Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব আট – (#3-39)

 
হসপিটাল পৌঁছাতে অন্যদিনের চেয়ে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল রিশুর। সারাটা রাস্তা শুধু মাত্র মনে হচ্ছিল ছুটি নিলে ভালো হত, কিন্তু কর্তব্য সবার আগে আর এডমিন ডিপার্টমেন্টে ওর পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। হসপিটালে ঢুকে সব থেকে আগে এইচওডির সাথে দেখা করে যে ইমেল এসেছিল সেটার একটা প্রিন্টআউট নিয়ে ডক্টর ধিলোনের একটা চিঠি নিয়ে এডমিন ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়ে দেয়। এপ্রন আর গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে চেম্বারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মাকে ফোন করে রিশু।
 
আম্বালিকা ছেলের ফোন পেয়েই একটু আহত কন্ঠে বলে, “কি রে কাল রাতে আর ফোন করলি না?”

মাথা চুলকে অপরাধীর হাসি হেসে উত্তর দেয়, “মানে ওই ডিনার করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল তাই আর ফোন করা হয়নি। পাপা বেড়িয়ে গেছে?”

হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর পাপা অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। তোর কি খবর? তোরা কেমন আছিস?”

মাথা চুলকে লাজুক হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “পা বাড়িয়েছি, মাম্মা।”

ছেলের ভালোবাসার কথা শুনে আম্বালিকার বুক ভরে যায়, ধরা গলায় আশীর্বাদ করে ছেলেকে বলে, “আশীর্বাদ করি বাবা তোরা যেন ভালো থাকিস।”

মায়ের ধরা গলা শুনে রিশুর দৃষ্টি মুহূর্তের জন্য ঝাপসা হয়ে যায়, “মাম্মা...”

ছেলের গলায় মা ডাক বড় মধুর। আম্বালিকা চোখের কোল মুছে হাসি মুখে ছেলেকে বলে, “না রে কিছু না, আমার সেই ছোট্ট ছেলেটা আজকে অনেক বড় হয়ে গেল তাই...”

রিশু ধরা গলায় মাকে বলে, “প্লিজ মাম্মা।” একটু থেমে মাকে জানায়, “আচ্ছা শোনো না, জানুয়ারির ফার্স্ট উইকে একটা সেমিনারের জন্য আমাকে লন্ডন যেতে হবে।”

ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “ঝিনুককে নিয়ে যাচ্ছিস কি?”

মাথা নাড়ায় রিশু, “না গো, বেড়াতে যাচ্ছি না, হসপিটালের কাজে যাচ্ছি।”

ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে ঝিনুক কোথায় থাকবে? যাওয়ার আগে তাহলে ওকে কোলকাতায় পৌঁছে দিয়ে যা।”

রিশু উত্তরে বলে, “আমি ওকে বলেছিলাম কোলকাতায় যেতে, কিন্তু ও কিছুতেই কোলকাতা যেতে চাইছে না।”

ছেলের কথা শুনে হেসে ফেলে আম্বালিকা, নিজেও এক সময় প্রেম করেছে তাই ঝিনুকের মনের অবস্থা ওর বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধে হয় না, “সে তো বুঝলাম কিন্তু একা একা কি করে থাকবে?”

একটু ভেবে রিশু মাকে বলে, “আমি বলছিলাম কি যদি বোন দিন দশেকের জন্য এখানে আসতে পারে।”

একটু ভেবে ওর মা ওকে বলে, “আচ্ছা দেখছি কি করা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে। পড়াশুনা তো এমনিতে করেই না।”

রিশু মুচকি হেসে বলে, “আরে মাত্র দশ দিনের তো কথা, আমি বলে যাবো ও পড়াশুনা করবে।”

হেসে ফেলে আম্বালিকা, “হ্যাঁ তোর বোন কত কথা শোনে জানা আছে।” একটু ভেবে বলে, “তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি কি বলে। দিয়া গতকাল পিয়ালির বাড়িতে গেছে, দিয়া যাবে শুনলে হয়ত ঝিলিক ও যেতে চাইবে, তার ও তো দিদির বাড়ি।”

মাথা দোলায় রিশু, ওর একটা ভীষণ দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকা আছে তবে সেইভাবে সেই শ্যালিকার সাথে কোনদিন মন খুলে আলাপ পরিচয় হয়নি, তাই মাথা দুলিয়ে মাকে বলে, “আচ্ছা তাহলে দুইজনকেই পাঠিয়ে দিও, আমি বিকেলের মধ্যে ওদের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেবো।”

