বললাম, ‘মা, একে তুমি চেনো? এ হল শুক্লাআমার কলেজের বান্ধবী।’
মা যেন পুরোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করছেমানে মিনুর চেহারার সাথে শুক্লার চেহারাটা মেলানোর চেষ্টা করছেভাবছে আগে ওকে দেখেছে কিনা? আমি ঠিক বুঝে গেলাম, মাকে বললাম, ‘না মা, একে তুমি আগে কখনো দেখো নিএর নাম শুক্লাও আজই প্রথম আমার বাড়ীতে এলো।’
মা এবার বুঝতে পারলো, শুক্লাকে বললো, ‘চা খাবে তুমি? তাহলে চা করে নিয়ে আসি।’
শুক্লা বললো, ‘তা খেতে পারি মাসীমাতবে আপনি ব্যস্ত হবেন নাআজ আমি দেবের কাছে এসেছি, ওরজন্য একটা বীরাট সারপ্রাইজ আছে বলেআপনার ছেলে শুনলে একেবারে চমকে যাবে।’
কথাটা এমন ভাবে বললো, আমি সত্যি চমকে গেলামএও এতদিন পরে এসে বলে সারপ্রাইজ? কি হচ্ছেটা কি আজকে? সকাল থেকে উঠে খালি সারপ্রাইজের কথা শুনছিকিসের সারপ্রাইজ?
শুক্লা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলআমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আছে আছে বৎসসাধে কি তোর কাছে আমি এসেছি? এমনি এমনি? খবর তো একটা আছেক্রমশ প্রকাশ্য।’
আমার মনে হল, এরা বোধহয় সবকটা এতদিন পরে একজোট হয়েছে আবারআমার মুখে কি হাসি ফোটাবে কে জানে? কিছুতো একটা ব্যাপার নিশ্চই আছে, যেটা শুভেন্দু, শুক্লা দুজনেই জানেঅথচ আমাকে বলতে চাইছে না
আমি বেশ ধন্দে পড়ে গেলামমনে পড়লো, শুভেন্দুর কথাশুভেন্দু বলেছে, আজ ওর বাসায় যেতেসেখানে রনি থাকবেআর সাথে রনির বউ থাকবেকিন্তু শুক্লার কথা তো বলেনিআবার শুক্লা সাতসকালে আমার বাড়ীতে ছুটে চলে এসেছেআমাকে সারপ্রাইজের কথা বলছেতাহলে শুক্লাও নিশ্চই জানে বিষয়টাআসল ব্যাপারটা কি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না
ওকে বললাম, ‘কে বলেছে তোকে? শুভেন্দু?’
শুক্লা যেন আকাশ থেকে পড়লোআমাকে বললো, ‘শুভেন্দু কেন বলবে? আমার কাছে তো ওর ফোন নম্বরই নেইএকটু আগেই তোকে তো বললামসব ফোন নম্বরগুলো হারিয়ে গেছে
ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে নাশুক্লাকে বললাম, দাঁড়া, দাঁড়াতুই বলছিস শুভেন্দুর ফোন নম্বর তোর কাছে নেইঅথচ শুভেন্দুও আমাকে ফোন করে একই কথা বলেছে
শুক্লা বললো, কি বলেছে?
-ওই সারপ্রাইজতোর জন্য সারপ্রাইজ আছেকি সারপ্রাইজ কে জানেআমাকে বললো, এখানে এলে সব জানতে পারবিসন্ধেবেলা ওর বাড়ীতে যেতে বলেছেওখানে গেলে নাকি সারপ্রাইজটা আমাকে দেখাবে
 শুক্লা বললো, ‘তুইও শুভেন্দুর কথা বিশ্বাস করিস? ও আর্ধেক কথা মুখ দিয়ে বলেআর আর্ধেক কথা পেট দিয়েপট্টী মেরে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে তোকেও আবার দেবে তোকে সারপ্রাইজ?’
আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে নাসব অদ্ভূতুড়ে লাগছেএরা সব পুরোনো বন্ধুগুলো আমাকে নিয়ে মজা করছে নাকি? শুক্লাকে বললাম, ‘কি সারপ্রাইজ বলবি তো? তবে তো বুঝবোতুইও বলবি নাশুভেন্দুও বললো নাতাহলে আমি কোথায় যাই বলতো?’
