Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব নয় – (#5-50)

 
প্রভাত দিয়ার চোখে চোখ রেখে কোমর ধরে গানের তালে তালে নেচে চলেছে। দুটো লারজ হুইস্কি খেয়ে ততক্ষনে দিয়ার চোখ জোড়া লালচে হয়ে গেছে। এর আগে কোনদিন একটা লারজ ও খায়নি দিয়া। মনের আনন্দে দিয়া সব কিছু ভুলে উচ্চ গানের সাথে তাল মিলিয়ে মনের আনন্দে নেচে চলেছে। ওর পাশেই শুভেন্দু ঝিলিকের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জড়িয়ে ধরে নেচে চলেছে। দুই তন্বী তরুণী নেশায় মত্ত সেই সাথে গানের সাথে নেচে নেচে সেই নেশা আরো বেশি যেন করেই যেন নেশাটাকে চাগিয়ে দিয়েছে।
 
প্রভাত নাচতে নাচতে দিয়ার গালে নাক ঘষে কানে কানে বলে, “হে বেব, ইউ আর টু সেক্সি।”

দিয়া মুচকি হাসে, “ইউ লাইক ইট?”

প্রভাত বলে, “ভেরি হট।”

হেসে ফেলে দিয়া, “আচ্ছা... আর কত জন কে এই ডায়লগ মেরেছ?”

প্রভাতের একটা হাত ওর পিঠের ওপরে ঘাড়ের কাছাকাছি অন্য হাত নেমে গেছে কোমরে, দিয়ার নব অঙ্কুরিত নধর দেহপল্লব নিজের শরীরের সাথে পিষে ধরে নাচতে নাচতে বলে, “রুম বুক করব? যাবে?”

হেসে ফেলে দিয়া, “ধ্যাত, আই স্টিল ডোন্ট নো ইউ।”

প্রভাত মুচকি হেসে বলে, “কি আছে, রুমে গিয়ে বাকি পরিচয় হয়ে যাবে।”
 
শুভেন্দু ঝিলিকের কোমরে হাত রেখে ওকে ঘুরিয়ে দেয়, একটু নেশা ধরে গেছে ঝিলিকের চোখে। পরপর দুটো লারজ হুইস্কি এই ভাবে এর আগে কোনদিন খায়নি। শুভেন্দু ওর পেটের ওপরে এক হাত বুলাতে বুলাতে ওর উন্নত স্তনের নিচে চলে এসেছে সেটা আর খেয়াল নেই। অন্য হাত ওর নাভির নিচে চেপে ধরে ওর নধর নব অঙ্কুরিত দেহ পল্লব শুভেন্দুর শরীরের সাথে মিশিয়ে ধরেছে। নিটোল দুই নিতম্বের খাঁজে একটা কিছুর ধাক্কা খায় ঝিলিক। উচ্চ গানের তালে তালে নাচে মত্ত ওর শরীর যেন আর ওর আয়ত্তে নেই।
 
ঘাড়ের কাছে শুভেন্দুর গরম শ্বাস অনুভব করে ঝিলিক মিহি কন্ঠে বলে, “উফফ তুমি না ভীষণ নটি।”

ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট চেপে ঝিলিকের পিঠের সাথে বুক মিশিয়ে আদর করে বলে, “ইউ আর টু সেক্সি বেবি।”

নাচতে নাচতেই মুচকি হেসে বলে ঝিলিক, “উফফ তাই নাকি?”

শুভেন্দু ওর নিতম্বে নিজের জানুসন্ধি চেপে ধরে বলে, “হবে নাকি কিছু?”

হেসে ফেলে ঝিলিক, “ইউ আর গোয়িং টু ফাস্ট।”

শুভেন্দু হেসে ফেলে, “জমানা এয়সা হ্যায় বেবি।”
 