ওর মা হেসে ফেলে, “আরে বাবা, আগে তোর পাপার সাথে কথা বলে দেখি পিয়ালির সাথেও কথা বলে দেখি ওরা কি বলে।”

রিশু মাকে হেসে বলে, “কাকে কি ভাবে ম্যানেজ করবে সেটা তোমার ব্যাপার, আমি টিকিট কেটে তোমাকে জানিয়ে দেবো।”

আম্বালিকা পারলে ফোনের মধ্যে থেকেই হাত বাড়িয়ে রিশুর কান টেনে যেন বলে, “তুই সেই ছোট বেলা থেকে বড্ড জেদি, সব কিছু আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিস।”

হেসে ফেলে রিশু, “তুমি সব পারো মাম্মা। আচ্ছা এখন আমার ওপিডি আছে, দেরি হয়ে যাচ্ছে পরে ফোন করব, রাখছি।”
 
চেম্বারে ঢুকতেই দেখে প্রচুর রুগী ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ভেবেছিল একবার ঝিনুককে একটা মেসেজ করবে কিন্তু সেটা আর করা হল না। কয়েকজন জুনিয়ার ডাক্তারদের নিয়েই একের পর এক রুগী দেখা শুরু করে দিল। রুগী দেখতে দেখতেই মাঝে মাঝে ওর চোখ মোবাইলের দিকে চলে যায়, এতক্ষনে নিশ্চয় বান্ধবীর সাথে শপিং করতে বেড়িয়ে পড়েছে। টুং করে মোবাইলে আওয়াজ হতেই ক্ষনিকের বিরতি নিয়ে মোবাইল খুলে প্রেয়সীর ছোট মেসেজ পড়ে নেয়, “আমরা বেড়িয়ে গেছি।” প্রেস্ক্রিপসান লিখতে লিখতেই অন্যহাতে মোবাইল কি-প্যাড টিপে উত্তর দেয়, “সাবধানে যেও, লাভ ইউ।” সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রেয়সীর উত্তর আসে, একটা চুম্বনের ইমোজি সেই সাথে অসংখ্য লাল হৃদয়ের ইমোজি।
 
ট্যাক্সিতে বাড়ি থেকে রিশুর হসপিটাল পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না। হসপিটালের বিশাল বিলডিং দেখে ঝিনুক আর রিতিকা দুইজনেই বেশ ধন্ধে পরে যায়, কাকে কি জিজ্ঞেস করবে? বুকে বল নিয়েই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে অরথোপেডিক ডিপার্টমেন্টে পৌঁছে যায় ওরা। ওদের দেখে ডিপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়ানো দারোয়ান জিজ্ঞেস করাতে ঝিনুক জানায় যে ডক্টর অম্বরীশ সান্যালের স্ত্রী। দারোয়ান ওদের রিশুর চেম্বার দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। চেম্বারের বাইরে বিশাল ভিড় দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে ঝিনুক।
 
রিতিকা ফিসফিস করে ওকে জিজ্ঞেস করে, “উফফ কি ভিড় রে বাবা। তোর ডক্টর কোথায়?”

ভিড় ভর্তি চেম্বারের মধ্যে উঁকি মেরে ঝিনুক রিশুকে দেখতে চেষ্টা করে। একটা টেবিলের পাশে তিনজন ডাক্তার বসে রয়েছে, একটা বড় চেয়ারে চশমা পরে বসে রিশু কোন এক রুগীর চিকিতসায় ব্যাস্ত। ঝিনুক রিতিকার বাজু টেনে রিশুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “ওই যে বসে আছে।”

রিতিকা রিশুকে দেখে বড় বড় চোখ করে বলে, “মাই গুডনেস, করেছিস কি? ওই হ্যান্ডুটা তোর ডক্টর?”

লাজুক হেসে মাথা দোলায় ঝিনুক, “হুম...”

রিতিকা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “ডাক, একটু কথা বলি।”

চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে এসে রিতিকাকে বলে, “তোর মাথা খারাপ নাকি? ও এখন ব্যাস্ত আছে, কাজ শেষ হোক তারপরে ডাকবো।”

রিতিকা বিষণ্ণ গলায় ওকে বলে, “মানে? কতক্ষন দাঁড়াতে হবে কে জানে।”

মিষ্টি হেসে ঝিনুক উত্তর দেয়, “আমি তো এখানেই ওর জন্য ওয়েট করবো।”

রিতিকা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “শপিং?”

