Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance একটি ঝগড়ার দিন
#1
মোস্তফা সাহেব আজ বেজায় ক্ষেপে আছেন , ক্ষেপে আছেন জামাই এর উপর দাঁত কিড়মিড় করছেন আর মনে মনে ভাবছেন কত বড় সাহস ব্যাটার , ওনার সামনেই ওনার এক মেয়ে কে এমন কথা বলে বলে কিনা তুমি চলে গেলে রান্না বান্না করবে কে ? কেন রে ব্যাটা তোর বাপ রান্না করবে বিড়বিড় করে বলে উঠেন মোস্তফা সাহেব

 
কি গো বিড়বিড় করে কি বলছো ? আর অমন দাঁত পিষছ কেন ?  পাশে থেকে মোস্তফা সাহেবের স্ত্রী আমেনা বেগম বলে উঠে সাধে কি আর অমন করছি , তোমার মেয়ের জামাই এর জন্য এমন করছি , আরও খাওয়াও আস্ত মুরগি জবাই করে , ব্যাটা বলে কিনা আমার মেয়ে আমার সাথে গেলে রান্না করবে কে  ঝাঁঝিয়ে ওঠেন মোস্তফা সাহেব
 
সে কি আর বুঝে বলেছে , এমন তো সব পুরুষ লোক ই বলে , কেন তুমি কোনদিন বলোনি? স্বামীকে ঠেশ দিয়ে আরাম করে পান চিবুতে চিবুতে বলে আমেনা বেগম আজকাল স্বামীকে একটু হেনস্তা করতে পারলে বেশ লাগে আমেনার সেই কচি বয়স থেকে এই লোকটার ভয়ে ভয়েই জীবন কেটেছে , সারাক্ষন তটস্থ থাকতে হতো , একটু পান থেকে চুন খসলেই রেগে আগুন হয়ে জেতেন উকিল সাহেব
 
এহ বুঝে বলে নি স্ত্রী কে নকল করে বললেন মোস্তফা সাহেব , তোমার লাই পেয়ে মাথায় উঠেছে ব্যাটা , দাড়াও আমি ওকে ওর জায়গা দেখাচ্ছি 
 
আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছো কেন? সেখানে তো মেয়েকে বলে এলে যে জামাই ঠিক বলেছে , এখন সব জারিজুরি যা আছে আমার সামনে দেখাচ্ছো  , এ সব ওখানে বলে এলে ভালো হতো না  
 
এই চুপ ,চুপ একদম চুপ গর্জে উঠলেন মোস্তফা সাহেব আমার সামনে একদম পান চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলবে না
 
কেন বললে কি করবে হ্যাঁ শুনি বলেছিলাম তখন ওত কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিও না লেখা পড়া করতে দাও , না তিনি সুনবেন না আমার কথা বড় ঘর ছেলে ভালো , এখন সামলাও বড় ঘরের ঠ্যালা আমেনা বেগম ও রেগে গেলেন একটা ঝগড়া বুঝি বেধেই যাবে এমন অবস্থা মোস্তফা সাহেব কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু ওদের দুজনের মাঝে আবির এসে ঢুকল
 
এই তোমরা দুজনেই চুপ করো তো , কি শুরু করলে , আর নানাভাই ডাক্তার না তোমাকে উত্তেজিত হতে নিষেধ করেছে
 
নাতির কোথায় থেমে গেলো মোস্তফা সাহেব কিন্তু আমেনা বেগম থামার পাত্রি নন উনি নাকি স্বরে কান্না আরাম্ভ করলেন দেখছিস আবির সারাটা জীবন আমার সাথে এমন করে গেলো , নিজের মেয়ে মেয়ে আর অন্যের মেয়ে গরু ছাগল যখন তখন এমন খারাপ ব্যাবহার করে ইচ্ছে হয় যেদিক দু চোখ যায় চলে যাই
 