ওদের পাশেই রিতিকা আর ঝিনুক হাত তুলে সারা অঙ্গে ঢেউ তুলে কোমর বেঁকিয়ে নেচে চলেছে। ঝিনুক একটু চেঁচিয়ে দিয়াকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু গানের তীব্র আওয়াজে সেই আওয়াজ ঢাকা পরে যায়। হটাত করে এমন সময়ে দিয়ার কাঁধে একটা শক্ত হাত এসে পড়াতে নাচ থামিয়ে দেয় দিয়া। নেশাগ্রস্ত চোখে ঘাড় ঘুরে তাকাতেই একটা হ্যাঁচকা টান অনুভব করে হাতের ওপরে। একটা বিশাল থাবা প্রভাতকে জোরে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে ওর শরীর থেকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাজু ধরে নাচের জায়গা থেকে টেনে আনে ওর দাদাভাই। প্রভাত কিছু একটা বলতে চেষ্টা করে কিন্তু নাকের সামনে রিশুর ডান হাতের তর্জনী আর চশমার পেছনে আগুন ঝরানো চোখ জোড়া দেখে আর সাহস হয় না। শুভেন্দু ততক্ষনে ঝিলিককে ছেড়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। রিতিকা, ঝিনুক ইন্দ্রজিৎ নাচ বন্ধ করে রিশু আর দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। দিয়ার হাত ধরে রিশু নাচের জায়গা থেকে টেনে বের করে আনে। ঝিনুকের বুকের মধ্যে দুরুদুরু করা শুরু হয়ে যায়। রিশুর চোখ দেখে ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার যোগার হয়। দাদাভাইয়ের চোখ দেখে দিয়ার নেশার ঘোর কেটে যায়, কেউ যেন ওর গলার ওপরে পা দিয়ে পিষে ধরেছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দেয় দিয়ার। ঝিলিক দিদির হাত ধরে কুঁকড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে। কারুর মুখে কোন কথা নেই।
 
খুব ঠান্ডা গলায় রিশু দিয়াকে বলে, “বাড়ি চল।”

ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে দিয়া কেঁদে ফেলে, “দাদাভাই আই এম সরি, দাদাভাই।”

হিমশিতল কন্ঠে গর্জে ওঠে রিশু, “বাড়ি চল।” আগুন ঝরানো চোখে ঝিনুক আর ঝিলিকের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বলে, “আর নাচতে হবে না, অনেক নেচে নিয়েছ।”
 
কথাটা কানে যেতেই ভীষণ ভাবে ব্যাথা পায় ঝিনুক, কিন্তু রিশুর গলা শুনে ওর বুকের রক্ত শুকিয়ে গেছে। রিতিকা, শালিনী ইন্দ্রজিৎ সবার মুখ থমথমে। কারুর কোন আওয়াজ করার ক্ষমতা নেই। বোনের গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে  হোটেলের বাইরে চলে আসে রিশু। ওর পেছন পেছন বাকি সবাই বেড়িয়ে আসে হোটেল থেকে। রাত অনেক, রাস্তায় একটু কুয়াশা হয়েছে, ফাঁকা রাস্তা গাড়ি চলাচল অনেক কমে গেছে। ফুটপাথের ওপরে সবাই দাঁড়িয়ে, একপাশে রিশু আর তার পাশে দিয়া, বাকি সবাই ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে। ল্যাম্প পোস্টের হলদে আলো আর চারপাশের কুয়াশায় ওদের মাঝের টানটান উত্তেজনাকে আরো বেশি করে চাগিয়ে তোলে। সবার চোখে মুখে থমথমে ভাব শুধু মাত্র রিশুর চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই জ্বলছে। রিতিকা কিছুই বুঝতে পারছে না কি ঘটে চলেছে। বাকি সবার চেহারায় হাজার প্রশ্ন, হটাত করে কি হল, রিশু কেন দিয়াকে নাচের জায়গা থেকে টেনে বার করে এনে একদম হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে এলো।
 
বাইরে বেড়িয়ে ইন্দ্রজিৎ রিশুকে বলে, “কি হয়েছে? তুই এই ভাবে রিয়াক্ট করছিস কেন।”
 
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হটাত করেই ঠাস করে জোরে একটা আওয়াজ হয়। দিয়ার নরম গালে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, গালে হাত দিয়ে কেঁদে ফেলে দিয়া। দাদাভাই এইভাবে সবার সামনে ওকে চড় মারবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি।
 
শালিনী সঙ্গে সঙ্গে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে রিশুর দিকে আঙ্গুল তুলে গর্জে ওঠে, “তুমি ওকে মারলে কেন?”

রাগে রিশুর গলা কেঁপে ওঠে, “থাপ্পড়টা মনে হয় অনেক আগেই দরকার ছিল।”

দিয়া শালিনীর বুকের ওপরে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে। ইন্দ্রজিৎ ওর হাত ধরে ফেলে, “তোর মাথার ঠিক নেই নাকি? এত বড় একটা মেয়ের গায়ে হাত দিলি?”

সেই সাথে ঝিনুক গর্জে ওঠে, “তোমার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি তাই না?”
 
