Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#10
আমি জানি, মা সেদিন সরল মনে মিনুকে সব বলে দিয়েছিল, ‘ও তো ফাংশন দেখেতে গেছে ফিরবে সেই দেরীতে আমাকে বলে গেছে ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা হবে।’
মিনুর চোখে মুখে তখন কৌতূহলমাকে জিজ্ঞাসা করে বসলো, কার সাথে গেছে বলতে পারবেন?
মাও সরল মনে ওকে বলেদিল, ‘ও যে বললো, বিদিশাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেকলেজে ওরা দুজনে কেউ তো যায়নি আজকেসোজা বাড়ী থেকে চলে গেছে ফাংশনে।’
বাড়ীতে ফেরার পর, মা, মিনুকে সব বলে দিয়েছে দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলামমিনু কদিন ধরেই আমার পেছনে শুধু পড়ে রয়েছেখালি জ্বালাতন করছেওর ছোটো বোনকে আমায় গান শেখাতে হবে
আমি রাজী নইযেটুকু সময় পাই, কলেজ, পড়াশুনা তার বাইরে শুধু বিদিশার সাথে প্রেমএর মধ্যে মাষ্টারী করার আর আমার সখ নেইতবু মিনু আমার পেছন ছাড়বে নাএকেবারে জোঁকের মতন পেছনে লেগে রয়েছে
সেদিন মিনুকে কথা দিয়েছিলাম, ওর বাড়ীতে যাবঝেমেলাটা সৌগতই আগে পাকিয়ে রেখেছেওর হয়ে এমন ভাবে আমাকে সাধাসাধি করতে শুরু করলো, যেন মাথাব্যাথাটা ওরমিনু সৌগতকে রিকোয়েস্ট করেছে, ‘তুই আমার হয়ে দেবকে রাজী করাদেব কিছুতেই রাজী হচ্ছে নাতুই বললে হয়তো রাজী হবে।’
সৌগত মিনুর হয়ে আমার কাছে এসে যখন পীড়াপীড়ি করতে শুরু করলো, ওকে বললাম, তোর এখানে কি স্বার্থ আছে বলতো? কেন এই নিয়ে আমাকে বারে বারে ডিস্টার্ব করছিস?
এটা আসলে সৌগতর দোষ নয়এটা নাকি আমার গলার দোষসৌগত বললো, ‘কি করব? যা গানের গলা তোরমিনু তোর পুরো ফিদা হয়ে গেছেওর ছোটবোন বেশ কিছুদিন ধরেই গান শিখছেমিনুর ধারণা, তোর হাতে পড়লে ও নাকি ভালো গায়িকা হতে পারবেএখন ধরেছে আমাকেদেব তুই আমার মানটা রাখ।’
কলেজ থেকে মিনুদের বাড়ীটা খুব কাছেগলি ধরে শর্টকাটে গেলে পাঁচ মিনিটআমি জানি, মিনুর স্বভাবটা ভালো নয়রোজ কলেজ থেকে একটা করে ছেলে ধরে ওর বাড়ী নিয়ে যায়যেহেতু বাড়ীটা কলেজের খুব কাছে, কেউ নাও করে নাইদানিং মিনুকে নিয়ে আদিখ্যেতাটা খুব বেড়ে গেছে সকলেরযেন সবার নয়নের মনিচার পাঁচটা ছেলের সাথে সবসময় বসে আছেতারা ওর গায়ের যেখানে সেখানে হাত দিচ্ছে, খুনসুটি করছেদেখতে ভীষন বাজে লাগে এসবআমি একটু অন্য স্বভাবেরচোখের সামনে বাড়াবাড়িটা বেশী পছন্দ নয়তাও কাউকে কিছু বলিনাওটা যার যার ব্যক্তিগত, মজ্জাগত স্বভাবঅন্যতে যেটা করে আনন্দ পায়, সেখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই
মিনু কদিন ধরেই ক্যান্টিনে খুব যাতায়াত শুরু করেছেআগে খুব একটা বেশী আসতো নাকার মুখে শুনেছে, ক্যান্টিনে রোজ একঘন্টা করে আমি গান গেয়ে পুরো ক্যান্টিন মাতিয়ে রাখিকলেজে আমার এই গুনে সুনাম অনেকসারা কলেজ আমার গান শোনার জন্য পাগল
জানি না আমার মধ্যে ও কি পেয়েছিলমিনুকে প্রথম যেদিন কলেজে দেখেছিলাম, বুঝেছিলাম ও একটু অন্য টাইপের বিদিশার মতই মিনুর স্লীম ফিগারতবে গায়ের রঙটা বিদিশার মত অত ফর্সা নয়নাকটা একটু চ্যাপটা মতন, চোখ মুখ সুন্দরতবে বিদিশার মত অতীব সুন্দরী নয়
