Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#11
সৌগত. শুক্লার পেছনে লাইন দিয়ে বসে আছেএদিকে শুক্লা তো কিছুতেই রাজী হচ্ছে নাআমাকে শুভেন্দু বললো, ‘তুই তাহলে এক কাজ করসৌগতর যখন কোন চান্স নেই, আমাকে শুক্লার সাথে ভিড়িয়ে দেওকে আমার জীবন সঙ্গিনী বানিয়ে নিচ্ছি।’
-তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছেআমরা এই চারজনে এত ভালো বন্ধুশুধু একটা মেয়ের জন্য বন্ধুত্ব খারাপ করবি নাকি?
শুভেন্দু দেখলো না ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবেও আশা ছেড়ে দিলদুদিন বাদে হঠাৎই আমার পাশে বসে বললো, ‘তোদের এই প্রেম টেম কিছু টিকবে নাসব বকওয়াশ জিনিষভেবে দেখলাম, আমি যা আছি ঠিকই আছিএসব রমনী ভালোবাসার চক্করে পড়ে থেকে লাভ নেইএই মেয়েগুলো সব দুষ্টুএরা সব মুখোস পড়ে থাকেআমার বাবা দুষ্ট গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো
কথাটা ইয়ার্কী মেরেই বলেছিল শুভেন্দুকিন্তু ওর কথাটা সত্যি হয়ে গেলআমার আর সৌগতর দুজনেরই প্রেম টিকলো না শেষ পর্যন্ত
স্নান সেরে আমি সবে মাত্র বাথরুম থেকে বেরিয়েছিমা বললো, দেখতো নিচে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালোকে যেন নিচে থেকে 'দেব'' দেব' বলে ডাকছেও তো মেয়ের গলাআমি খালি গায়ে পাজামাটা গলিয়ে নিয়ে বারান্দায় গেলামদেখলাম এক মহিলা পেছন ফিরে আমার পাড়ার একটা ছেলেকে কি জিজ্ঞাসা করছেএকটু পরেই মহিলা পেছন ফিরলোআমি দেখে অবাকদেখি শুক্লা হাত নাড়ছে আমার দিকে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়েঅবাক হলামশুক্লা এসেছে, এতদিন পরেআমার বাড়ীতে কি মনে করে? সকাল থেকেই পুরোনো বন্ধুরা আমাকে সব স্মরণ করছে একে একেশুভেন্দুর ফোনের পর শুক্লাও এতদিন পরে হঠাৎ?
 
নিচে থেকেই শুক্লা বললো, কোনদিক দিয়ে যাবো বলতো? তোদের সিঁড়িটা কোনদিকে?
আমি বারান্দা থেকে ওকে ওপরে ওঠার সিঁড়িটা দেখিয়ে দিলাম নিচে দাঁড়িয়ে তখনো শুক্লা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল ওর হাসিটা দেখে মনে হল, শুক্লার সেই পুরোনো হাসিকলেজে ওর হাসি দেখে সৌগত বলতো, ‘মেয়েরা বিয়ের আগে সব হাসে, আর বিয়ের পরে ভালো স্বামী না জুটলে সব কাঁদতে শুরু করেওর এই সুন্দর হাসিটা কতদিন থাকবে বলতো ‘দেব’? বলছি আমার অফারটাকে অ্যাকসেপ্ট করে নিতে, কিছুতেই করছে নাআমি ওকে রাজরানী করে রেখে দিতাম, এই হাসিটাও ও সারাজীবনের মত প্রানখুলে হাসতে পারতোতা না, শুধু শুধু ও জেদ ধরে বসে আছে।’
শুক্লা যখন সৌগতর সাথে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আবার সৌগতর মুখে হাসি ধরে নাএমন ভাব করতে লাগলো, তখন আবার আমাকে চেনে নাঅথচ একসময় আমার কাছে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতোশুক্লার মন পাচ্ছে না বলে আমার কাছে এসে আফসোস করত বলতো, ‘মেয়েদের মুখে হাসিটাই কি যথেষ্ট নাকি? ওসব ঢঙ্গী হাসিআসল হল, মেয়েদের মনশুক্লার মনটা খুব কঠোরআমার প্রতি এতটা নির্দয় হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না।’
ওকে বলতাম, ‘তুই এককাজ কর, কালীঘাটে গিয়ে একটা মানত করে আয়শুক্লার সাথে তোর ফিটিং হয়ে গেলে মাকালীকে খুশি করে আসবিমানত করলে মা কালী তোর মনবাসনা নিশ্চই পূরণ করবে।’
 সৌগত বলতো, ‘তুই হচ্ছিস মহা ঢ্যামনাবিদিশাকে পেয়ে গেছিস তো, এখন আর আমাকে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেইআমি শালা দেবদাসের মত জ্বলে পুড়ে মরছি, কারুর আমাকে নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই?’
