26-06-2021, 10:47 AM
সুনীল বলল, একি করছ মা তুমি? আমাকে ছাড়ো। ছাড়ো আমাকে।
-তুমি তো লক্ষ্মী ছেলে সুনীল। মা তোমাকে আদর করছে, একটু আদরটা করতে দাও। আমি নয় তোমার পাঞ্জাবীটা গা থেকে খুলে তোমাকে একটু আরাম দিই। তুমি বরং বিছানায় শুয়ে থাকো।
সুনীল দেখল পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। মনীষার মা ওকে দুহাত দিয়ে বিছানায় চিৎপাৎ করে শুইয়ে দিয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো খুলে, ওটাকে ওপরের দিকে টেনে তোলবার চেষ্টা করছে। পাঞ্জাবীটা গা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিয়ে এবার সুনীলের পাজামার দড়িতে হাত লাগিয়ে ফেলেছে মনীষার মা।
-মা তুমি একি করছ?
বেশ একটু রেগেমেগেই শাশুড়ীকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিল সুনীল। নিজেও কিছুটা বিছানার একপাশে সরে এসেছে। মায়ের কীর্তিকলাপ দেখে ও নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছে। এক কোনে গিয়ে ও রীতিমতন হাঁফাতে লাগল। যেন আর একটু হলেই সুনীলকে গিলে ফেলত মনীষার মা।
শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে সুনীল দেখল মনিষার মা দিব্যি হাসছেন। হাসিটা আসতে আসতে ছোট থেকে বড় হতে লাগল। ক্রমশই অট্টহাসিতে পরিণত হল। সুনীল বুঝতে পারল না ব্যাপারটা কি হচ্ছে? মা হাসছেন? এসব করেও মজা পাচ্ছেন ভদ্রমহিলা?
-ওফ সুনীল। সত্যি তুমি এত ভয় পেয়ে যাবে আমি ভাবতে পারিনি। আরে বাবা পুরুষ হয়ে এত ভয় পেলে চলে? আমি তো তোমার পৌরুষের কথাই শুনে এসেছি মনীষার মুখ থেকে। আমার মেয়ের যৌবন ধন্য করে দিয়েছ। যার কল্যাণে আমার মেয়ের যৌবন সার্থক হল তাকে একবার নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল, আর তুমি কিনা ভয় পেয়ে গেলে। হি হি।
সুনীলের মনে হল, ওর শ্বাশুড়িমা ইচ্ছে করলে যা খুশি তাই করতে পারে। ইয়ার্কি ফাজলামীটা মারতে মারতে এমন একটা জায়গায় এসে দাড়িয়েছে, যে মহিলার চরিত্র সন্মন্ধে যে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবে। জামাই এর সাথে এমনটা করা যায় না কি? ছি ছি।
ও খুব সিরিয়াস হয়েই বলল, মা তুমি ব্যাপারটাকে লাইটলি নিতে পারো। কিন্তু আমার এসব পছন্দ নয়। তুমি ব্যাপারটাকে বড্ড ফ্রেন্ডলী করে ফেলছ, আমি কিন্তু অতটা ফ্রেন্ডলী হতে পারব না তোমার সাথে। মনীষা নেহাতই বলেছিল, তাই আমি আর কিছু মনে করলাম না। কিন্তু তুমি এভাবে বারে বারে আমাকে পরখ কোরো না। তাহলে কিন্তু আমি ভীষন ঝ্যামেলায় পড়ে যাব। কালই চলে যাব শিলিগুড়ি থেকে।
সুনীল কথাটা বলা মাত্রই মনীষার মা আঁতকে উঠলেন। আবার কাছে এসে সুনীলের মুখে নিজের হাতটা চাপা দিলেন। বললেন, না না সুনীল অমন কথা বোলো না। আমি তাহলে মরে যাব। মনীষার কাছে মুখ দেখাতে পারব না আমি। মাকে মেয়ে যেটুকু শ্রদ্ধা করে, সেটুকুও করবে না কাল থেকে। আমি কোথায় যাব? কাকে মুখ দেখাব? মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না আমার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি সুনীল। আর হবে না এখন থেকে।
সুনীল দেখল মনীষার মায়ের চোখে জল। মুখটা নিচু করে ফেলেছেন। টসটস করে জল গড়াচ্ছে চোখ দিয়ে। সেই জল সুনীলের পাজামার ওপরও দুফোটা পড়েছে। মা এত দূঃখ পেয়েছে, যে মায়ের কান্নাও থামাতে পারছে না কোন মতে। এত করেও মহিলার ভেতরে কি যে আছে বুঝতে পারছে না সুনীল। কখনও দূঃখ, কখনও মজা, কখনও হাসি, এ যেন বিচিত্র এক খেলা চলছে শ্বশুড়বাড়ীতে আসার পর থেকে। মায়ের মনের মধ্যে এমন কি ইচ্ছা লুকিয়ে রয়েছে, যেটা বারে বারেই নাজেহাল করে দিচ্ছে ওকে?