স্ত্রীর কান্না দেখে একটু একটু দমে এসেছে কিন্তু নাতির সামনে সেটা দেখাতে চান না তাই আবির কে উদ্দেশ্য করে বললেন তোর নানি কে বল কান্না থামাতে নয়তো ট্রেন থেকে ফেলে দেবো  এতে আমেনা বেগম আরও জোড়ে কাদতে লাগ্লেন
হ্যাঁ তাই দেবেই , বাপ মা তো কেউ নেই আমার তাই যা ইচ্ছা করতে পারবে কেউ কিচ্ছু বলবে না
 
ধুর ছাই তোমারা বুড়া বুড়ি এখানে বসে ঝগড়া করো আমি গেলাম এই বলে আবির কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো অনেক্ষন যাবত একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর
 
নাতি চলে যেতে মোস্তফা সাহেব চুপ করে গেলেন । দুজনের মাঝে আর কোন কথা হলো না তবে আমেনা বেগম অনবরত কেঁদে জাচ্ছেন । কাঁদতে কাঁদতে ওনার হেঁচকির মতো উঠে গেছে । প্রথম কয়েক মিনিট খুব বিরক্ত লাগলো তারপর ধিরে ধিরে মন নরম হয়ে এলো । মনে মনে ভাবলেন সত্যি তো খুব খারাপ একটা কথা বলে ফেলেছেন ট্রেন থেকে ফেলে দেবো এই কথাটা না বললেই পারতেন। কিন্তু এখন কি করা যায় সেটা ভেবে পাচ্ছেন না , বেশ কয়েকবার গলা খাঁকারি দিয়ে স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলো না । শেষে একটা বুদ্ধি মাথায় এলো , হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে কপাল কুচকে ফেললেন মোস্তফা সাহেব । তাতেও স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ হলো না দেখে একটু গোঙ্গানি দিলেন । আর তাতেই কাজ হলো, আমেনা বেগম কান্না ভুলে গেলেন দ্রুত স্বামীর পাশে চলে এলেন বহুদিনের কোমর ব্যাথার রোগী আমেনা বেগম ।
 
এই কি হলো তোমার , বুক ব্যাথা করছে ?  মুখে কনো উত্তর দিলেন না মোস্তফা সাহেব সুধু একটু মাথা ঝাকিয়ে জানিয়ে দিলেন করছে । পাগলের মতো হয়ে গেলো আমেনা বেগম , কি রেখে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না । কয়েকবার আবির কেও ডাকার চেষ্টা করলেন । গ্লাসে পানি ঢেলে স্বামীর মুখের সামনে ধরলেন ।
 
স্ত্রীর এমন দিশেহারা অবস্থা দেখে বেশ এঞ্জয় করছেন মোস্তফা সাহেব , তাই আরও কিছুক্ষন অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । ইচ্ছে করে কিছু পানি মুখের কোনা দিয়ে ফেলে দিলেন । এখন কি করি , এই তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে বার বার একি কথা বলতে লাগলেন আমেনা বেগম । নিজের আচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলেন স্বামীর ।
 
শেষ পর্যন্ত মোস্তফা সাহেব আর পারলেন না হেঁসে ফেললেন । স্বামীর হাঁসি মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমেনা বেগম । কয়েক সেকেন্ডের মতো সময় লাগলো ওনার  বুঝতে যে ব্যাপারটা কি ঘটেছে । অমনি মুখ ঝামটা মেড়ে আবার নিজের আসনে গিয়ে বসে পরলেন আমেনা বেগম । রাগে ওনার গা জলে যাচ্ছে । জানালা দিয়ে পিচ করে পানের চিপটি ফেললেন উনি ।
 
আমেনা এই আমেনা নরম সুরে ডাকলেন মোস্তফা সাহেব । কিন্তু আমেনা বেগম কোন উত্তর দিলেন না , উনি জালানা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন , ওনার বুকটা এখনো ধকধক করছে ।
 