 কদিন ধরেই মেয়েটাকে আমার সহ্য হচ্ছে নাকলেজে ফার্স্ট ইয়ারটা সেভাবে আসেই নি মিনুসেসময় নাকি ওর মা মারা গিয়েছিলকোনরকমে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড ইয়ার থেকে আসা শুরু করলো কলেজেএসেই দেখছে কলেজে আমি তখন খুব ফেমাসসবাই দেব কে একনামে চেনেএ কলেজে দেব বলতে একজনই আছেপ্রথমে মিনু আমার গানের ভক্ত হলোতারপর থেকে যেচে গায়ে পড়ে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতআমি খুব একটা পাত্তা দিতাম নাএদিকে কলেজে বিদিশার সাথেও ভালো করে আমি কথা বলতে পারি নামিনু কাছে থাকলে ছুক ছুক করেকি যে চায় মেয়েটা আমার ঠিক বোধগম্য হয় নাযখন আমাকে ওর বোনের কথাটা তুললো, তখন ভাবলাম এটা মনে হয় একটা বাহানাএই সুযোগে আমাকেও বোধহয় ওর বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইছে
আমি কিছুতেই মিনুর সাথে ভীড়বো নাওর বাড়ীতেও যাবো নাএরপরে সৌগত যখন এসে আমায় বললো, বিশ্বাসটা কিছুটা হলেও হলকিন্তু আমি কিছুতেই রাজী হতে পারছিলাম না গানের মাষ্টারি করে পয়সা রোজগার করার ইচ্ছা আমার একেবারেই নেইএটা স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরে আমাকে করতে হবে, আর এর জন্য কিছুটা সময়ও আমার নষ্ট হবে
আমি সৌগতকে না করে দিয়েছি, কারণ বিদিশাও শুনে আমাকে মানা করে দিয়েছেঠিক ফাংশনে যাবার আগের দিন মিনু এসে প্রায় পায়ে ধরে আমাকে সাধাসাধি করতে শুরু করলো‘দেব’ তোর পায়ে পড়ছি, তোকে রিকোয়েস্ট করছি, তুই প্লীজ একবার চলসেরকম হলে সপ্তাহে একদিনের জন্য আসবিক্ষতি কি আছে? আমার বোন তাতেই খুশি হবে
বোনকে খুশি করার জন্য আমাকে যেতে হবে? এতো ভারী আবদারবললাম, ঠিক আছে কাল একবার যাবোকিন্তু শেখাবো কিনা বলতে পারছি নাতোর বোনের গলাটা একবার দেখে নেবোতারপর আমার ভালো ওস্তাদের সাথে জানাশোনা আছেতোর বোনকে ওখানে পাঠিয়ে দেবো, ভালো তালিম পাবে
মিনু তাতেই খুশী হলসেদিন আমার কলেজে গিয়ে, ওখান থেকে মিনুদের বাড়ীতে যাবার কথাসকালে বিদিশা, ফোন করে বললো, ‘এই আজ একটা ফাংশন দেখতে যাবে? নেতাজী ইন্ডোরেবোম্বে থেকে ভালো ভালো আটিস্ট আসছে
আমি বললাম, টিকিট কত করে? বিদিশা বললো, তিনশ টাকা করেওই নিয়ে তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে নাটিকিটের দাম আমি দেবোতবে আমি বাড়ীতে কিছু বলতে চাই নাবাবা শুনলে যেতে দিতে চাইবে নাকলেজে না গিয়ে আমরা না হয় একটু ঘুরবো, ফিরবো, তারপর বিকেলে পৌঁছে যাবো, নেতাজী ইন্ডোরে
মিনুকে শেষমেষ কথা দিয়েও কলেজে যাইনি বিদিশার জন্যবিকেলবেলা আমার বাড়ীতে এসে হাজিরসাথে সৌগতকেও নিয়ে এসেছেকেন কলেজে যাইনি, সেটা আবার যাচাই করছে এসেসাংঘাতিক মেয়ে
বিদিশার মত আমাকে প্রেম নিবেদন করেনি মিনুকিন্তু ওর ওই একটা আবদার মেটাতে গিয়ে আমাকে কত খেসারত দিতে হয়েছিল, সে কথা বলবো আপনাদের, পরে