সুনীল শ্বাশুড়ির চোখ দুটো দুহাত দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, মা কেঁদো না। আরে আমি সত্যি তোমার ইয়ার্কীটা বুঝতে পারিনি। এরকম তো সাধারণত কেউ করে না। তাই। আর আমি তোমাকে কড়া ভাবে বলে কষ্ট দিলাম? আমি মাফ চাইছি তোমার কাছে।
মনীষার মা কান্নাটা থামিয়ে মুখ ভার করেই রইলেন। সুনীলকে বললেন, সুনীল আমি পাশের ঘরে চলে যাচ্ছি। একটু ঘুমোচ্ছি। তুমিও ঘুমোও। সন্ধে হলে আমি চা করে দেব। তারপর মনিরাও চলে আসবে। বলে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলেন ঘর ছেড়ে। সুনীল একা বিছানায় পড়ে রইল। ওর মনে হল কি থেকে কি যেন হয়ে গেল।
একা একা শুয়ে শুয়ে সুনীলের যেন ভাল লাগছিল কিছুই। মনীষার মায়ের মধ্যে কোথাও যেন একটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে এখনও সুনীল বুঝে উঠতে পারছে না। যে মহিলাটি এত সহজ সরল, তার মনের মধ্যেও কি এমন কামনা বাসনা লুকিয়ে থাকতে পারে? হাজার হোক অমন সুন্দর যার স্বামী রয়েছে, তার এমন আচরণ? চিন্তাই করা যায় না। সুনীল মনীষার মুখেই শুনেছে, মনীষার বাবা দেবতূল্য মানুষ। উনি মনিষার মায়ের জন্য অনেক স্বার্থই ত্যাগ করেছেন। তবে কেন মনীষার মা মনীষার বাবাকে ঠকাচ্ছেন? ওনাদের বিবাহিত জীবন কি সুখের নয়? এই টানাপোড়েনের মধ্যেও তো মনীষারও জন্ম হয়েছে এ ঘরে। তাহলে? হঠাৎ শ্বাশুড়ি মায়ের জামাই এর প্রতি আসক্তি? কি কারনে?