হেসে ফেলে ঝিনুক, “সারপ্রাইজ আগে তারপরে শপিং, তার জন্য যদি আমাকে এখানে দুই ঘন্টাও বসে থাকতে হয় তাতেও আমি রাজি।”

রিতিকা ঝিনুককে আলতো ধাক্কা মেরে মুচকি হেসে বলে, “উফফফ পারি না, ডারলিং একদম মজে গেছে মাইরি।”

লাজুক হাসি হেসে ঝিনুক বলে, “চল বাইরে চল দেখি কোথাও বসার জায়গা পাওয়া যায় নাকি।”

বাইরে বের হতেই একজন ডাক্তারের সাথে ওদের দেখা হয়। সেই ডাক্তার ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “মিসেস সান্যাল?”

ঝিনুক ভুরু কুঁচকে সেই আগন্তুক ডাক্তারকে নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, “ইয়েস, ইটস মি।”

সেই ডাক্তার ওর হাতে হাত মিলিয়ে হেসে নিজের পরিচয় দেয়, “আমি ডক্টর ব্রিজেশ সিনহা, সান্যালের কলিগ।” রিশুর চেম্বারে উঁকি মেরে দেখে ওদের আক্ষেপ করে বলে, “দুটোর আগে ফ্রি হবে না মনে হচ্ছে।”

ম্লান হাসি দেয় ঝিনুক, “দ্যাটস ওকে, আমি ওর জন্য ওয়েট করবো।”

মুচকি হাসি দেয় ব্রিজেশ, “তুমি দাঁড়াও আমি দেখি ওকে বলে।”

ব্রিজেশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে ঝিনুককে দেখে ভীষণ ভাবেই অবাক হয়ে যায় রিশু, “তুমি? এই সময়ে? এখানে?”

ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “সারপ্রাইজ...” তারপরে পাশে দাঁড়ানো রিতিকার সাথে পরিচয় করিয়ে বলে, “আমার বান্ধবী, রিতিকা, যার কথা তোমাকে গতকাল বলছিলাম।”

রিতিকার দিকে একবার তাকিয়ে সুন্দরী প্রেয়সীর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে অবাক হয়েই ফিসফিস করে বলে, “তুমি না পাগল আছো। এই সময়ে আসতে হত তোমাকে?”

ঝিনুক একটু মুখ ভার করে বলে, “আমি এসেছি বলে তোমার অসুবিধে হচ্ছে? ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দেব। আমি কিন্তু তোমাকে ডাকতে যাইনি, তোমার বন্ধুটা বলল না হলে আমি তো এখানে তোমার লাঞ্চ আওয়ার পর্যন্ত জন্য ওয়েট করতাম।”

এই সাজে ওর রূপসী প্রেয়সী সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে ওর সামনে আবির্ভূত দেখে চোখ ফেরাতে অক্ষম হয়ে পরে রিশু। প্রেয়সী ললনার গভীর কাজল কালো চোখের তারায় প্রেমের ঝলকানি দেখে সব কিছু ভুলে যায় রিশু। বড় বড় কালো চোখের মণির মাঝে নিজের প্রতিফলন দেখে একটু হেসে বলে, “ইউ আর ম্যাড।”

হিল তোলা থাই হাই বুট পড়ার জন্য ঝিনুকের মাথা রিশুর কাঁধ ছাড়িয়ে যায়। রিশুর মুখে হাসি দেখে দুই হাতে ওর বাজু জড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলে, “ফর ইউ ওনলি।”

হসপিটাল ভর্তি লোকের সামনে রিশুর প্রেয়সী ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকাতে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুতভাব বোধ করে রিশু। ঝিনুকের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “চলো একটু ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।”

ঝিনুক চারপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই ওদের দিকে কেমন যেন একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে, সেই দেখে ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুত হয়ে রিশুর হাত ছেড়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “না না, এই তো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, আমরা যাচ্ছি তুমি পেসেন্ট দেখো।”
 
মেয়েটা সত্যি পাগল, এই দুই মিনিটের জন্য দেখা করতে এসেছিল নাকি? যত দেখে তত যেন নতুন মনে হয় এই সুন্দরীকে। পরনে হাল ফ্যশানের ছেঁড়া জিন্স আর গলা উঁচু চাপা সোয়েটার তার ওপরে গাড় নীল রঙের ওভারকোট, ললনাকে দেখে গতরাতের শাড়ি পরিহিতা রূপসী স্ত্রী বলে মনেই হচ্ছে না, মনে হয় কোন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক মডেল। এতদিন এমন আধুনিকা সুন্দরীরদের থেকে একটু দুরেই থাকত রিশু, একটু হীনমন্যতায় ভুগত, তবে ওর অবচেতন মন ভীষণ চাইত এমন সুন্দরীদের একটু ছোঁয়া পেতে।
 