যেভাবে ওই ছেলেটা ওর বোনের গায়ে হাত দিয়েছিল তাতে ওর শরীর জ্বলে উঠেছিল। ছেলেটার ওপরে খুব ঘৃণা হচ্ছিল কিন্তু দিয়ার চোখ মুখের অভিব্যাক্তি দেখে ওর মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। দিয়া প্রশ্রয় না দিলে ওই ছেলেটা নিশ্চয় এতটা সাহস পেত না।
 
ঝিনুকের চোখে চোখ রেখে চাপা গর্জন করে ওঠে, “কিসের বাড়াবাড়ি? তুমি কি চোখে অন্ধ নাকি? ঝিলিক আর দিয়ার প্রশ্রয় না থাকলে ওই ছেলে দুটো কি ভাবে ওদের গায়ে হাত দেয়?” ঝিলিকের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোদের সাথে যে দুটো ছেলে ছিল তারা কে?”
 
রিশুর ভীষণ জ্বলন্ত চোখ দেখে ঝিলিক ততক্ষনে দিদির হাত জড়িয়ে ধরে পিঠের পেছনে লুকিয়ে গেছে। ওর শরীর ঠান্ডায় নয়, সামনে দাঁড়ানো বাঘের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। রিশুর এই অগ্নিশর্মা চোখের অর্থ ধিরে ধিরে সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
 
ঝিনুক ওর দিকে ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে জোরে বলে, “দিলে সব ভেস্তে। থারটি ফার্স্ট নাইটে ছেলে মেয়েরা একটু মজা করবে, তা না। নিজে কর না আর কাউকে দেখলে তোমার সহ্য হয় না।”

ঝিনুকের কথা শুনে শালিনী থমকে যায়, ওর দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলে ওঠে, “তুমি কি বলছ?”

ঝিনুক থামে না, ওর স্বপ্ন যেন ওর সামনে গুঁড়িয়ে গেছে। একটু স্বাধীনতা চেয়েছিল এই নাকি স্বাধীনতা। চেঁচিয়ে ওঠে রিশুর দিকে, “তোমার কাছে ফ্রিডমের কোন অর্থ নেই। সব জায়গায় দাদাগিরি দেখাতে হবে। তোমার কাছে সময়ের দাম ও নেই...”

শালিনী আর থাকতে না পেরে ঝিনুককে বলে, “ঝিনুক চুপ।”

ঝিনুক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “চুপ কেন চুপ? এই আজকে, বলল পাঁচটার মধ্যে আসবে কিন্তু দেখো কখন এলো। এমারজেন্সি ছিল নাকি ওর।” নেশার মধ্যে আর রাগে কি বলছে ঝিনুক নিজেই জানে না, “আমি একটা সিম্পেল লাইফ চেয়েছিলাম, একটু ফ্রিডম একটু ভালোবাসা। বাড়িতে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে সেটা ও জানে না।”

আর থাকতে পারল না রিশু, ঝিনুকের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে, “তোমার ডিক্সানারির ফ্রিডম আমার কাছে পাবে না। ফ্রিডম মানে নোংরামো করা নয়। তোমার ফ্রিডমের অর্থের পরিনতি তুমি নিজেকে দেখেও শেখোনি এখন...”

ঝিনুক চাপা চেঁচিয়ে ওঠে রিশুর দিকে তাকিয়ে, “কি বলতে চাও তুমি?” মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যাথিত কন্ঠে বলে ওঠে, “তোমার সাথে না আর এক বিন্দু...”
 
কথাটা শেষ করতে পারে না ঝিনুক। রিশুর চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই জ্বলে ওঠে। সবাই চুপ, থমথমে পরিবেশ নেমে আসে সবার মধ্যে।
 
বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পরে হিমশীতল কন্ঠে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে রিশু বলে, “যাও, আজ থেকে তোমাকে সব ফ্রিডম দিলাম।”

শালিনী দিয়াকে ছেড়ে মুখে হাত দিয়ে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “ভাইয়াআআ...”

বাক্যের তাৎপর্য একটু দেরি করেই বুঝতে পারে ঝিনুক। কথাটা বুঝতে পেরে চোখ জোড়া জলে ভেস যায় ওর, রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে কাঁপতে বলে, “শেষ পর্যন্ত তুমিও...”