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে সুনীলের মনে হল, না এবার একটু শাশুড়ীর ঘরে যাওয়াটা দরকার। আসল ব্যাপারটা কি বুঝে উঠতে হবে। জিঞ্জেস করবে মনীষার মাকে, মা তোমার কি হয়েছে বলো? আমাকে যদি নিজের মনে করো, তাহলে ফ্রেন্ডলী বলো। যেমন ভাবে তুমি ফ্রেন্ডলী মেশার চেষ্টা করেছ আমার সাথে।
পাশের ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে ভেজানো ছিল। সুনীল আলতো করে ঠেলা মারতেই খুলে গেল। দেখল মনীষার মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেওয়ালের দিকে মুখ করে। সামনে একটা শোকেস্। ছোট্ট কাঁচের আলমাড়ীটার ওপর দাঁড় করানো একটা ফটো ফ্রেম। ফ্রেমে বাঁধানো দুটি ছবি। একটা মনীষার মায়ের আর একটা বাবার। দুটোই বিয়ের সময় তোলা ছবি। ফটো ফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে আপন মনে কি যেন বলে যাচ্ছেন। সুনীল ঢুকেছে ঘরে, ওনার খেয়াল নেই।
সুনীলের মনে হল, নিজের স্বামীর ফটোর দিকে তাকিয়ে ওনার মধ্যে কোন অভিমান ফুটে উঠছে, আপন মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছেন, আর সেই সাথে নিজের স্বামীর কাছে জবাব দিহি চাইছেন। কিছু কথা সুনীলের কানে এল। মনীষার বাবার কাছে যেন উনি কৈফিয়েত দাবী করলেন এই বলে, আর কত কষ্ট দেবে আমায়? যা করেছ, মনির কাছে তুমি লুকোতে পারবে? পারবে মেয়েকে সত্যি কথাটা বলতে? এইদিন দেখব বলেই কি আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম? একটা ভাল মানুষের মুখোস পড়ে কাটিয়েছ সারা জীবন। বিয়ের বাইশটা বছর আমার কেটে গেছে দেখতে দেখতে। স্বার্থপরের মতন আমার চোখকে ধূলো দিয়ে আমাকে অন্ধকারেই রেখেদিলে সারাটা জীবন। কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার? যে কুকর্মটা করতে তোমার একটুও বাধল না। ভাবলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে তুমি পার পেয়ে গেলে? শেষ অস্ত্র মনীষা, সেটাও যখন আমার হাত ছাড়া হয়ে গেল, তখন তোমার অকর্মের রাস্তাটা আরও খুলে গেল। বাহ্ বাহ্ আমার চরিত্রহীন স্বামী আমার। কি বাহাদুরীর কাজটাই না করেছ বুড়ো বয়সে। তোমাকে এখন পায় কে?
সুনীল পুরো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল মনীষার মায়ের কথা শুনে। কি এমন করেছে মনীষার বাবা? যার জন্য এত অভিমান ফুটে উঠেছে তার গলায়? মনে হচ্ছে একটা চরম বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে মায়ের জীবনে। মাকে এত কষ্ট পেতে দেখবে, সুনীলও আশা করেনি। পেছনে দাঁড়িয়ে মনীষার মায়ের কথা শুনে ওর গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছিল। বুঝতে পারছিল সাংঘাতিক একটা কিছু ঘটে গেছে মনীষার মায়ের জীবনে।
শ্বাশুড়ীকে এবার পেছন থেকে ডাকল সুনীল। - আমি সুনীল মা। কি হয়েছে তোমার?
মনীষার মা পেছনে ঘুরলেন। সুনীলকে দেখেই ছুটে এসে ওর বুকে মাথা রাখলেন। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। সুনীল শ্বাশুড়ির পিঠে হাত রেখে ওনাকে তখন স্বান্তনা দিচ্ছে। মনীষার মাকে আশ্বাস দিয়ে সুনীল বলল, কি হয়েছে? আমাকে তুমি বলো মা। তোমার কোন ভয় নেই।
সুনীলকে আসল সত্যিটা এবার বললেন মনীষার মা।-তোমার বাপী আবার আর একটা বিয়ে করেছে।
-অ্যাঁ?
