Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বীকারোক্তি (প্রথম পর্ব)
#5
।। ৫ ।।


সন্ধের মহানগরী। আকাশের কোণ থেকে সূর্যের শেষ রক্তাভাটুকু আরেকটি রবিবারকে বিদায় জানিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হল। সপ্তাহের কর্মব্যস্ততা শুরুর আগে শহরের ব্যস্ত রাজপথেও যেন আলস্যের ছোঁয়া। উইকেণ্ড উদযাপনকারীদের প্রমত্ত হুল্লোড় বাদ দিলে ইতিউতি কিছু নিঃসঙ্গ পথচারী আর ক্রেতার আশায় অপেক্ষমান বিষণ্ণগম্ভীর কতিপয় দোকানদার, প্রাণের চিহ্ন বলতে এটুকুই চোখে পড়ে। না, একটু ভুল হল। রাস্তার প্রান্ত বরাবর দুদিকেই কিছুদূর অন্তর আলোকমালায় সেজে ওঠা বহুতলগুলিকে ভুললে চলবে না, বহু নতুন জীবনের গাঁটছড়া বাঁধার সাক্ষী তারা। সারিসারি রক্তখদ্যোতের মত জ্বলতে থাকা টুনিবাল্বের আলো যেন আগামীর দিশারী, নীরবে বয়ে এনেছে ফাল্গুনের আগমনবার্তা।
 
এমনই একটি আলোকোজ্জ্বল বহুতলের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি গত দশ মিনিট। সময়ের হিসেবটা অবশ্য ঘড়িমাফিক, আমার ব্যক্তিগত ধারণা অন্ততপক্ষে আধঘণ্টা। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সহজ প্রাঞ্জল উদাহরণটা মনে করে নিজেকে চাঙ্গা করার একটা ব্যর্থ প্রয়াস ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি। লাভের লাভ কিছু হয়নি। মলমাসের অবসানে বাঙালির ঘরে ঘরে শুভ পরিণয়ের ধুম। আর কে না জানে, নিমন্ত্রণবাড়ি যাওয়ার আগে চার ঘণ্টা সাজসজ্জা-প্রসাধনে এবং আরো চার ঘণ্টা তার সংশোধনে বঙ্গনারীকুল ব্যয় না করলে গোটা বিবাহোৎসবটাই মাটি। অতএব অপেক্ষা। অনাদিঅনন্তকাল ব্যাপী অপেক্ষা, কখন কনেযাত্রীদের গাড়ি এসে পড়বে এবং সুসজ্জিত দাঁতের পাটি বার করে তাদের যথোচিত অভ্যর্থনা জানাতে হবে। এমনিতে এসমস্ত পারিবারিক ব্যাপারে সামাজিক শিষ্টাচারের দায়িত্ব কখনওই আমার ওপর বর্তায় না, কিন্তু আজ নেহাত একজনের অনুরোধে বাধ্য হয়ে...
 
বিকেলে ফোন আসতেই প্রমাদ গুনেছিলাম, না জানি কি অপেক্ষা করছে। তবে আজকের দিনটায় এজাতীয় উপদ্রব এলেও কিছু করার নেই জেনে গাম্ভীর্যের মুখোশ টেনে কথোপকথন শুরু করি। ফল হয় উল্টো।
 
"বাব্বাঃ কি গম্ভীর! বরের ছোট ভাই না বড় জেঠু?"
 
রীতিমত অপ্রস্তুত আমি। সদ্যপরিচিতার কাছ থেকে শুরুতেই ন্যাকা-ন্যাকা গলায় এমন সপাটে অভিযোগ ধেয়ে আসবে এ বোধহয় চিন্তার বাইরে ছিল। কোনওমতে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়।
 
"আমার গলাটা এরকমই, পছন্দ হোক বা না হোক"
"এম্মা, সে কথা বলিনি। ইশ্শ্ তুমি রাগ করলে?"
 
সত্যি, রিংকুদি ঠিকই বলেছে। এ যে দেখছি...
 
"নো ইটস্ ওকে। বলো হঠাৎ ফোন? ওদিকে সব ঠিকঠাক তো?"
"ইয়া এভরিথিং ইজ ফাইন। বাট একটা প্রবলেম হয়েছে..."
"সে কি? কারোর শরীর টরির খারাপ হল নাকি?"
"নো, বললাম না এভরিথিং ইজ ফাইন। বাট আসলে দ্য থিং ইজ আমাদের যে ড্রাইভারটা যাবে সে নর্থের দিকে তেমন চেনে না। আর আমরাও কেউ আই মীন ঐদিকটা যাইনি"
"সেটা এমন কিছু অসুবিধে নয়, অ্যাড্রেস তো জানোই, দরকার পড়লে কাছাকাছি এসে আমাদের যে কাউকে একটা ফোন করে দিলেই হবে"
"ওঃ ওকে, বাট তুমি কি একটু গেটের কাছে থাকতে পারবে? তাহলে ইট উইল বি ইজিয়ার ফর আস টু লোকেট..."
"বেশ তো, থাকব, বেরোনোর সময় শুধু একবার জানিয়ে দিও"
"গ্রেট, থ্যাঙ্কস আ লট গো। আই হোপ আই অ্যাম নট... আই মীন উই আর নট বদারিং ইয়ু টু মাচ"
"সার্টেইনলি নট"
 
