Thread Rating:
  • 42 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সাংঘাতিক সব কান্ডকারখানা
#4
চার।

অবশ্য কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের পুরানো মিতালি তার স্মার্ট খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলো। আমরা যেন বাঁচলাম। তবে নতুনত্বটা রয়েই গেলো। দেখলাম যে পুরোনো দিনের ছোটোখাটো সব ঘটনাই তার মনে আছে, সব গল্পই ও করে ফেলতে চায়। আমার জন্য একটা শাড়ি উপহারস্বরূপ এনেছিল, নিজের হাতে করা কাজ, সরু তুলির বাটিক, অপূর্ব , চোখ ফেরানো যায় না। দেখেই বুঝলাম যে দশ বারো হাজার টাকা দাম হবে। স্বভাবতই একটু ইতস্তত করলাম। ও আচমকা হাঁটু গেড়ে বসে শাড়িটা আমার পায়ের ওপর চেপে ধরলো, কিছুতেই ছাড়বে না, কি গেরো।
খাবার সময় আমি স্বল্প আয়োজনের জন্য ত্রুটিস্বীকার করতেই তার কি বকাবকি! বাবাঃ, কি গিন্নি।
শুধু দেখলাম যে আমার বর চুপচাপ মিতু কে লক্ষ্য করে যাচ্ছে, যেন কিছু ভাবছে। ওর আবার কি হলো?
খাওয়ার পর মিতু খাটে আয়েশ করে বসলো আর আমাকেও টেনে বসালো। এতক্ষন ও নিজের বা তার কাজের, কোনো কোনো কথাই আমাদের, আমরাও কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। শেষমেশ, আমি জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম ওর সেই আশ্চর্যসুন্দর বুটিকের কথা। ও একটু যেন চুপচাপ হয়ে গেলো মনে হলো যেন ওর ভেতরে কোনো টানাপোড়েন চলছে। হটাৎ ঝোঁকের মাথায় বলে ফেললো, "দিদি, আমি আর সুকুমারের সাথে থাকি না!"
এটা আমাদের জানা ছিল কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ও মাথা নিচু করে বসে থাকলো। বুঝতে পারলাম যে মিতালি বলতে চায় অনেক কিছু কিন্তু কীভাবে আরম্ভ করবে তা বুঝতে পারছে না। একটু সহজ করার জন্য আমি প্রশ্ন করলাম, "বারাসাত থেকে ম্যানেজ করাটা কি মুশকিল হচ্ছিলো?" মিতালী মনের ভেতরে আমরা প্রশ্নটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে বলল, "দিদি, আমি তিন বছর বারাসাতে অসম্ভব স্ট্রাগল করেছি। তুমি তো জান, যে কাজ করতে, পরিশ্রম করতে আমি কোনোদিনই পিছু হটিনি। আমি খুব ভালো কাজ করতাম আর দরজায় দরজায় তা বিক্রি করতাম, সবার প্রশংসাও অনেক পেয়েছি। কিন্তু বিক্রি হতো না আমার কাজ কারণ আমার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। তাতেও আমার আপত্তি ছিল না কিন্তু যাদের কাছে আমি যেতাম তারা কখনো আমাকে শিল্পীর মর্যাদা দেয়নি, তাদের চোখে আমি সব সময় ছিলাম একজন ছোট ভেন্ডার , শাড়ীর ব্যবসাদার। আমার কাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে বা ভালো প্রমাণ করতে কলকাতা আসার দরকার ছিল। । সুকুমার বারাসাতের অল্প পরিসরের কাজেই সন্তুষ্ট ছিল কিন্তু আমি হতাশ, ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যাচ্ছিলাম। কি করতাম ? তোমরা বলো? আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম যে আমাকে যদি এগোতে হয় তাহলে আমাকে কলকাতা যেতে হবে। এক ভদ্রলোক আমাকে সাহায্য করলেন, এই বুটিকটা তৈরী করতে, টাকা দিলেন, পরিকাঠামো দিলেন। আজ আমি গাড়ি করে ঘুরি, যাই তাদের কাছে যারা শিল্প বোঝে, তার কদর জানে।আজ আমার স্বপ্ন সফল। দিদি তুমি বলো আমি সুকুমারকে ছেড়ে কি ভুল করেছি? দাদা, আপনি বলুন আমার কাছে কি অন্য কোন বিকল্প ছিল?"