আমু এই আমু... এবার বিয়ের পর দেয়া সোহাগের নামে ডাকলেন মোস্তফা সাহেব । কিন্তু তাতেও আমেনা শ্বারা দিলেন না । একটা  কান্না ওনার গলার ভেতর কুন্ডুলি পাকিয়ে আছেন । এই মানুষটা চলে গেলে যে ওনার জীবন টা শূন্য হয়ে যাবে সেটা আমেনা বেগম একটু আগে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে । এই বদমেজাজি দুষ্ট লোকটাই এখন ওনার জীবনের সব কিছু , জতদিন এর লোকটা আছে ততদিন ওনার একজন সঙ্গি আছে যেদিন উনি চলে যাবে সেদিন একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পরবেন । একটা জলের ধারা নেমে এলো আমেনা বেগমের গাল বেয়ে । সেটা মুছে জ্বলন্ত চোখে তাকালেন স্বামীর দিকে
 
আর ঢং করবে না একদম , তোমার কাছে এটা ছেলে মানুষী মনে হয়  স্ত্রীর রক্ত চক্ষু দেখে ভয় পাওয়ার ভান করলেন মোস্তফা সাহেব । তারপর একেবারে শরীর ঘেঁষে বসলেন স্ত্রীর । আগের মতো আর কিছুই নেই , বিয়ের সময় লিকলিকে একটা কাঠির মতো ছিলো আমেনা বেগম , বালিকা আমেনা বিয়ের প্রথম চার বছর বাপের বাড়িতেই থাকতো । মাঝে মাঝে এসে দেখা করতো । তারপর যখন এক গরমের ছুটিতে মোস্তফা সাহেব শ্বশুর বাড়ি গেলেন তখন আমেনা কে দেখে একদম চিনতে পারলেন না । যৌবনের দ্বার প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা সেই কিশোরীকে কিছুতেই নিজের স্ত্রীর সাথে মেলাতে পারছিলেন না তিনি । অপরিচিত ঐ লাবণ্যময়ী কে দেখে শরীরের রক্ত চলাচল দিগুন হয়ে গিয়েছিলো তখনকার যুবা মোস্তফা সাহেবের । দুদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে আমেনা কে সবার অমতে নিয়ে চলে এসেছিলো নিজের বাড়ি সেই থেকে আর কাছ ছাড়া করেনি । কত বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য মিনতি করতো কিন্তু মোস্তফা সাহেব তা কানে তুলতেন না । একেবারে যখন ৭ মাসের গর্ভবতী হলেন তখন মাস ছয়েকের জন্য বাপের বাড়ি দিয়েছিলেন বউ কে । সেই ছয় মাস যে কেমন করে কেটেছিল সেটা সুধু মোস্তফা সাহেব ই জানেন । এখন আর সেই যৌবন দুজনের কারই নেই তবে সেই যৌবন কালে আমেনার পাশে বসে যে প্রেমময় উষ্ণতা  তিনি অনুভব করতেন তা তিনি আজো পাচ্ছেন ।
 
দু হাতে বুকে টেনে নিলেন স্ত্রীর মাথা , ঠোঁটের কোনা দিয়ে বেয়ে পড়া লাল লালা নিজের হাতে মুছে দিলেন মোস্তফা সাহেব তারপর বললেন পান খেলে কিন্তু তোমাকে ভালোই লাগে আমেনা
 
স্বামীর বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বুজে আমেনা বলল মিথ্যা বলবে না একদম , তুমি কখনো আমার পান খাওয়া দেখতে পারো না
 
কে বলেছে পারি না , না পারলে কি পান কিনে এনে দিতাম তোমায় হেঁসে বললেন মোস্তফা সাহেব ।
 
হু বুঝেছি , সরাটা জীবন আমাকে জ্বালিয়ে এখন বুড়ো বয়সেও জ্বালাতন করা তোমার থামবে না বুঝি একেবারে বাচ্চা মেয়েদের মতো ঢং করে বললেন আমেনা বেগম ।
 
জ্বালাতন বুঝি আমি একা করেছি , বিয়ের পর পর তুমি যে রোজ বিছান্য প্রস্রাব করতে ভুলে গেছো? আর সেটা বন্ধ করার জন্য রোজ মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে আমি কোলে করে তমায় বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রস্রাব করিয়ে নিয়ে আসতাম
 