শুক্লা দেখলাম, ওর ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে কি একটা বার করলোআমার হাতে দিয়ে বললো, এটা দেখতো
হাতে নিয়ে দেখলাম, ওটা একটা ছোট্টো ভাঁজ করা কাগজ, তাতে হিজিবিজি কিসব লেখা রয়েছেশুক্লাকে বললাম, ‘এগুলো কি? আমি তো কিছুই ভালো করে বুঝতে পারছি না
শুক্লা বললো, ‘ভালো করে দেখতাহলেই বুঝতে পারবি।’
একটা ছোট্ট চিরকূটের মত কাগজতাতে মাঝখানে দুতিন লাইন লেখা রয়েছেকিন্তু লেখাটাকে পেন দিয়ে হিজিবিজি করে কে যেন কেটে দিয়েছেভালো করে লেখাটা পড়া যাচ্ছে নাশুধু ওপরে ছোট্ট একটা নামনামটা কষ্ট করে হলেও পড়া যাচ্ছেব এ রস্সিকার, দ এ রস্সিকার, তালবশ্য এ আকারএ কি? এতো বিদিশাবিদিশাকে লেখা শুভেন্দুর সেই চিঠিতোর কাছে এলো কি করে? আমার নাম করে বিদিশাকে যে চিঠিটা শুভেন্দু দিয়েছিলএতো সেই চিঠিটা তুই এই চিঠিটা কোথায় পেলি?
শুক্লাকে দেখি, একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছেসেই পুরোনো দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আবার মনে করাচ্ছে আমাকেকিছু দূঃখ, কিছু আনন্দ এই নিয়েই তো জীবনসবাই তো সুখী হতে চায়তারমধ্যেও কেউ সুখী হয়, কেউ হয় নাআমাকে বললো, আমিও পারলাম না জীবনে সুখী হতেআর তুই ও নয়
কাগজটা হাতে নিয়ে ভালো করে আবার দেখতে লাগলাম তলার লেখাগুলো সব পেন দিয়ে কাটা নিজের নামটাই যা কাটেনি বোঝা যাচ্ছে
শুক্লাকে দেখলাম, কিরকম অদ্ভূত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আমার মনের ভেতরটা বোঝার চেষ্টা করছেআমাকে বললো, কলেজ ছাড়ার পর তোকে তো কোনদিন বলিনিভেবেছিলাম বলবও না কোনোদিনতুই কি ভেবেছিলিস, বিদিশা এই কান্ড করতে পারে?
আমার মুখে যেন ভাষা নেই, সেভাবেই বললাম, কিন্তু বিদিশার তোকে এই চিঠি?
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ তোকে না বলেই আমি সেদিন বিদিশাদের বাড়ীতে গিয়েছিলামসেদিন বিদিশাকে আমি অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলামওকে বলেছিলাম, দেব কে তুই ভুল বুঝছিস বিদিশাওর মত ছেলে হয় নাদেব যা করেছে, না বুঝেই করে ফেলেছেওকে তুই ক্ষমা করে দেছেলেটার কাছে গিয়ে একবার দেখ তোর জন্য শুধু শুধু ও কত কষ্ট পাচ্ছে।’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি শুক্লার দিকেশুক্লা বললো, ‘সেদিন কিছুতেই আমার কথা মানতে চাইল না বিদিশাঅতকরে ওকে বোঝলাম, তাও মানলো নাযখন ফিরে আসছি, আমার হাতে এই কাগজটা দিলোআমাকে বললো, ‘দেবকে দিওএটা ওরই চিঠিমন থেকে যখন মুছে ফেলেছি, তখন চিঠিটা রেখেই বা কি হবে? চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলাম হিজিবিজি করে কেটে দিয়েছে পুরো চিঠিটারাগে, ক্রোধে বিদিশা তখন ফেটে পড়ছেআমি তাও বললাম, এ চিঠি আমি দেবকে দিয়ে কি করবো বিদিশা? তোর যদি রাখতে ইচ্ছে না হয়, তুই চিঠিটা ফেলে দেএ চিঠি আমাকে কেন দিচ্ছিস?’