এত বাজে অজুহাত বোধহয় এরকম ন্যাকা মেয়েরাই দিতে পারে। ড্রাইভার নাকি ডিরেকশান জানে না!
পাতি লাইন করার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। বিরক্তির মধ্যেও হাসি পেল, ওকে এই ব্যাপারটা এক্ষুণি বলতে হবে।
 
পকেট থেকে মোবাইল বের করতে গিয়েও অজান্তেই হাতটা থেমে গেল, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ওর শেষ মেসেজটা। এই মুহূর্তে তো ওকে কিছু বলা যাবে না, ও এখন এক পরপুরুষের ফ্ল্যাটে। সম্ভবত ভীষণ ব্যস্ত।
 
আচ্ছা এটা কি ধরনের ছেলেমানুষি করছি, ও তো নিজে থেকে যেতে চায়নি, আমিই প্রকারান্তরে বাধ্য করে পাঠালাম। এখন ওর ওপর রাগ করাটা স্রেফ বালখিল্যতা ছাড়া কিছু নয়। আর ফ্ল্যাটে গেলেই কি ঘনিষ্ঠ হতে হবে নাকি? এসব তো হীনম্মন্যতায় ভোগা দুর্বল পুরুষদের ভাবনা, আমায় মোটেই মানায় না। কিন্তু এখনও ফোনই বা করছে না কেন? লাঞ্চে গিয়েছিল, তা দ্বিপ্রহর গড়িয়ে আরও প্রায় চারটি ঘণ্টা কেটে গেছে। সুবোধ কলিগটি কত কোর্সের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিল? নাঃ মাথা থেকে প্রসঙ্গটাকে তাড়ানো দরকার। অতিথিসমাগমও শুরু হল বলে, এইবেলা ধরাচুড়ো পরে নেওয়া যাক।
 
অন্যমনে পোষাক পরিবর্তন করে নেমে এসেছি প্রবেশ-তোরণের কাছে। কনেযাত্রীদের গাড়ি রওনা দিয়েছে অবশেষে, সে বার্তাও মুঠোফোন মারফত পৌঁছে গেল। অতঃপর প্রতীক্ষা। কখন যে আসবে?
 
রাস্তার বিপরীতে একটা অন্ধকার পার্ক, পথবাতির চুঁইয়ে পড়া আলোর ক্ষীণ আভাসে যেটুকু দৃশ্যমান তা থেকে মনে হয় খেলাধুলোর পাট বহুদিন চুকে গেছে, এখন পরিত্যক্ত, হয়তো রাত বাড়লে অসামাজিক কাজকর্মের ভরসাস্থল। তরল আঁধারে দোলনা, সি-স, পীথাগোরাসের অতিভুজ-আকৃতির স্লিপ- সব কেমন হিমযুগের প্রস্তরীভূত প্রাগৈতিহাসিক পশুদের মত ঠায় দাঁড়িয়ে। আচ্ছা হঠাৎ করে যদি ওরা জেগে ওঠে? দ্যুৎ, যত্তসব উদ্ভট চিন্তা... দুপুর থেকে কি যে শুরু হয়েছে মাথার মধ্যে। 'স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়, ভালবাসা নয়/ হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়'অসংখ্য ঘুণপোকারা কুরে কুরে খাচ্ছে মস্তিষ্কের অগুনতি কোষ। মস্তিষ্ক, না হৃদয়? দুটো কি আলাদা করা যায়? করা সম্ভব? জটিল সে প্রশ্নের উত্তর আমার অজানা। সমগ্র সত্তা প্রাণপণ চেষ্টা করছে মনটাকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে। যতবারই চোখের পাতা বন্ধ করছি, ভেসে উঠছে আধো-আলোছায়ায় আচ্ছন্ন একটা অপ্রশস্ত ঘর। উঃ কি দুর্বিষহ এই দৃশ্যকল্প! মনের মধ্যে আরেকটা মন জেগে উঠে প্রতিবাদ জানায়। অতই যদি দুর্বিষহ হবে তবে ঐ কাঠিন্যের উৎস কি? কি কারণ দুপুরে স্নানঘরে সহসা বিস্ফোরণের?
 
আর পারছি না, দমবন্ধ হয়ে আসছে। অসহ্য এ প্রতীক্ষা। কখন আসবে কনেযাত্রীদের গাড়ি?
 
কখন আসবে, ওর ফোন?
 