অসভ্য কোথাকার এই বলে স্বামীর বুকে একটা কিল দেয় আমেনা বেগম । আহহ করে ওঠে মোস্তফা সাহেব । নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কাটে আমেনা বেগম , যেখানটায় কিল দিয়েছে সেখানটায় আদর করে দিয়ে বলে ব্যাথা পেয়েছো খুব
 
নাহ এই বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মোস্তফা , নিজের জীবন যে প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছে মোস্তফা সাহেব । এই অচেনা অজানা পরের বাড়ির মেয়েটি ওনার এই দীর্ঘ জীবনের বেশিরভাগ অময় ওনার পাশে ছিলো । প্রেম ভালবাসা আর সেবা দিয়ে ওনার জীবন পরিপূর্ণ করে রেখেছে । অথচ কত অবিচার করেচেন উনি এই মেয়েটির সাথে । হ্যাঁ তিনি বুঝতে পারতেন যে এটা অবিচার হচ্ছে তারপর ও করতেন । করতে পারতেন বলেই করতেন । এতে তার এক ধরনের আনন্দ হতো, মনে হতো এই সুন্দরী মেয়েটির উপর ওনার কত করতিত্ব । রাত হয়ে গেছে অথচ মেয়েটি খাবার খেতে পারছে না কারন উনি তখন বসে বসে কেইস ফাইল দেখছেন । বাপের বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে অথচ যেতে পারছে না কারন উনি যেতে দিচ্ছেন না ।
 
তোমার উপর অনেক অত্যাচার করেছে আমেনা , পারলে ক্ষমা করে দিও বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন মোস্তফা সাহেব । স্বামীর কথা শুনে চোখ তুলে স্বামীর মুখের দিকে তাকায় আমেনা , তারপর একটা হাত দিয়ে স্বামীর কপালে হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে না তুমি কোন অত্যাচার করনি আমার উপর
 
হ্যাঁ করেছি , কত রাত জাগিয়ে রেখছি , কত বাপের বাড়ি যেতে চেয়েছো যেতে দেই নি
 
হ্যাঁ দাওনি , কিন্তু আমি যদি সত্যি সত্যি যেতে চাইতাম তাহলে তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারতে না , বুঝছো উকিল সাহেব মিষ্টি হেঁসে বলে আমেনা । আসলেই যখন আমেনা বাপের বাড়ি যেতে চাইতো তখন যেন ওনার স্বামীর ভালবাসা বহুগুন বেড়ে যেত , এটা সেটা কিনে দিতো ,আর এতো সোহাগ করতো যে বাপের বাড়ি যেতে না পাড়ার কষ্ট কখন যে ভুলে যেত সেটা আমেনা বেগম নিজেও বুঝতেন না ।
 
কি বললে আটকে রাখতে পারতাম না, অবশ্যই পারতাম বিছানায় টান টান করে চার হাত পা বেধে রাখাতাম মোস্তফা সাহেব দুষ্টুমি করে বললেন
 
ঈশ সখ কত
 
হঠাত কেবিন এর দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দুই দিকে ছিটকে গেলো বুড়ো বুড়ি । কেবিনে প্রবেশ করলো আবির , নানা নানি দুজন কে দুই দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল কি ব্যাপার তোমারা এখনো ঝগ্রার মাঝেই আছো, আরে মিটিয়ে ফেলো , ঝগড়ার পর প্রেম আরও গভির হয় এই বলে আবির মুচকি হেঁসে বসে পরলো ।   
 
                                                                     *****
 
 
 
 
সেই দুপুর থেকে মনিরা বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে । এমনকি দুপুরের খাবার পর্যন্ত খায়নি । আসলাম নিজেও মনিরার পাশে শুয়ে আছে , মুখ ফস্কে তখন ঐ কথা বলে ফেলায় নিজেকে হাজার বার শত রকমের গালাগাল করেছে আসলাম । অন্য কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে তখন ঐ কথাটা বলে ফেলছিলো । সারা বছর নানা কাজে বিজি থাকে ও । চাইলেও স্ত্রী কে সময় দিতে পাড়ে না , হঠাত এই কয়দিন ছুটি পেয়ে কিছুতেই সঙ্গ ছাড়া করতে মন চাইছিলো না ২৩ বছরের পুরনো বউ কে ।  
 