-হ্যাঁ। আবার বিয়ে করেছে মনীষার বাপী। ভেবেছিল আমি কিছু টের পাব না। কিন্তু ওর সব নাটক ধরে ফেলেছি আমি। একটা কুলাঙ্গার লোক। জঘন্য কাজটা করতে একটুও লজ্জা করল না। সারাজীবন এই শরীটা নিয়ে শুধু যার কাছ থেকে অবহেলাই পেলাম, কোনদিন নিজের ভালবাসা, চাহিদার কথা জানাতে পারলাম না, শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সহ্য করে গেলাম। একবার মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না, বিয়ে করে বউকে যে ভালবাসাটা দিতে হয়, সেটাও কি আমি আশা করতে পারি না তোমার কাছ থেকে? কেন আমাকে চিরকাল এই সুখ থেকে তুমি বঞ্চিত করে রাখলে? কেন? কেন? আমি তো তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকেও বিয়ে করতে পারতাম? পাত্রের তো আমার অভাব ছিল না। শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এই কষ্টটাকে মেনে নিয়েছি। কেন? সে কাজ পাগল লোক বলে। ব্যাবসা আর কাজ নিয়েই পড়ে থাকতে সে ভালবাসে। মনীষাটাকেও পাঠিয়ে দিল কলকাতায়। আর আমি এখানে আরও একা পড়ে গেলাম। তাও মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু আর সহ্য করতে পারলাম না, যখন শুনলাম সে নাকি আবার কোন মহিলার সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছে। আমি কান্না চেপে রাখতে পারিনি সুনীল। বারবার মনীষাকে ফোন করেছি। কিন্তু একবারও ওর বাপীর গুণকীর্তনের কথা বলিনি। মনে সংশয় ছিল, আমার মত মনীষার জীবনেও যেন এমন দশা না হয়। ওকেও যেন চোখের জলে ভাসতে না হয় আমার মত। বারবার মনীষার কাছে একটা কথাই জানতে চেয়েছি, হ্যাঁরে তোদের বিবাহিত জীবন সুখের তো? তোর স্বামী তোকে আদর করে? তোদের দেহ ভালবাসা হয়? কাজের শেষে সুনীল নতুন করে উদ্যম ফিরে পায়? তোর শরীরটাকে চায়? তোকে আকাঙ্খা করে? ও যখন প্রতিটা কথায় হ্যাঁ বলতো, আমি যেন না দেখা কোন স্বপ্নের জন্য কাতর হয়ে যেতাম। বসে বসে একলা মনে এটাই ভাবতাম, সত্যি মনীষার বাপীর বদলে আমার যদি সুনীলের মত কোন স্বামী হত? আমাকে আদর করত। ভালবাসত। আমার না পাওয়া ইচ্ছাটাকে পূরণ করত। তাহলে বোধহয় সব দূঃখ আর বেদনা গুলো চলে যেত নিমেষের মধ্যে। মরে বেঁচে থাকার চেয়ে আমি যেন সত্যিকারের বাঁচতে পারতাম।
মনীষার মা কান্নাটা থামিয়ে মুখ ভার করেই রইলেন। সুনীলকে বললেন, সুনীল আমি পাশের ঘরে চলে যাচ্ছি। একটু ঘুমোচ্ছি। তুমিও ঘুমোও। সন্ধে হলে আমি চা করে দেব। তারপর মনিরাও চলে আসবে। বলে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলেন ঘর ছেড়ে। সুনীল একা বিছানায় পড়ে রইল। ওর মনে হল কি থেকে কি যেন হয়ে গেল।
একা একা শুয়ে শুয়ে সুনীলের যেন ভাল লাগছিল কিছুই। মনীষার মায়ের মধ্যে কোথাও যেন একটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে এখনও সুনীল বুঝে উঠতে পারছে না। যে মহিলাটি এত সহজ সরল, তার মনের মধ্যেও কি এমন কামনা বাসনা লুকিয়ে থাকতে পারে? হাজার হোক অমন সুন্দর যার স্বামী রয়েছে, তার এমন আচরণ? চিন্তাই করা যায় না। সুনীল মনীষার মুখেই শুনেছে, মনীষার বাবা দেবতূল্য মানুষ। উনি মনিষার মায়ের জন্য অনেক স্বার্থই ত্যাগ করেছেন। তবে কেন মনীষার মা মনীষার বাবাকে ঠকাচ্ছেন? ওনাদের বিবাহিত জীবন কি সুখের নয়? এই টানাপোড়েনের মধ্যেও তো মনীষারও জন্ম হয়েছে এ ঘরে। তাহলে? হঠাৎ শ্বাশুড়ি মায়ের জামাই এর প্রতি আসক্তি? কি কারনে?