এরপরে এমন কান্ড করে বসলো সৌগত আমার তো মাথায় হাতদেখি অ্যানুয়াল ফাংশনের দিন সকালবেলাই এক পেট মাল খেয়ে বসে আছেকলেজে এসে শুক্লাকেও হঠাৎ সামনাসামনি পেয়ে গেলসৌগতর চোখদুটো তখন এমন টকটকে লাল হয়ে রয়েছে, শুক্লা ওই দেখে ভয় পেয়ে গেলোসৌগত বললো, তুমি আমার সাথে প্রেম করবে কিনা বলো? নইলে আমি কিন্ত-
শুক্লা প্রথমে ভয় পেয়েছিল, তারপরে একটু সাহসী হয়ে বললো, কি করবে? সোসাইড? শোলের ধর্মেন্দ্রর মত?
আমি সৌগতকে বললাম, এই সৌগত কি হচ্ছে টা কি? সাতসকালে মাল খেয়ে এসব কি করছিস তুই?
হঠাৎ কোত্থেকে তখন শুভেন্দুও ওখানে এসে হাজিরআমাকে বললো, ‘লে হালুয়া এর আবার কি হল?’
আমি শুভেন্দুকে কিছুটা দূরে নিয়ে গেলামকানে কানে বললাম, ‘ওকে কিছু বলিস নাতাহলে আরো বামাল করবেআমি শুক্লাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।’
শুক্লা তো রেগে অস্থিরআমাকে বললো, ‘মাল খেয়ে আবার চোখ রাঙাচ্ছে আমাকে কত বড় সাহস ওর তুই কি ভাবিস? যার তার সাথে শুক্লার মত মেয়ে ভেড়ে নাআগে ওর চরিত্রটাকে ঠিক করতে বল।’ তারপরে ওর সাথে প্রেম করবো কিনা আমি ভেবে দেখবো।’
পাছে সৌগত বেশী হজ্জূতি না করতে পারেশুক্লা সবসময় আমার পাশেই বসে রইলোসৌগত তখনো চোখ বড় বড় করে দেখে যাচ্ছে শুক্লাকে দূর থেকেএকটু পরে দেখি সৌগত মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যাচ্ছে কলেজ ছেড়েশুভেন্দু মাথা নেড়ে বললো, ‘কোথায় যাচ্ছে মালটা?সুইসাইড করতে নাকি? এই শালাগুলোর ন্যাকামো দেখলে আর বাঁচি না।’
কলেজ ছেড়ে সৌগত চলে গেলএবার শুভেন্দু শুক্লার কাছে গেলশুক্লাকে বললো, ‘সৌগতর জন্য আমি এতবড় স্যাক্রিফাইস করলাম, আর তুই কিনা ব্যাচারেকে কষ্ট দিচ্ছিস?’
শুক্লা বললো, ‘মানে?’
শুভেন্দু বললো, ‘দেব’ আমাকে বলেছিলো, ‘বিদিশা আর ওর মত আমাকেও একটা প্রেম করতেআমি রাজী হয়েছিলাম, শ্র্রেফ তোর জন্য তোকে আমার মনে ধরেছিলতারপরে দেখলাম, না কাজটা করা ঠিক হবে নাএটা সৌগতকে দূঃখ দেওয়া হবেও  এমনি তোকে ভালোবাসেব্যাচারাকে কষ্ট দিয়ে আর লাভ নেইআর তুই কিনা ওকে শেষ পর্যন্ত দেবদাস বানিয়েই ছাড়লি? ‘পার্বতী’ এই ছিল তোর মনে?’