এই শুনছো এই মনি মনিরার কোমরে হাত রেখে আলতো ধাক্কা দেয় আসলাম । অমনি একটা ঝামটা মেড়ে স্বামীর হাত সরিয়ে দেয় মনিরা বলে ছিঃ লজ্জা করেনা রান্নার বুয়ার শরীরে হাত দিতে
 
এখন কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে মনিরা একটু রেগে যায় আসলাম , সেই কখন থেকে তোয়াজ করছে ও কিন্তু কোন পাত্তা দিচ্ছে না মনিরা সব কিছুর একটা লিমিট থাকা দরকার । ও এমন কিছু বলেনাই যার জন্য নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। সব স্বামী ই এমন বলে ।
 
হ্যাঁ এখন তো বেশি বেশি হবেই ধরমর করে উঠে বসে মনিরা , পুরো দস্তুর ঝগড়ার প্রস্তুতি ওর মাঝে। আমার বাবা মায়ের সামনে অপমান করে এখন দরদ দেখাতে আসছো , আমি তো এই বাড়ির রান্নার লোক , আমার জন্য এতো দরদ দেখাতে হবে না
 
ছিঃ মনিরা তুমি একটা ছোট্ট জিনিস কে টেনে বড় করছো , এছাড়া বাড়িতে আব্বা আম্মা আছেন ওনারা শুনলে কি বলবেন চাপা গম্ভির স্বরে বলে আসলাম ।
 
শুনলে শুনুক , তোমার বাবা মা মানুষ আর আমার বাবা মা কি কিছুই না , তুমি যে ওদের নিজের নিম্ন মানের চরিত্রের মুখোশ খুলে দিলে  মনিরা নিজের গলা আর একটু চড়িয়ে বলে ।
 
আমি ওনাদের কোন অসম্মান করিনি , আমি বলেছি তুমি চলে গেলে রান্না বান্না কে করবে , আমি একা হলেও কথা ছিলো কিন্তু তুমি তো জানো ঘরে বাবা আছেন , উনি বাইরের খাবার একদম খায় না আসলাম নিজের বলা কথাটাকে আরও যুক্তি পূর্ণ করে তুলতে নিজে বাবা কে টেনে আনলো । কিন্তু যা বলল সেটা একেবারেই বানোয়াট আস্লামের বাবা প্রায় বাইরের খাবার খায় আর বুয়ার সাহায্যে আসলামের মা প্রায়ই রান্না করে ।
 
ও তোমার বাবা বাইরের খাবার খায় না , আর আমার বাবা যে অসুস্থ সেটা?” একেবারে অগ্নি শর্মা হয়ে ওঠে মনিরা ।
 
তার জন্য তো আমি আবির কে পাঠিয়ে দিলাম , মা তো সেখানে আছেই ওনাদের দরকার একজন ছেলে মানুষ আসলাম নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য বলল ।
 
সারা জীবন তোমার বাবা মায়ের কম সেবা করেছি , আর এখন যখন আমার বাবা অসুস্থ আমি কি তার একটু সেবাও করতে পারবো না এই বলে কেঁদে ফেলল মনিরা । যদি তোমাকে নিজের বাবা মা ছেড়ে অন্য কথাও থাকতে হতো তবে বুঝতে
 
আসলাম বোবার মতো কিছুক্ষন চুপ থেকে স্ত্রীর কান্না শুনতে থাকে । এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে চলে দিতে দিলেই ভালো হতো অন্তত এই বিরক্তি কর কান্না তো শুনতে হতো না । ধুর ভালো লাগে না এই বলে আসলাম উঠে পরে বিছানা থেকে গাঁয়ে শার্ট জড়িয়ে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে ওর নিজের দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি
 