শালিনী ইন্দ্রজিতকে বলে, “তুমি ভাইয়াকে নিয়ে বাড়ি যাও আমি এদের নিয়ে আমাদের বাড়ি যাচ্ছি।”

ইন্দ্রজিৎ রিশুর কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে, “মাথা গরম করিস না বাড়ি চল।”

দুই চোখে নিভে আসা আগুন আর একটু জল নিয়েই ইন্দ্রজিতের দিকে তাকায় রিশু। মোবাইল খুলে উবেরে একটা ক্যাব বুক করে বলে, “ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিক্সান।”
 
রিতিকা অনেকক্ষণ ধরেই চুপ করে ছিল এদের মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে সেই ঝড়টাকে কি ভাবে থামানো যায় সেই চিন্তায় মগ্ন ছিল, কিন্তু রিশু আর ঝিনুকের শেষ বাক্যে মনে হল যেন ঝড়টা হটাত করেই সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে চলে গেছে।
 
একটু পরেই ক্যাব এসে যায়, ক্যাবের দরজা খুলে দিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে রিশু ঠান্ডা গলায় ডাক দেয়, “বাড়ি চল।”

জল ভরা চোখে ঝিনুক ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দিয়া একবার শালিনীর দিকে তাকায় একবার ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝিনুক দিয়ার দিকে দেখে বলে, “তুই এদিকে আয়।” রিশুর দিকে আঙ্গুল নাড়িয়ে বলে, “ও তোমার সাথে যাবে না।”
 
দাদাভাইয়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে দিয়া তারপরে ঝিনুকের দিকে দেখে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ দাদার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরে। দাদাভাই ওর গলায় পাড়া দিলেও ওর অন্য কারুর সাথে যাওয়ার ভরসা নেই। দিয়ার চুপ থাকা দেখে স্তব্দ হয়ে যায় ঝিনুক।
 
এইভাবে সবার সামনে বোনের গায়ে হাত উঠানো একদম উচিত হয়নি। রিশু বোনকে জড়িয়ে ধরতেই বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে দিয়া।
 
ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে নরম গলায় বলে, “সরি...”

ঝিলিক দিদির জ্যাকেট খামচে ধরে দিদির জল ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলে, “দিদি, বাড়ি চল।”
 
ঝিনুক কি করবে ভেবে পায় না। ক্ষোভে আর বিতৃষ্ণায় ওর ভুকের ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলছে। ভাবনা চিন্তা ধিরে ধিরে লোপ পেয়ে গেছে। সব কিছু এক লহমায় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে কিন্তু মচকাতে নারাজ ঝিনুক। ক্যাবের ড্রাইভার রিশুকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাওয়াতে রিশু ওকে থামিয়ে দেয়। দিয়া চুপচাপ ক্যাবের মধ্যে বসে পরে।
 
রিশু দিয়াকে বলে, “আমি মাম্মাকে ফোন করছি, তুই কাল সকালেই কোলকাতা ফিরে যাবি।”

শেষে ঝিনুক থাকতে না পেরে ভাঙা বুক নিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমার শুধু মাম্মা আর মাম্মা। আঁচলের তলায় থাকতে পারতে।”

কথাটা কানে যেতেই রিশুর চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, মায়ের নামে এই কথা শুনে ওর দুই চোখে আগুন ঝরে পরে। কঠিন চোয়ালে দাঁতে দাঁত পিষে চিবিয়ে চিবিয়ে ঝিনুকের দিকে আঙ্গুল তুলে গর্জে ওঠে, “সঙ্ঘমিত্রা, তুমি তোমার লিমিট ক্রস করে ফেলেছ। ডোন্ট এভার ক্রস মাই পাথ অর এলস ...”
 
শালিনী ওর ভাইয়ার এই রুদ্ররূপ আগেও একবার দেখেছে। ছয় বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের রাতে ইন্দ্রজিৎ রিশুর বাড়িতে এসেছিল। রাগে দুঃখে কাঁপতে কাঁপতে মারতে মারতে ইন্দ্রজিতের নাক মুখ ফাটিয়ে দিয়েছিল ওর ভাইয়া।
 
শালিনী রিশুর মুখ চেপে ধরে বলে, “ভাইয়া প্লিজ চুপ করো।”

শালিনীর হাত ছাড়িয়ে রিশু বলে, “চুপ করার আর কি বাকি আছে। ওর মনের মধ্যে যা ছিল বলে দিয়েছে, ভালো হয়েছে।” অদুরে দাঁড়িয়ে রিতিকার দিকে তাকিয়ে বলে, “সরি তোমার পার্টি নষ্ট করে দিলাম।”
 