 ডায়েরীর কয়েকটা পাতা লেখা শেষ করে এবার আমি উঠে পড়লামসত্যি অনেক দেরী হয়ে গেছেএবার রেডী হয়ে আমাকে বেরোতে হবেমাও দেখি তখন আমার খাবার বেড়ে দেবার তোড়জোড় করছেসেলফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি, শুভেন্দুকে একটা ফোন করবো কিনা? আমার যেন আর তর সইছে নাভাবছি, সাতটা নয়, দুঘন্টা আগেই নয় ওর বাড়ী চলে যাবোগিয়ে বলবো, ‘দ্যাখ, তুই ডেকেছিস, আমি আগে ভাগেই তাই চলে এসেছিএবার বল, কি সারপ্রাইজ দিবি আমাকে
ব্যাপারটা জানতে খুব ইচ্ছে করছিলোতখন কত করে জানতে চাইলামশুভেন্দু কিছুতেই বললো না আমাকেওখানে না যাওয়া অবধি ও কিছুই বলবে না আমাকেশুভেন্দু বলেছে, সন্ধেবেলা রনিও আসবে ওর বউকে নিয়েতিনজনে আমরা গল্প করবো, খুব মজা হবে
সারপ্রাইজের কথাটা এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছেজানি, শুভেন্দুর স্বভাবটা বরাবরই এরকমের ও কিছুতেই আগে থেকে কিছু বলে না আমাকে যেমন বিদিশাকে চিঠি দেবার ব্যাপারটা লুকিয়েছিলএকবার কাউকে কিছু না বলে কুলুমানালি সিমলা ঘুরে এলোফিরে যখন এলো তখন ও খুব অসুস্থবাড়ীতে গিয়ে জানলাম ও বেড়াতে গিয়েছিল তারপর ফিরে এসেই এই কান্ডটা বাঁধিয়েছেঅথচ কলেজে আমাদের কাউকেই কিছু বলে যায়েনি ওবাবু ফিরে এসেছেন ওখান থেকে সুন্দর সুন্দর কিছু গিফ্ট কিনে এনেছেন বন্ধুদের জন্যআমাকে বললো, কলেজে যেতে পারছি না, তাই তোদের বাড়ীতে ডেকে গিফ্টগুলো সব দিচ্ছি, এটাও একধরনের সারপ্রাইজ
শুভেন্দু কখন কি বলে, আর কখন কি করে বসে বোঝা মুশকিল আমাকে বললো, ভাবছি ‘দেব’ এবার তোদের মত আমিও একটা প্রেম করবোতোকে আর সৌগত দেখে আমারও লাইন মারতে ইচ্ছে করছে শালা! ভালো জমিয়েছিস তোরা, দুজনে যা শুরু করেছিস, এবার না ইতিহাস রচনা হয়ে যায়
প্রেমের অনেক ডেফিনেশন আছেশুভেন্দুকে বোঝানোর চেষ্টা করতামশুভেন্দু বলতো, প্রেম হচ্ছে সব বেকার জিনিষওসব মূর্খরা করেচালু লোকেরা কখনও প্রেম করবে নাদুদিন মেয়েটেয়ে নিয়ে ঘুরবে, তারপর ফুটিয়ে দেবেব্যাস
আমি বলতাম ও তো অসামাজিক প্রেম হয়ে গেলসামাজিক প্রেমের, সত্যিকারের ভালোবাসার ডেফিনেশনটাই অন্যরকম
শুভেন্দু বলতো, তুই বোঝা দেখি-
আমি বলতাম, দেখ, তুই প্রেরক হিসেবে বা প্রেরনাদায়ক হিসেবে কাউকে চাস না জীবনে?
শুভেন্দু বলতো, প্রেরণা না হাতিএখন মেয়েরা শুধু পয়সা চায় পয়সাবুঝলি? ও তোকে মোটিভেশন দেবে কি? পয়সাটাই ওদের কাছে মোটিভেশন
-তাহলেও জীবন সঙ্গিনীতো একটা দরকারযে তোকে অনাবিল এক আনন্দের স্তরে নিয়ে যাবেতোকে ভালোবাসবে, আদর করবে, সোহাগ করবে, চুম্বন করবেএকাকীত্ব ঘুচিয়ে দেবেরমনী ছাড়া জীবন কি করে কাটাবি, এ কখনো হয় নাকি? এখন যে যুবতী, সেই তো হবে তোর রমনী।’
আমার কথা শুনে কেমন ভাবুক মত হয়ে গেল শুভেন্দুশেষ পর্যন্ত রাজী হয়ে বললো, কিন্তু কার সাথে প্রেমটা করা যায় বল দেখিতুই তো শালা ভালোটাকে নিয়ে বসে আছিসকলেজে মেয়েগুলো সব ঢোকে, দুদিনের মধ্যেই অন্য ছেলের সাথে ফিট হয়ে যায়সেরকম কে আছে, যে আমার সাথে প্রেম করবে?
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)