শুক্লা কিন্তু কিন্তু করেও শুভেন্দুর কথাটার শেষ উত্তর দিতে পারেনিতারপর থেকে সৌগত বেশ কয়েকদিন ধরে কলেজে আর আসছে নাআর শুক্লাও কলেজে এসে খালি আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘সৌগত এসেছে? আজও এলো না? পরপর তিনদিন হয়ে গেল ওর দেখা নেইকোথায় গেল ছেলেটা মনটা খারাপ লাগছে।’
 আমি বিদিশাকে যা করতে পারেনি, শুক্লা তাই করে বসলোযেদিন সৌগত কলেজে আবার এলো, দেখলাম ওর চোখ মুখ শুকনোযেন শুক্লার জন্য কেঁদে কেঁদে চোখের তলায় কালি পড়ে গেছেভালো করে কারুর সাথে কথা বলছে নামাথা নিচু করে বসে আছে একদম লাস্টের সীটেশুক্লা সৌগতকে দেখে আমার পাশের সীটটা থেকে উঠে গেল ওর কাছেসৌগতর পাশে গিয়ে বসলোওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলমুখটা নিচু করে সৌগতকে বললো, ‘কি হয়েছে তোমার? কলেজে আসোনি কেন এতদিন?’
সৌগত জবাব দিচ্ছেনামুখ নিচু করে তখনো বসে আছেআমাদের ফিজিক্স এর প্রফেশর নয়নবাবু এলেন, ক্লাস শুরু হলোআমি নোট নিচ্ছি, স্যারের লেকচার শুনছিহঠাৎই চোখটা গিয়ে পড়ল পেছনে ওদের সীটেদেখি শুক্লা তখন মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে সৌগতর ঘাড়েযেন পার্বতী মাথা গুঁজেছে দেবদাসের শরীরেঅমর প্রেমকথার রেপ্লিকা দেখছি চোখের সামনেজানতাম যা শুরু করেছে দুজনে, নয়নবাবুর ঠিক চোখে পড়বেহলও তাইস্যার, ওদের দুজনের ওই রকম দেখে হঠাৎই ধমক দিয়ে বললেন, ‘সৌগত আর শুক্লা, কি করছো তোমরা পেছনে? বিহেভ ইয়োরসেল্ফ
শুভেন্দু ফিক ফিক করে হাসছে আমাকে পরে বললো, ‘দেখলি? শালা কত নাটকই পারে এরা দুজনে
 
সিঁড়ি দিয়ে শুক্লা উপরে উঠে এসেছে দ্বোতলায় কলেজে যখন পড়তো, কোনদিন আমার এই ফ্ল্যাটে ও আসেনিদুদুবার মিনু এসেছিল আর বিদিশাতো বেশ কয়েকবারকিন্তু শুক্লাকে এতদিন পরে আজ প্রথম আসতে দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলামওকে বললাম, আরে ‘শুক্লা? তুই? আমি তো ভাবতেই পারিনি তুই আসবিএ কাকে দেখছি আমি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
দরজা খুলে ঘরে ঢোকালাম ওকে শুক্লা বললো, ‘আমি জানতাম তুই অবাক হবি কেমন যেন পরপর হয়ে গেছিস তুই খোঁজখবরও রাখিস নাফোন নম্বরটাও সেই যে একবার দিয়েছিলিস, হারিয়ে ফেলেছিপুরোনো মোবাইলটা জলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল, আর আমার পুরোনো বন্ধুদের নম্বরগুলোও সব হারিয়ে গেলকাউকে পাই নানা তোকে, না শুভেন্দুকে, না রনিকেকাউকেই নয়শেষমেষে আজ আর থাকতে পারিনিট্যাক্সি ধরে তোর কাছে ছুটে এসেছি।’
ওকে বললাম, ‘বেশ করেছিসএতদিন বাদে আমাকেও যে তোর মনে পড়েছেআয় ভেতরে আয়।’
আমার বসার ঘরে শুক্লাকে বসালাম, বললাম, কি খাবি বল? ওফ তোকে দেখে আমার যা আনন্দ হচ্ছে না, কি আর বলবো
শুক্লা বললো, তা গায়ক মশাইয়ের খবর কি? বিয়ে থা কি করা হয়েছে? না এখনো সেই-
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলামভাবছি, শুক্লার কথার কি উত্তর দেবোওকে বললাম, ‘না আমি ভাবছি চিরকুমারই আমি থাকতে চাই।’
শুক্লা হেসে একটু টিপ্পনি করলো আমাকেবললো, চিরকুমার না ছাই? বলো, এখনো তোমার বিদিশার জন্য মন পড়ে আছেতাই না? বিয়ে করে যে তোকে ছেড়ে চলে গেলআর তুইও পারিস
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)