গাড়ি ছেড়ে দেয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাঁচজন স্থম্ভিত হয়ে যায়। ক্যাব ছেড়ে চলে যেতেই প্রবল অনুশোচনায় অনুতাপের কান্নায় ভেঙ্গে পরে ঝিনুক। হটাত করে মামনিকে নিয়ে কথাটা বলা একদম ঠিক হয়নি। মামনি কোনদিন ওকে কোন কিছু নিয়ে খোঁটা শুনায়নি। ওর দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, বললে বলতেও পারত মামনি, কোনদিন মামনি ওকে এটা বলেনি, রিশুকে টিফিনটা অন্তত বানিয়ে দিতে পারো, না সে কথাও কোনদিন শোনায়নি। রিশু এটা খেতে ভালোবাসে, এটা একটু বানিয়ে দিও, না সে কথাও কোনদিন ঠেস মেরে বলেনি ওর মামনি।
 
শালিনী ঝিনুককে জড়িয়ে ধরতেই আরো বেশি ভেঙ্গে পরে, “আমি কোন খারাপ কিছু বলেছি?” শালিনী কি বলবে কিছুই ভেবে পায় না।

ঝিলিক দিদিকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে, “কাঁদিস না বাড়ি চল, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “না রে কিছুই আর ঠিক হবে না।”

ইন্দ্রজিৎ মোবাইল খুলে একটা ক্যাব বুক করে রিতিকাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে কোথাও ড্রপ করতে হবে কি?”

রিতিকা মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমি একা চলে যেতে পারব।”
 
গাড়ির মধ্যে উঠে দিয়া দাদার কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে। বোনের মাথা কোলের মধ্যে চেপে ধরে সারাটা রাস্তা চুপচাপ বসে থাকে রিশু। মনের মধ্যে ঝিনুকের প্রতি একটা ভীষণ বিতৃষ্ণা জন্মায়, বিয়ের আগেই মাকে জানিয়েছিল, এই মেয়ে নিজের বাবা মাকে সন্মান দিতে জানে না সে ওর পরিবারকে আপন করে নিতে পারবে না। মন কে বোঝায় রিশু, এতদিন একা থেকেছে বাকি জীবন একা থাকা কোন দুস্কর নয় ওর পক্ষে। লন্ডন থেকে ফিরে এমসের হস্পিটাল ছেড়ে কোলকাতা ফিরে যাবে। পাপার মাইল্ড এটাক হওয়ার পরে মাম্মা একটু চিন্তিত পাপার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে, বাড়িতে ফিরলে সবাই ওর চোখের সামনে থাকবে সবার দেখাশুনা করতে পারবে। বাড়ির সামনে গাড়ি পৌঁছানর পরে ঘড়ির দিকে তাকায় রিশু, রাত এগারোটা বাজে তখন। দিয়া কাঁদতে কাঁদতে ওর কোলের ওপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।
 
গাড়ি থামতেই বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “এই ওঠ, বাড়ি এসে গেছে।”

বহুদুর থেকে দাদার গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে দাদার দিকে তাকায় দিয়া। চোখ মুছে দাদার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বলে, “দাদাভাই সরি।”

ম্লান হেসে রিশু ওকে বলে, “ঠিক আছে, যা হওয়ার হয়ে গছে।”

তালা খুলে বাড়িতে ঢুকে দিয়াকে বলে, “বিকেলের পরে তো কিছুই খাস নি?” মাথা দোলায় দিয়া, না। রিশু ওকে বলে, “হাত মুখ ধুয়ে নে আমি দেখি কিছুর অর্ডার করে দেই। তারপরে সুটকেস গুছিয়ে নে আমি ফ্লাইটের টিকিট কাটছি।”

দাদার সামনে হাত জোড় করে বলে দিয়া, “দাদাভাই প্লিজ।”

রিশু বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে ধরা গলায় বলে, “তুই কেন এমন করলি? তোকে আমি কি দেইনি? তুই যখন যা চেয়েছিস আমি কিনে দিয়েছি। যখন যা বলেছিস তাই করেছি। মাম্মার সাথে ঝগড়া করে তোকে তোর বন্ধুদের পার্টিতে যাওয়ার পারমিশান করিয়ে দিয়েছি। বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা যাওয়া, কোন কিছুতেই কোনদিন মানা করিনি। তারপরেও তুই?” একটু থেমে প্রশ্ন করে, “ছেলেটা কে?”
 