রিশু ওকে বলে, “তোমরা ফার্স্ট টাইম আমার হসপিটালে এসেছ, এক কাপ কফি হয়েই যেতে পারে।” নিজের চেম্বারে উঁকি মেরে ইশারায় ব্রিজেশকে ওর কাজ দেখতে অনুরোধ করে।

ঝিনুক ওকে আস্বস্থ করে বলে মিষ্টি হেসে বলে, “আরে না না, আমি চাইনা তোমার কোন অসুবিধে হোক। তুমি শুধু ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও।”

হেসে ফেলে রিশু, “ওকে, বাই দ্যা ওয়ে, চল তোমাদের বাইরে পর্যন্ত ছেড়ে আসছি।”
 
রিশুর বাম বাজু দুইহাতে জড়িয়ে ধরে ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক, অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই হসপিটালে আসে চিকিৎসা করাতে, কতজনের কত ধরনের রোগ। কথায় কথায় রিশু জানায়, দিল্লীর এমস ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটাল, সেটা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ওর রিশু ভারতের সব থেকে নামকরা হসপিটালের ডাক্তার। নিজে চোখেই দেখছে এই জনসমুদ্র। সুন্দরী স্ত্রীর দিক থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না রিশু, বারে বারে ওর তৃষ্ণার্ত চোখ ঝিনুকের কোমল অধর আর গভীর কালো চোখের দিকে চলে যাচ্ছিল। রিশুর আবেগঘন চোখের চাহনিতে ভীষণ ভাবেই আন্দোলন জেগে ওঠে ঝিনুকের ছোট হৃদয়ের অভ্যন্তরে। হসপিটালের বাইরে বেড়িয়ে শীতকালের মিষ্টি রোদে মাখামাখি করে ওরা তিনজনে আরো কিছুক্ষন গল্প করে। রিতিকা বিশেষ কথা না বললেও বারেবারে ওর চোখ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল রিশু আর ঝিনুককে। ট্যাক্সিতে ওঠার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত রিশুর পাশ ছাড়তে একদম ইচ্ছে করছিল না ঝিনুকের, এই মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে গল্প করার মজাই আলাদা।
 
ট্যাক্সিতে ওঠার আগে রিতিকা রিশুর দিকে হাত বাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, “তোমার কার্ড পাওয়া যাবে?”

পার্স থেকে নিজের কার্ড বের করে রিতিকার হাতে দিয়ে ওকে বলে, “তোমরা সাবধানে যেও।”

বান্ধবীর কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় রিতিকা, “তোমার বৌকে সাবধানেই নিয়ে যাবো।”

লাজুক হেসে রিশুর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মিষ্টি হেসে ঝিনুক ওকে বলে, “ঠিক সময়ে লাঞ্চ করে নিও আর আমি মেসেজ করব।”

ট্যাক্সি ছাড়তেই রিতিকা ঝিনুকের বাজুতে আলতো ধাক্কা দিয়ে ইয়ার্কি মেরে বলে, “ফাক বেব, কি হাত মেরেছিস মাইরি। সোজা এমসের অরথোপেডিক সার্জেন?”

মৃদু হাসে ঝিনুক, “দেখলি তো কত বিজি মানুষ, আবার নেক্সট মান্থে লন্ডন যাচ্ছে।”

আশ্চর্যচকিত রিতিকা ওকে জিজ্ঞস করে, “বাপরে, লন্ডন? তুইও যাচ্ছিস নাকি?”

ঝিনুক ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “না রে আমি যাচ্ছি না, আমার পাসপোর্ট কোলকাতায় আছে এখানে আনা হয়নি। ওর একটা সেমিনার আছে সেইজন্য যাচ্ছে। ও খরচা হসপিটাল দিচ্ছে সো আমি যাচ্ছি না।”

রিতিকা ওকে চোখ টিপে প্রশ্ন করে, “হানিমুনে এখন গেলি না?”

ঝিনুক লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “এই তো কোলকাতা থেকে দিল্লীতে এসেই আমাদের হানিমুন হচ্ছে।” একটু থেমে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এখানে কাছাকাছি কোথায় পার্লার আছে জানিস?”

রিতিকা প্রশ্ন করে, “কেন রে?”

মুচকি হেসে ঝিনুক ওকে উত্তর দেয়, “অনেক দিন গ্রুমিং করা হয়নি।”

রিতিকা হাসিতে ফেটে পরে, “যাহ্‌ তেরি, এতদিন তাহলে এনাকোন্ডা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নাকি?”