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে সুনীলের মনে হল, না এবার একটু শাশুড়ীর ঘরে যাওয়াটা দরকার। আসল ব্যাপারটা কি বুঝে উঠতে হবে। জিঞ্জেস করবে মনীষার মাকে, মা তোমার কি হয়েছে বলো? আমাকে যদি নিজের মনে করো, তাহলে ফ্রেন্ডলী বলো। যেমন ভাবে তুমি ফ্রেন্ডলী মেশার চেষ্টা করেছ আমার সাথে।
পাশের ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে ভেজানো ছিল। সুনীল আলতো করে ঠেলা মারতেই খুলে গেল। দেখল মনীষার মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেওয়ালের দিকে মুখ করে। সামনে একটা শোকেস্। ছোট্ট কাঁচের আলমাড়ীটার ওপর দাঁড় করানো একটা ফটো ফ্রেম। ফ্রেমে বাঁধানো দুটি ছবি। একটা মনীষার মায়ের আর একটা বাবার। দুটোই বিয়ের সময় তোলা ছবি। ফটো ফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে আপন মনে কি যেন বলে যাচ্ছেন। সুনীল ঢুকেছে ঘরে, ওনার খেয়াল নেই।
সুনীলের মনে হল, নিজের স্বামীর ফটোর দিকে তাকিয়ে ওনার মধ্যে কোন অভিমান ফুটে উঠছে, আপন মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছেন, আর সেই সাথে নিজের স্বামীর কাছে জবাব দিহি চাইছেন। কিছু কথা সুনীলের কানে এল। মনীষার বাবার কাছে যেন উনি কৈফিয়েত দাবী করলেন এই বলে, আর কত কষ্ট দেবে আমায়? যা করেছ, মনির কাছে তুমি লুকোতে পারবে? পারবে মেয়েকে সত্যি কথাটা বলতে? এইদিন দেখব বলেই কি আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম? একটা ভাল মানুষের মুখোস পড়ে কাটিয়েছ সারা জীবন। বিয়ের বাইশটা বছর আমার কেটে গেছে দেখতে দেখতে। স্বার্থপরের মতন আমার চোখকে ধূলো দিয়ে আমাকে অন্ধকারেই রেখেদিলে সারাটা জীবন। কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার? যে কুকর্মটা করতে তোমার একটুও বাধল না। ভাবলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে তুমি পার পেয়ে গেলে? শেষ অস্ত্র মনীষা, সেটাও যখন আমার হাত ছাড়া হয়ে গেল, তখন তোমার অকর্মের রাস্তাটা আরও খুলে গেল। বাহ্ বাহ্ আমার চরিত্রহীন স্বামী আমার। কি বাহাদুরীর কাজটাই না করেছ বুড়ো বয়সে। তোমাকে এখন পায় কে?
সুনীল পুরো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল মনীষার মায়ের কথা শুনে। কি এমন করেছে মনীষার বাবা? যার জন্য এত অভিমান ফুটে উঠেছে তার গলায়? মনে হচ্ছে একটা চরম বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে মায়ের জীবনে। মাকে এত কষ্ট পেতে দেখবে, সুনীলও আশা করেনি। পেছনে দাঁড়িয়ে মনীষার মায়ের কথা শুনে ওর গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছিল। বুঝতে পারছিল সাংঘাতিক একটা কিছু ঘটে গেছে মনীষার মায়ের জীবনে।
শ্বাশুড়ীকে এবার পেছন থেকে ডাকল সুনীল। - আমি সুনীল মা। কি হয়েছে তোমার?
