10-04-2020, 12:34 PM
(This post was last modified: 10-04-2020, 12:39 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রাত গভীর হলে জঙ্গল যেন থমকে যায় এখানে।হাতির ডাক শুনতে পাওয়া যায় মাঝে মাঝে, কখনো শেয়াল ডেকে ওঠে।ঝিঁঝিঁর ডাক একনাগাড়ে শোনা যাচ্ছে।সুছন্দা বলল---বিয়ের পর ভেবেছিলাম আমরা এখানেই থেকে যাবো বলো।
রঞ্জন সুছন্দার দিকে ঘুরে শুয়ে বলল---তখন কি ভেবেছিলাম কলকাতায় চাকরী করব।আমি সবসময় চাইতাম বাবার মত ফরেস্টের চাকরী করতে।
সুছন্দা হেসে বলল---তাহলে ভালোই হত এখানেই আমরা থেকে যেতাম।
রঞ্জন বলল---আজ বটু কাকা বলল তোমার দাদুর বাড়ী নাকি আগের মতই আছে।ওখানে নাকি এখন সাপ-খোপের বাস!
---সত্যি? যাবে একদিন?
---কালই চলো।অর্কও বলছিল, চিলাপাতার জঙ্গলটা ঘুরে আসা যাবে।
পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ল ওরা।সকালের জঙ্গল আরো অপরূপ।চিলাপাতার জঙ্গলের মেঠো রাস্তাটা ধরে ওরা পাহাড়ের ঢালে উঠল।
একতলা দু কামরার বাড়িটা এখনো আছে।বাড়িটা সুছন্দার দাদু অনেকটা বনবাংলোর কায়দায় বানিয়েছিলেন।তার বেড়াগুলো ভেঙে গেছে।গাছ, লতাপাতা বেয়ে উঠেছে।সুছন্দা দেখল একটা তালা দিয়ে দরজা বন্ধ।রঞ্জন লতাপাতা সরিয়ে দরজার কাছে যেতেই একটা গিরগিটি সরে গেল।
সুছন্দা বলল---তালা দেওয়া তো?
রঞ্জন বলল--ভেঙে ফেলা যায়, কিন্তু লাগাবে পরে কি?
---এর চাবি কার কাছে আছে?
ফরেস্টের গাড়ীতেই এসছে রঞ্জন-- সুছন্দারা।যদিও সুছন্দার দাদুর এই বন বাংলো রঞ্জনের পৈত্রিক বাড়ী থেকে মাত্র দশ মিনিট জঙ্গলের হাঁটা পথে।সে পথেই আগে আসত রঞ্জন সুছন্দার সাথে দেখা করতে।কিন্তু পিচ রাস্তা দিয়ে গেলে সেই পথই দশ মিনিট গাড়িতে লেগে যায়।
গাড়ীর ড্রাইভার ছেলেটা বেশ মিশুকে।ওর বাড়ী এখানে নয়।মালবাজার।ও ফরেস্টের গাড়ী চালায়।
গাড়ীর ড্রাইভার বলল---স্যার এ ঘরের চাবি আপনি একজনের কাছে পাবেন?
রঞ্জন জিজ্ঞেস করল---কে?
---নাম জানি না স্যার, কে একজন এখানে থাকে।আপনাদের বাড়ীর কেয়ারটেকার বটুকলাল তাকে চেনে।
সুছন্দা বলল---তবে যে বটুকাকা বলল এ বাড়ী এখনো দখল করেনি কেউ?
চিলাপাতার জঙ্গল ঘুরে নল রাজার বাড়ী হয়ে রঞ্জনরা যখন ফিরল তখন সন্ধ্যে হয়েছে।খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে।রঞ্জন বলল---সুছন্দা তুমি ভাতে ভাত করে নিও জলদি।
সুছন্দা শাড়ি বদলে রান্না ঘরে ঢুকে গেল।বটুকলাল এসে বলল---ছোটবাবু ঘুরে আইলেন?