রিতিকার বাজুতে কিল মেরে লাজুক হেসে বলে, “ইউ আর আ বিচ, রিয়ালি। বল না পার্লার কোথায় আছে?”

রিতিকা একটু ভেবে বলে, “তোর এরিয়াতে খুঁজে দেখতে পারিস।” ফোনে গুগুলে খুঁজে দেখে ওকে দেখিয়ে বলে, “তোর বাড়ির কাছেই একটা পার্লার আছে, শপিং এর পরে না হয় যাওয়া যাবে?”

মুচকি হাসে ঝিনুক, “শপিং আজকে করতে হবে না, চল আগে পার্লার যাই তারপরে দেখা যাবে।”
 
ট্যাক্সি ঝিনুকের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। হরিশের ব্যাপারে জানতে চাইলে রিতিকা জানায় যে ওদের মাঝে ছাড়াছাড়ি অনেকদিন আগে হয়ে গেছে। হরিশ ব্যাঙ্গালোরে একটা কোম্পানিতে চাকরি পায়, প্রথমে রিতিকাকে ব্যাঙ্গালোর যেতে বলেছিল হরিশ। ব্যাঙ্গালোরে দুইজনে লিভ-ইন রিলেশানে থাকত, কিছুদিনের মধ্যেই অন্য একটা চাকরি পায় রিতিকা, সেখানে ওর মাইনে হরিশের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়াতে হরিশের মনের মধ্যে হীনমন্যতা জাগে। বাড়ির বেশির ভাগ খরচ খরচা ওকেই বহন করতে হত, মাঝে মাঝেই হরিশ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত, যদিও রিতিকাও মদ খায় তবে হরিশ প্রায় রোজদিন মাতাল হয়েই ঘরে ঢুকত। এই নিয়ে অনেকবার ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে, রিতিকা দিল্লীতে চাকরি নিয়ে চলে আসে। সব শুনে ঝিনুক আক্ষেপ করে বলে, মেয়েদের ব্যাথা খুব কম পুরুষ বুঝতে পারে। কথায় গল্পে ঝিনুক তার আগের রাতের ডিনার পার্টির গল্প করে।
 
সব শুনে রিতিকা ম্লান হেসে বলে, “সব মানুষ কি আর তোর মতন লাকি, এমন একটা ডাক্তার পেয়েছিস, নিজে ড্রিঙ্ক না করলেও তোর ড্রিঙ্ক করাতে ওর আপত্তি নেই।”

ওর কথা শুনে গর্বে ঝিনুকের বুক ফুলে যায়, ঠোঁটে দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, “আমি লাকি কিনা জানিনা তবে আমারটা না ভীষণ শয়তান।” বলেই ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে।
 
পার্লার ঢোকার আগে রিশুকে একটা মেসেজ করে দেয় ঝিনুক, পার্লার যাচ্ছি। উত্তর আসে সঙ্গে সঙ্গে, আজকে সত্যি মারবে নাকি? ঝিনুক উত্তর দেয়, একদম দুইজনে মিলে একসাথে মরব। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। রিশুর উত্তর আসে, ডেফিন্টলি হানি। হানি শব্দটা পড়ে ঝিনুকের মনময়ূরী নেচে ওঠে, একগাদা চুম্বনের ইমোজি পাঠিয়ে দেয়।
 
পার্লারে ঢুকে দুই বান্ধবী নিজেদের সাজিয়ে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। চুলে নতুন করে রঙ করতে হবে, সেই সাথে কয়েক গোছা হাইলাইটিং করাতে হবে, আইব্রো ট্রিমিং, ওয়াক্সিং, ফেসিয়াল, থ্রেডিং পেডিকিওর ম্যানিকিওর ইত্যাদি সারতে সারতে প্রায় ঘন্টা চার পাঁচ লেগেই যাবে। প্রসাধনি করার সময়ে দুই বান্ধবী গল্পে মেতে ওঠে, পুরানো দিনের কলেজের গল্প। পার্থের কথা জিজ্ঞেস করাতে সংক্ষেপে জানিয়ে দেয় ছেলেটার উদ্দেশ্য বিশেষ ভালো ছিল না তাই শেষ মুহূর্তে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। রিশুর পরিচয় দেয় ঝিনুক, ওর মায়ের প্রিয় বান্ধবীর বড় ছেলে তাই সেই বিয়ের দিনেই ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 10-12-2020, 12:13 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM



Users browsing this thread: 26 Guest(s)