আসলাম চলে যেতে অনেক্ষন বিছানায় বসে বসে কাঁদে মনিরা । আসলামের উপর যেমন রাগ হচ্ছে তেমনটা নিজের উপর ও হচ্ছে ওর উচিৎ ছিলো আসলামের কথা না শুনে চলে যাওয়া আসলাম তো ওর সব কথা শুনে না তাহলে ওর কেন আসলামের সব কথা শুনতে হবে উচিৎ একটা জবাব হতো যদি ও চলে যেত , মনে মনে ভাবে মনিরা অবশ্য এতে নিজেরও দোষ আছে ভাবে মনিরা , ও সারাজীবন আসলামের সব অন্যায় মেনে নিয়েছে । কখনো কিচ্ছু বলেনি , সেই বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত সব কথা বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছে , তার প্রতিদান আজ ভালো করেই পেয়েছে , রান্না করবে কে ? একেবারে রান্নার লোক বানিয়ে দিয়েছে । আজ থেকে আমার অন্য চেহারা দেখবে আসলাম , এই বলে প্রতিজ্ঞা করলো । নিজের বাবার চেহারা টা মনে পরতেই আবার ডুকরে কেঁদে ফেলল মনিরা , কেমন পাংশু হয়ে গিয়েছিলো যখন আসলাম ওকে যেতে দিলো না । কত আদর করতো এই বাবা অথচ আজ যখন বাবা অসুস্থ তখন ও এই বাড়ি পরে রইলো রান্না করার জন্য ।
 
 
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম প্রথমে এক বন্ধুর অফিসে গেলো । সেখানে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বের হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো । মনে পরে গেলো সেই দিন গুলির কথা যখন ওর আবা অসুস্থ হয়ে পরেছিলো দিন রাত সেবা করেছে মনিরা । অথচ আজ কি করলো ও নিজের কথা ভেবে বউ কে বাপের বাড়ি যেতে দিলো না । খুব ছোট মনে হতে লাগলো নিজেকে । সরাসরি চলে গেলো স্টেশনে দুটি রাতের ট্রেনের টিকেট কিনে ফুরফুরে মনে বাড়ি ফিরলো ।
 
বাড়ি ফিরেই মনিরার সাথে দেখা , নিজের শ্বশুর কে চা দিচ্ছিলো মনিরা। আসলাম কে দেখেই কিছু না বলে চলে গেলো। আসলাম ও পিছনে পিছনে যাচ্ছিলো কিন্তু বাবা ডাকায় সেখানে দাড়িয়ে গেলো
 
কিরে আসলাম , বউমার কি হয়েছে , তোর মা এত্ত করে জিজ্ঞাস করলো কিছুই বলে না আসলামের বাবা জানতে চাইলো ।
 
ও আদের বাড়িতে যেতে চেয়েছিলো বাবা আমি না করেছি তাই  একথা বলতেই আসলামের মা পাশে থেকে বলল
 
তুই কি রে বেয়াই সাহেব এমন অসুস্থ আর তুই বউ কে যেতে দিলি না , যা শীগগির যা বৌকে গিয়ে সরি বল”
 
“ জাচ্ছি মা এই যে আমি টিকিট কিনে এনেছি , আজ রাতে আমারা রউনা হবো” আসলাম টিকেট দেখিয়ে বলে ।
“ভালো করেছিস”
 
 
আসলাম কে দেখেই ঘরে চলে এসেছিলো মনিরা , তবে স্বামীর শুকনো মুখ দেখে একটু কেতু মায়া হতে শুরু করেছে ওর। মনে মনে ভাবে ঈশ বেচারা সারাদিন না খেয়ে ছিলো । রাগের পারদ নামতে শুরু করে মনিরার । আসলাম যে ওকে না যেতে দেয়ার জন্য রান্নার কথা বলেছে সেটা ও ভালো করেই জানে , কিন্তু ছেলেমানুসির তো একটা সীমা থাকতে হবে । এখন তো একজন অসুস্থ রোগীর সাথে যেতে চেয়েছিলো , আনন্দ ভ্রমনে যেতে চায় নি , এছাড়া বাবার সামনে বলার কি ছিলো , আসলাম তো জানে ওর বাবা ওর ব্যাপারে কতটা সেন্সেটিভ ।
 
