Thread Rating:
  • 42 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সাংঘাতিক সব কান্ডকারখানা
#2
দুই।

বাড়ি ফিরে সুকুমারের কথা বার বার মনে পড়ছিলো । তখন আমরা রেস কোর্সের কাছে থাকতাম, প্রায় চার বছর আগেকার কথা । সেদিন আমি ছিলাম বেতনহীন, প্রসংশাহীন, স্বীকৃতিহীন খাঁটি গৃহবধূ যার একমাত্র কাজ ছিল এক ফালতু বর (শুধু মা মা ডাক) আর এক পাজী মেয়ের (বাবা বলতে অজ্ঞান) দেখাশোনা করা । মে মাসের গরম, তদুপরি একশো শতাংশ হুউমিডিটি, সব মিলিয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা । ঘড়িতে তখন বারোটা, বেল শুনে দরজা খুলে দেখি একজন ছোটোখাটো লোক দাঁড়িয়ে । মুখে 'কান এঁটো করা হাসি ।' এক কথায়, চিনি না ।
মানুষটি কিন্তু অকুতোভয় । দ্বিধাহীন ভাবে সে বললো, "দিদি, আমরা বারাসত থেকে আসছি, যাঁর সাথে দেখা করবো তিনি বাড়িতে নেই, আমার স্ত্রী এসেছেন সঙ্গে, তিনি একটু কাহিল হয়ে পড়েছেন । লিফটম্যান বললো যে আপনি বাঙালি । আমি মিতু কে বললাম এক গ্লাস জল কি উনি আমাদের দেবেন না? নিশ্চই দেবেন । দিদি, দেবেন একটু জল?" আমি তখন লক্ষ করলাম যে একটি লাজুক ছোট্টখাট্ট মেয়ে সিঁড়ির ওঠার মুখে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ।
"দিদি, আমি সুকুমার আর এ মিতু…মিতালী । আমরা সেই সকালে বেড়িয়েছি, কী গরম! মিতুর শরীরটাও ভালো নেই, একটু ভেতরে আসবো?"
উপায়ন্তর নেই, তাই আসতে দিলাম ভেতরে । মেয়েটি মানে মিতালী একটু ইতস্তত করে সোফাতে বসলো কিন্তু সুকুমার কালবিলম্ব না করে সোজাসুজি বৌয়ের পায়ের কাছে কার্পেটে বসে গেলো । চারদিকে তাকিয়ে উৎসাহিত হয়ে বললো, "দিদি, কি সুন্দর বাড়িটা সাজিয়েছেন আর ওই ছোট ছোট গণেশগুলো, চমৎকার! আপনি কালেক্ট করেছেন? মিতালী একটু অপ্রস্তুত হয়ে সুকুমারের পিঠের একটা খোঁচা দিলো কিন্তু সুকুমার অকুঠচিত্তে প্রশংসায় পঞ্চমুখ । আমি জল আর কিছু মিষ্টি দিলাম ওদের। সুকুমার কিছুতেই মিষ্টি খাবে না কিন্তু মিতালী কে খাওয়াবেই । অবশ্য শেষ পর্যন্ত সে নিজেও প্লেটটা শেষ করেছিল ।
খুব শিগগিরই জানতে পারলাম (সুকুমার বললো) যে এই রোগা মেয়েটা মানে মিতু অসাধারণ আর ব্যতিক্রমী শিল্পী, তদুপরি আশ্চর্য ভালো ব্যবসায়ী । তার নকশা শিল্প অনবদ্দ, আর তার শাড়ি শুধুমাত্র তাদের বিক্রি করা হয় যারা শিল্পের কদর করে ।  ভদ্রতার খাতিরে আমি কিছু প্রশ্ন করলাম আর মুহূর্তের মধ্যে সুকুমার দৌড়ে গিয়ে নিচের থেকে দুটো বিশাল ব্যাগ এনে হাজির করলো । মিতালী তো লজ্জায় একেবারে একশেষ ।  সুকুমার একের পর এক শাড়ী দেখাতে আরম্ভ করলো । একটু পরেই আমি বুঝলাম যে সুকুমার কথাগুলো মিথ্যে বলেনি । বাস্তবিক, দুজনেই অসাধারণ শিল্পী । কিছুক্ষনের মধ্যেই মিতালী নিজেও উৎসাহিত হয়ে বিভিন্ন শিল্পের ব্যাপারে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো । সুকুমার বৌয়ের প্রসংশায় পঞ্চমুখ (আমার বরটাকে যদি দেখাতে পারতাম!) ।
যদিও কোনো দরকারই ছিল না তবু দুটো শাড়ী কেনা হয়েই গেলো । অবশেষে ওরা ফিরে গেলো, ব্যাগদুটো ভীষণ বিপজ্জনকভাবে বাইকের দুপাশে ঝুলিয়ে ।
সেই শুরু । এক বছরেই ওদের সৃজনশীলতার খুঁটিনাটি সব জেনে গেলাম । ওরা দুজন সময় পেলেই বাড়িতে এসে আমাকে দেখাতো যে নতুন কি করেছে । বিশেষ করে মিতালী । ও প্রায়ই বিভিন্ন মোটিফ, প্যাটার্ন আর ডিসাইন এর ব্যাপারে আলোচনা করত আর তারপর সেটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতো । আশ্চর্য সুন্দর আর্টওয়ার্ক তৈরী করতো । আর সুকুমার? সে অক্লান্তভাবে মিতালী কে নিয়ে সারা কলকাতা শহর চষে ফেলতো হাসিমুখে । খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সুকুমারের কোনো কুন্ঠা ছিল না । আমার মনে আছে, একদিন আচমকা দুপুরে দুইমুর্তি এসে হাজির । সুকুমার এসেই বললো,"দিদি জল দিন শিগগির, আর একটু ডালভাত হবে? সোজা শান্তিনিকেতন থেকে আসছি, কিচ্ছু খাওয়া হয়নি । সেদিন সত্যিই বাড়িতে ভাত আর ডাল ছাড়া কিছু ছিলোনা । কিন্তু সেই দুটো ভাত ওরা ডিমভাজা দিয়ে যা তৃপ্তি করে খেয়েছিলো তা আমি কখনও ভুলবো না । মিতু ভালো করে খেলো কিনা তার ওপর সুকুমারের হেডমাস্টারী নজর থাকতো সদাই বিদ্যমান ।
মিতালী ছিল ইংরেজিতে এম.এ তাও আবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে । শাড়ির ব্যবসাতে কি করে এলো তা কিছুতেই আমার বোধগম্য হোতনা । সুকুমার আর মিতুর বিয়েটাও আমাকে অল্পবিস্তর অবাক করতো । দুজনে দু রকম । মিতালী প্রচুর পড়াশোনা করতো, বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল গভীর আর সুকুমার.......সে মানুষটা ছিল বড়ো ভালো । মিতু পারতো অক্লান্ত পরিশ্রম করতে আর সদাহাস্যমুখ সুকুমার ছিল ততোধিক ক্লান্তিহীন, ওকে নিয়ে ঘুরতে। মানিকজোড়।
[+] 7 users Like Trambak's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাংঘাতিক সব কান্ডকারখানা - by Trambak - 09-12-2020, 07:33 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)