মনীষার মা পেছনে ঘুরলেন। সুনীলকে দেখেই ছুটে এসে ওর বুকে মাথা রাখলেন। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। সুনীল শ্বাশুড়ির পিঠে হাত রেখে ওনাকে তখন স্বান্তনা দিচ্ছে। মনীষার মাকে আশ্বাস দিয়ে সুনীল বলল, কি হয়েছে? আমাকে তুমি বলো মা। তোমার কোন ভয় নেই।
সুনীলকে আসল সত্যিটা এবার বললেন মনীষার মা।-তোমার বাপী আবার আর একটা বিয়ে করেছে।
-অ্যাঁ?
-হ্যাঁ। আবার বিয়ে করেছে মনীষার বাপী। ভেবেছিল আমি কিছু টের পাব না। কিন্তু ওর সব নাটক ধরে ফেলেছি আমি। একটা কুলাঙ্গার লোক। জঘন্য কাজটা করতে একটুও লজ্জা করল না। সারাজীবন এই শরীটা নিয়ে শুধু যার কাছ থেকে অবহেলাই পেলাম, কোনদিন নিজের ভালবাসা, চাহিদার কথা জানাতে পারলাম না, শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সহ্য করে গেলাম। একবার মুখ ফুটে বলতেও পারলাম না, বিয়ে করে বউকে যে ভালবাসাটা দিতে হয়, সেটাও কি আমি আশা করতে পারি না তোমার কাছ থেকে? কেন আমাকে চিরকাল এই সুখ থেকে তুমি বঞ্চিত করে রাখলে? কেন? কেন? আমি তো তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকেও বিয়ে করতে পারতাম? পাত্রের তো আমার অভাব ছিল না। শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এই কষ্টটাকে মেনে নিয়েছি। কেন? সে কাজ পাগল লোক বলে। ব্যাবসা আর কাজ নিয়েই পড়ে থাকতে সে ভালবাসে। মনীষাটাকেও পাঠিয়ে দিল কলকাতায়। আর আমি এখানে আরও একা পড়ে গেলাম। তাও মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু আর সহ্য করতে পারলাম না, যখন শুনলাম সে নাকি আবার কোন মহিলার সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছে। আমি কান্না চেপে রাখতে পারিনি সুনীল। বারবার মনীষাকে ফোন করেছি। কিন্তু একবারও ওর বাপীর গুণকীর্তনের কথা বলিনি। মনে সংশয় ছিল, আমার মত মনীষার জীবনেও যেন এমন দশা না হয়। ওকেও যেন চোখের জলে ভাসতে না হয় আমার মত। বারবার মনীষার কাছে একটা কথাই জানতে চেয়েছি, হ্যাঁরে তোদের বিবাহিত জীবন সুখের তো? তোর স্বামী তোকে আদর করে? তোদের দেহ ভালবাসা হয়? কাজের শেষে সুনীল নতুন করে উদ্যম ফিরে পায়? তোর শরীরটাকে চায়? তোকে আকাঙ্খা করে? ও যখন প্রতিটা কথায় হ্যাঁ বলতো, আমি যেন না দেখা কোন স্বপ্নের জন্য কাতর হয়ে যেতাম। বসে বসে একলা মনে এটাই ভাবতাম, সত্যি মনীষার বাপীর বদলে আমার যদি সুনীলের মত কোন স্বামী হত? আমাকে আদর করত। ভালবাসত। আমার না পাওয়া ইচ্ছাটাকে পূরণ করত। তাহলে বোধহয় সব দূঃখ আর বেদনা গুলো চলে যেত নিমেষের মধ্যে। মরে বেঁচে থাকার চেয়ে আমি যেন সত্যিকারের বাঁচতে পারতাম।
চলবে -