মনিরা তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি, এদিকে এসে নিয়ে যাও আসলাম ঘরে ঢুকে গম্ভির কণ্ঠে মনিরাকে ডাকে ।
 
আমার কিছু লাগবে না স্বামীর দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয় মনিরা যদিও আগের মতো রাগ নেই তাও এতো সহজে ব্যাপারটা ছাড়তে চাইছে না মনিরা ।
 
তুমি যে আমার কথা শুনে জাওনি তাতে আমি অনেক খুসি তাই তোমার রাগ ভাঙ্গাতে চাই সুন্দরী টিভিতে সিনেমাতে রাজা সম্রাট রা যেমন করে নাটকিও ভাবে কথা বলে অমন করে বলল আসলাম ।
 
আমার রাগ ভাঙ্গিয়ে কাজ নেই , স্বামীর পায়ের নিচে তো স্বর্গ তাই স্বামীর কথা অন্যায় হলেও মেনে নিতে হবে এবার কটাক্ষ করে বলে মনিরা । ধিরে ধিরে আসলাম মনিরার পেছনে এসে দাড়ায় মনিরার ভরাট দেহের দিকে তাকায় , কেন জানি মনিরা যখন রেগে থাকে তখন আসলাম এর খুব উত্তেজনা হয় মনিরার শরীরের প্রতি । পেছন থেকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে স্ত্রী কে আসলাম বলে কে বলেছে স্বামীর পায়ের নিচে স্বর্গ , আমি তো বলি বউয়ের রানের মাঝে স্বর্গ
 
হাসতে গিয়েও থেমে যায় মনিরা , নিজেকে চোখ রাঙিয়ে দেয় বলে এই একদম গলে যাবি না , একদম না। অবশ্য মনিরা জানে এই অসভ্য লোকটার বাহুডোরে কেমন মোমের মত গলে যায় ও ।
 
তোমার জন্য যদি এখন একটা সাড়ি কিনে আনি তাহলে কি খুসি হবে? আসলাম মনিরার কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞাস করে।
 
উহু মনিরা একটু কেঁপে উঠে বলে
 
একটি সোনার চেইন আসলাম মনিরার কানের লতিতে একটি চুমু খেয়ে জিজ্ঞাস করে
 
নাহ মনিরার গলার স্বর গাড় হয়ে আশে ,
 
দুটি ট্রেনের টিকেট? এবার মনিরা ঘুরে দাড়ায় মুখে ঝলমলে হাঁসি , স্বামীর বুকের সাথে লেপটে গিয়ে বলে তুমি একটা অসভ্য
আসোনা সুন্দরী একটু অসভ্যতা করি তোমার সাথে এই বলে ৬৬ কেজি ওজনের মনিরাকে পাজকোল করে বিছানায় নিয়ে যায় আসলাম । ভর সন্ধায় ভালবাসাবাসি তে ভরে ওঠে ঘরখানা ।
 
সরি মনিরা আজ এমন করা আমার উচিৎ হয়নি একদম , কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না ভালোবাসার ক্লান্তি জড়ানো কণ্ঠে বলে আসলাম ।
 
আমি জানি, আমারও কি তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে স্বামীর রোমশ বুকে শুয়ে আঙুল দিয়ে লোম গুলি পাকাতা পাকাতে বলে মনিরা ।
 
তাইত দুটো টিকেট এনেছি , দুজনে মিলে শ্বশুর মশাই কে এমন সেবা করবো যে দুদিনেই সুস্থ হয়ে যায় উনি আর আমার বৌকে নিয়ে আমি চলে আসতে পারি । স্বামীর কথায় হেঁসে ফেলে মনিরা তারপর একটা কামড় বসিয়ে দেয় বুকে । উউউ করে ওঠে  আসলাম তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে যাহ মাত্র দুঘণ্টা সময় আছে ট্রেন ছাড়ার দ্রুত উঠে পড় ।
                                                        
                                                                         ****
 
 
 
 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
একটি ঝগড়ার দিন - by cuck son - 22-02-2021, 08:30 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)