দাদার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে গলা শুকিয়ে আসে দিয়ার। দাদার কাঁপা গলা শুনে ওর মনে হচ্ছে, মা ধরণী দ্বিধা হও।
 
পায়ের নখ দিয়ে মেঝে খুঁটতে খুঁটতে নিচু কন্ঠে বলে, “আর কোনদিন করব না দাদাভাই।”

বোনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলে, “যা চোখ মুখ ধুয়ে নে।”
 
ঠিক তখনি দরজায় কলিং বেল বেজে উঠতেই সজাগ হয়ে যায় রিশু। দিয়া একবার দাদার মুখের দিকে তাকায় একবার দরজার দিকে তাকায়। রিশু ইশারায় ওকে দরজা খুলতে বলে। দিয়া দরজা খুলে দিতেই ইন্দ্রজিৎ আর শালিনী বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে, পেছনে ধির পায়ে ঝিনুক আর ঝিলিক বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে।
 
দিয়া কিছু একটা বলতে গেলেই রিশু ওদের দেখেও না দেখার ভান করে দিয়াকে বলে, “তুই জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে সুটকেস গুছিয়ে ফেল।” শোয়ার ঘরের মধ্যে যেতে যেতে ওকে বলে, “আমি দেখি কিছু একটা খাবার অর্ডার করে তোর ফ্লাইট টিকিট কাটি।”
 
বাড়ির মধ্যে থমথমে পরিবেশ, বুকের ধুকপুকানি পর্যন্ত শোনা যায় এমন নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে সবাই। ঝিনুকের চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই লাল হয়ে গেছে। সত্যি কি ওকে কোলকাতা পাঠিয়ে দেবে? রিশুর এই রুদ্র মূর্তি এর আগে কোনদিন ঝিনুক দেখেনি। তবে এই কয়দিনে ভালো ভাবেই এটা অনুধাবন করতে পেরেছে যে রিশু যাকে ভালোবাসে তাকে সত্যি বুকের মাঝে আঁকরে ধরেই ভালোবাসে, ওকে, নিজের মাকে, নিজের ভাই বোনকে। কি ভাবে এই মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইবে সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে যে ভাবে ওর নাকের সামনে আঙ্গুল নাড়িয়ে ওকে সাবধান করে দিয়ে একাই গাড়িতে উঠে চলে এসেছে, তারপরে মনে হয় কিছুই এই ঋজু মানুষের দৃঢ় প্রত্যয়কে টলাতে সক্ষম হবে না।
 
ইন্দ্রজিৎ, ঝিনুক আর ঝিলিককে ইশারায় সোফায় বসতে অনুরোধ করে। ঝিলিকের মুখ থমথমে, ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বাড়িতে বাবা মায়ের ওপরে চোটপাট করা যায়, কিন্তু সামনে যে মানুষটা তার ওপরে ওর দিদি যেভাবে চোটপাট করতে শুরু করল তাতে সম্পূর্ণ হিতে বিপরিত হয়ে গেল। ওর আর দিয়ার ভুলের মাশুল ওর দিদিকে গুনতে হবে ভেবেই ওর মন বিষিয়ে যায়। কিন্তু জিজুর সামনে গিয়ে কথা বলার সাহস ওর নেই। অদুরে দাঁড়িয়ে ওর প্রিয় বান্ধবী যার দাদার সাথে এই দিন কুড়ি আগেই ওর দিদির বিয়ে হয়েছে, সে ওর দিকে বেদনা মুখর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে।
 
শালিনী শোয়ার ঘরে ঢুকে রিশুর হাত ধরে বলে, “ভাইয়া, প্লিজ আমি বলছি এই লাস্ট টাইমের জন্য দিয়াকে...”

মাথা নাড়ায় রিশু, “আমার বোনের জন্য আমার চিন্তা নেই, আমার বোনকে আমি সঠিক পথে ফিরিয়ে আনব। তবে...”
 
শালিনীর কাঁধের ওপর থেকে বসার ঘরের সোফায় বসা স্ত্রীর দিকে তাকায়। এক অব্যাক্ত বেদনায় ঝিনুকের মুখমণ্ডল পাংশু হয়ে গেছে, চোখ জোড়া লাল হয়ে ফুলে গেছে। ঝিনুকের সাথে চোখে চোখ মেলাতেই ঝিনুকের ফ্যাকাসে রঙ ওঠা ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে, কোলের ওপরে হাত দুটো জড় করে রাখা।

[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 11 users Like pinuram's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 21-12-2020, 12:07 PM



Users browsing this thread: 28 Guest(s)