ভগবান বলে কেউ থেকে থাকলেও তাঁর অস্তিত্ব বড়ই বায়বীয়, আজ অবধি প্রমাণ করা যায়নি। শুধু কিছু ব্যতিক্রমী মুহূর্তে তাঁর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় যখন মানুষের একান্ত মনোবাঞ্ছা তিনি পূরণ করেন। তবে আমার মত নাস্তিকের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণটা বোধগম্য হল না। সে না হোক, তিনি যে আছেন, ভীষণভাবেই আছেন সেটা উপলব্ধি করলাম ঠিক সেইসময় কয়েকগজ দূরত্বে কনেযাত্রীদের বাসটাকে থামতে দেখে। কিছু সেকেণ্ডের অপেক্ষা, বাড়ির চত্বরে আর তিলধারণের জায়গা রইল না। লোকলৌকিকতা, কুটুম্বিতা, ব্যজস্তুতি, ব্যজনিন্দা, পরনিন্দা-পরচর্চা- বিয়েবাড়ির আবশ্যিক উপকরণের সবই মজুত। কোনওকালে ভিড়ভাট্টা আমার তেমন পছন্দ নয়, আজ তারই আড়ালে নিজের অশান্ত মনের টানাপড়েনকে দিব্যি লুকিয়ে ফেললাম।
 
অচেনা-আধাচেনা মানুষজনের কোলাহল, চোখধাঁধানো সাজপোষাকের উগ্রতা, রকমারি বিদেশী সুগন্ধির ঘ্রাণে ভারী বাতাস আর হরেক আত্মীয়-সম্বোধন- এসবের মাঝে চোখে পড়ল সুসজ্জিতা একটি যুবতীকে, লাজনম্র নয়নে আমার দিকেই এগিয়ে এল, যদিও উন্নতনাসা আর উদ্ধত চিবুকে রূপের অহমিকা স্পষ্ট। দিন দুই আগে বিবাহবাসরে বা আজ বিকেলের ফোনালাপে কথা বলার তেমন আগ্রহ বোধ করিনি বরং উপেক্ষাই করতে চেয়েছি। ঠিক এই মুহূর্তে ওকেই সম্ভবত আমার সবথেকে বেশি প্রয়োজন। চুলোয় যাক আতিথেয়তা, পরিবারের সম্ভ্রম। কোনওদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে মেতে উঠলাম আলাপচারিতায়। আত্মীয়-পরিজনদের সামনে বেশি কথা বলতে অস্বস্তি হবে হৃদয়ঙ্গম করামাত্র দীপান্বিতাকে নিয়ে সটান ছাদে। কিছুটা অবাকই হয়েছে, তবে হঠাৎ পাওয়া নিভৃতির পুলক ওর চোখমুখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে। অতিথিসমাগমের এটা ব্যস্ততম সময়, আমন্ত্রিত জনসংখ্যার অধিকাংশই নীচে। হাতেগোনা কিছু স্বভাব-ধূমপায়ী আর খোলা হাওয়ার সন্ধানে ভিয়েনের গোটা দুই কারিগর ব্যতিরেকে এই নিরালায় আমাদের কূজনে কান পাতার জন্য কেউ নেই। তাও কথাবার্তা যা হচ্ছে নিম্নগ্রামে। অন্তরঙ্গতার জন্য সে একদিক থেকে ভালই। বিশেষত বার্তালাপের উদ্দেশ্য যখন মূলত পরস্পরের সান্নিধ্যলাভ। দখিনা হাওয়ায় সম্মুখবর্তিনীর খোলা চুল উড়ছে, মুখমণ্ডলে অবাধ্য ঝাঁপ দিলে তার ভাগ্যে জুটছে শাসন, আর স্খলিত স্বাধীনচেতা আঁচলের উপরি প্রাপ্তি শিথিল প্রশ্রয়। নির্বিকারে লক্ষ্য করে যাই। বাঙ্ময় চোখের তারায় কৌতূহল, আকুতি; ঈষৎ স্ফুরিত ওষ্ঠে না-বলতে পারা কথাদের ভিড়। যৌবনমদে গরবিনী গ্রীবা সামান্য তির্যক, হৃদয়াবেগ দমনে অপারগতা পরিস্ফুট অঞ্চলপ্রান্তে চঞ্চল আঙুলের অশান্ত যাতায়াতে। ভাললাগার রোমাঞ্চে স্ফীত বক্ষের স্পন্দন কিঞ্চিৎ দ্রুততর। মনকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে উপভোগ করি, ক্ষতি কি?
 
না, অপরাধবোধ জাগছে না, কেনই বা জাগবে? কথার ফাঁকে একটু আগে দেখে নিয়েছি, মোবাইলের কললিস্ট আর অপঠিত বার্তা, দুয়েরই ভাঁড়ার শূন্য। সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে। একা আমিই কি নীরবে প্রতীক্ষা করে যাব?
 
আমারও আছে উপেক্ষার ভাষা।
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি (প্রথম ভাগ) - by অনঙ্গপাল - 23-02-2021, 07:58 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)