 শুক্লা বললো, সেদিন তোদের দূরন্ত প্রেমটার ইতি সমাপ্তি ঘটলোচোখের সামনে দেখলাম, ভালোবাসার মৃত্যু ঘটেছেভালোবাসাকে নাকি অত সহজে ধরে রাখা যায় নাতুই ও পারলি নাআর আমি তো নই ই
আমি বললাম, আমাকে তো তুই বলিসনিকেন গেলি তুই বিদিশার বাড়ীতে?
শুক্লা বললো, ‘তোকে তো আমি চিনিতোর জন্য শুক্লা যা করতে পারবেআর কেউ নয় সেদিন বাড়ী বয়ে ওর কাছে আমি গেছিলামঅনেক আশা নিয়েই গেছিলামকিন্তু বিদিশার মনকে আমি সেদিন ঘোরাতে পারিনিকেন জানি না, আমার মনে হয়েছিল, মেয়েটার মন বলে কিছু নেইচট করে যার বিশ্বাস এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারেসে কি করে তোর মনটা জিততে চেয়েছিল? চিঠিটা আমার হাতে দিতে এতটুকু ওর বাঁধলো না?
শুক্লা বললো, ‘ভাবছিস এতদিন পরে এই চিঠি তোকে কেন আমি এনে দেখাচ্ছিতাই তো? রাগে ঘেন্নায়, আমারো সেদিন মনে হয়েছিল, ওর কাছে আমি গেলাম, আর ও বলছে এই চিঠিটা তোকে এনে দিতে? বিদিশার মনটা এত নিষ্ঠুর? তোর মনের অবস্থা তখন কি,আমি তো জানি তোকে এনে বিদিশার চিঠিটা দেখাবো আর বলবো, এই দেখ, কি করেছে বিদিশা, এই দেখ সেই চিঠিহিজিবিজি করে কেটেছে লেখাগুলোকেএর জন্য তুই আর কত কষ্ট পাবি? ভুলে যা ওকেবিদিশার মত মেয়ে তোর যোগ্য নয়
আমি বললাম, তারপরে?
শুক্লা বললো, ‘তারপরে মন চাইলেও আর আসতে পারিনি তোর কাছে জানি তুই কষ্ট পাবিএই চিঠি তোকে কিছুতেই দেখানো যায় নাচিঠিটা তাই নিজের কাছেই রেখে দিলাম ডায়েরীর পাতার মধ্যে কোথায় যে রেখেছিলাম, মনেও নেইঘরের মধ্যে থেকেই চিঠিটা তারপর হারিয়ে গেলোআর খুঁজেও দেখিনি কোনদিনকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে পুরোনো ডায়েরীগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিহঠাৎই দেখি, পুরোনো একটা ডায়েরীর মধ্যে এই সেই চিঠি
আমি অবাক হয়ে বললাম, এতদিন বাদে, তুই চিঠিটা আবার আমার কাছে নিয়ে এলি? কেন হঠাৎ? এ আর দেখে আমি কি করবো?
শুক্লা বললো, যে তোকে কষ্ট দিয়ে চলে গেল, সে অন্তত জীবনে সুখী হোক, তুই তো এটাই চেয়েছিলিস?
আমি বললাম, আমি চাই সবাই ভালো থাকুকপৃথিবীতে আমিই যদি একমাত্র কষ্ট পাই, তাহলেও কোন দূঃখ নেইভগবান সবাইকে সুখ দিক, আমাকে দূঃখ দিলে কোন কষ্ট নেইভাগ্যে যা আছে লেখা, সেটা কি আর খন্ডানো যায়? হয়তো এটাই আমার লেখা ছিল জীবনে
 
শুক্লা বললো, জীবনটা বড় অদ্ভূততাই না দেব?
আমি বললাম, যার যার জীবন যেরকম, সেরকমই তাকে মানিয়ে নিতে হবেএটাই তো ধ্রুব সত্য
শুক্লা বললো, ‘বিদিশার জন্য তুই কি এখনো কষ্ট পাস?’
ওকে হেসে বললাম, নিজের কষ্টটা নিজের কাছেই রাখতে হয়সবাইকে অত বলতে নেইআমি অন্যের দূঃখটা শুনতে বেশী ভালোবাসিএই পৃথিবীতে তো আর আমি একা নইসবার কথাই ভাবতে হবেভগবানেরও অনেক দায়িত্ব
শুক্লা বললো, আমিই না তোকে পরে বলেছিলাম,বিদিশা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:44 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)