সোজাসাপটা কথা, আমাদের কি বা বলার থাকতে পারে? অকাট্য যুক্তি। কিন্তু বারবার আমার চোখের সামনে সুকুমারের সেই মলিন হাসিমুখটা ভাসতে থাকলো। মনের এই দ্বন্দ্বের কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে ছিল না।
আমার বর লক্ষণীয়ভাবে চুপ করে মিতুর কথা শুনছিলো। হটাৎ সে কথা বলে উঠলো, আমি স্বা স্বাভাবিকভাবেই অবাক হলাম।
ও বললো, "মিতালি, দেখো। এই ব্যাপারে আমাদের কিছু বলা সম্পূর্ণভাবে অনধিকারচর্চা কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে তোমাকে অনেকদিন ধরে চিনি তাই যদি কিছু মনে না করো তাহলে দুটো কথা বলি যদিও এটাকে আমার ধৃষ্টতা হিসেবেই ধরা যেতে পারে। আমার মতে তুমি অযথা নিজেকে দোষারোপ করছো।বারাসাত ছেড়ে কলকাতা যাবার ডিসিশন খুবই সঠিক আর বিবেচনাপূর্ণ। কঠিন নির্ণয় কিন্তু সুকুমারের সাথে তোমার সম্পর্কের ভিত খুবই দুর্বল ছিল আর কোনো ভবিষ্যৎ ছিলোনা বললেই ভালো হয়। তোমার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ের কাছে আমি অন্তত এটাই আশা করি আর অভিনন্দন জানাই যে তুমি অযথা আমাদের এই ঠুঁটো সমাজের হিজিবিজি শাসন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছো। সেলাম তোমাকে।"
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও আবার বললো, "সুকুমারের বিষয়ে আমার মতামত তোমার ভালো নাও লাগতে পারে। আমার মতে সুকুমার যথেষ্ট পরিমানে সুযোগসন্ধানী ছেলে তা নাহলে কি কেউ বৌয়ের কাঁধে ভর দিয়ে জীবন যাপন করে? কারণ, বৌ অত্যধিক মেধাবী আর নিজে পুরোমাত্রায় অদক্ষ। এটা কিন্তু সে ভালোই জানে যে সে তোমার উপযুক্ত নয় কিন্তু আজেবাজে যুক্তি দিয়ে তোমাকে আটকে রাখবে, আত্মসর্বস্ব স্বার্থপর লোকেরা এরকম হয়। যেহেতু এদের আত্মসম্মান বলে কিছুই থাকেনা তাই এরা সবার সামনে ভালো ব্যবহার করে, বৌকে তোয়াজ করে যাতে জীবনটা আনন্দেই মজা করে কেটে যায়। আর কষ্টটা হয় কার ? তোমার মতন সুপিরিয়র মেয়েদের যাদের জীবনটা সংসারের জোয়াল টেনেই কেটে যায়।
আসলে কি জান? সুকুমার একটা পরগাছা যে তোমাকে ব্যবহার করতো তোমার কিছু মালপত্র তুলে আর তোমাক বাইকে করে এদিক ওদিক নিয়ে গিয়ে। আর সবার মনে হতো যে ওহ বৌকে কী না ভালোবাসে। ইংরেজি তে এদের বলে এটেনশন সিকার। এদের লজ্জাও হয় না।
আমি দেখতাম যে আমাদের বাড়ি এলে সে ন্যাকামি করে তোমাকে খেতে বলতো। আমি দূর থেকে হাসতাম যদিও তোমার দিদি বেশ ইম্প্রেসেড হতো। এই ভাবে এরা সিমপ্যাথি আদায় করে। এভাবেই এরা বাঁচে, এটাই এদের গেম।
সত্যি কথা বলতে কি ওর সাথে দিনকয়েক আগে দেখা হয়েছিল। ও কিন্তু দেখলাম এখনো বেশ হোপফুল। দেখলাম বেশ কায়দা করে তোমার দিদিকে বুটিকের কার্ডটা গছিয়ে দিলো যাতে আমরা ওখানে যাই আর বলি যে সুকুমার কত ভালো ভালো কথা বলছিলো। ফেরার পথ খুলে রাখা আরকি। পরগাছারা কখনো বদলায় না।
তার ওপর সংসারের ছোটোখাটো ঝামেলা তো আছেই। কোনো মা কি চাইবে যে ছেলের স্ত্রী ছেলের চেয়ে ভালো হোক? আমার নিজের মা ই চাইতেন না আর এ তো মফঃস্বল! বুঝতেই পারি শ্বশুরবাড়িতে কত রকম অবমাননা তোমাকে পোয়াতে হয়েছে। তাই আবার বলছি, তুমি খুব ভালো আর সাহসী ডিসিশন নিয়েছো, এতে তোমার দৃঢ়সংকল্প ফুটে উঠেছে। নতুন জীবন শুরু করো তার সাথে যে তোমার মূল্য বুঝবে, তোমার সমকক্ষ হবে, সুকুমারের মতন হেরো নয়।
একটু চা হোক নাকি? মিতালীর নতুন জীবন আমরা সেলিব্রেট করি। "
এই বলে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
[+] 8 users Like Trambak's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাংঘাতিক সব কান্ডকারখানা - by Trambak - 09-12-2020, 07:36 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)