---আচ্ছা বটু কাকা আপনি যে বললেন ওই বাড়ী দখল হয়নি তবে? ওখানে নাকি অন্য কে থাকে ড্রাইভার বলল।
বটুকলাল হেসে বলল---বৌমনির দাদু খুব ভালো লোক ছিলেন, জানতেন এই বাড়ীর লগে আর কেউ আসবেনি।বৌমনির মা'ও আসতেন কম।একটা ভবঘুরে আইসে জুটল।তার আস্তানা ছিল আশপাশ।দয়ালু মানুষ মরবার আগে থাকতে দিয়ে গেলেন।
----তার মানে ওই বাড়ীর চাবি আর মিলবে না?
---মিলবে না কেন?
---সে ভবঘুরে পাগলা সারাদিন জঙ্গলে ঘুইরে বেড়ায়, রাতে এসে আস্তানা গাড়ে।নিজের খেয়ালে থাকে, ভোর হবার আগেই চম্পট দেয়।তার কাছ থেকে চাবি এনে রাখব।
সুছন্দা ডাক দিলো---খাবে এসো।
খেতে বসে রঞ্জন বলল---কে এক ভবঘুরে পাগলকে থাকতে দিয়েছে তোমার দাদু ওই বাড়ী, বটুকাকা বললেন চাবি এনে দেবেন আজ রাতে।
সুছন্দা বলল---কাল তাহলে হেঁটে যাবো।
চিলাপাতা এখান থেকে বেশি দূরে নয়।রঞ্জন বহুবার হেঁটে গেছে।
ভোর বেলা বটুকাকা চাবি এনে দিল।অর্কর খুব ইচ্ছা হাতির পিঠে চড়বে।বটুকলাল বলল--তবে আমি দাদুভাইকে লিয়ে যাচ্ছি ছোট বাবু, আপনি না হয় বৌমনিকে লিয়ে চিলাপাতা হয়ে আসুন।
রঞ্জন একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট পরেছে, পায়ে স্নিকার্স।সুছন্দা হাল্কা নীলচে শাড়ি আর ছাপা ব্লাউজ।
সুছন্দা
বাড়িটার উঠোনের লতাপাতা গুলো সরিয়ে দরজার তালা খুলতে লাগল রঞ্জন।বেশ জং পড়েছে।ভবঘুরে বোধ হয় এ বাড়ীতে অনেকদিন আসেনি তাই তালার অবস্থা এই।
রঞ্জন দরজা খুলতেই ফাঁদের সম্মুখীন হল।ভীষন অন্ধকার, গুমোট ভাব।রঞ্জন মোবাইলের আলোটা জ্বাললো।সুছন্দা তার দাদুর বাড়ীর ঘরগুলো ভালো করে চেনে।শাড়ীটা গোড়ালির উপরে তুলে ও হাঁটতে লাগল।প্রথম ঘরটার লাগোয়া দরজা দ্বিতীয় ঘরটা।পাশে ছোট রান্না ঘর, পেছন দিকেও বারান্দা আছে।
প্রথম ঘরে ঢুকে রঞ্জন আর সুছন্দা চমকে গেল মোবাইলের আলোয় তারা দেখছে এ কার ছবি!!!
(চলবে)
রঞ্জন সুছন্দার দিকে ঘুরে শুয়ে বলল---তখন কি ভেবেছিলাম কলকাতায় চাকরী করব।আমি সবসময় চাইতাম বাবার মত ফরেস্টের চাকরী করতে।
সুছন্দা হেসে বলল---তাহলে ভালোই হত এখানেই আমরা থেকে যেতাম।
রঞ্জন বলল---আজ বটু কাকা বলল তোমার দাদুর বাড়ী নাকি আগের মতই আছে।ওখানে নাকি এখন সাপ-খোপের বাস!
---সত্যি? যাবে একদিন?
---কালই চলো।অর্কও বলছিল, চিলাপাতার জঙ্গলটা ঘুরে আসা যাবে।
পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ল ওরা।সকালের জঙ্গল আরো অপরূপ।চিলাপাতার জঙ্গলের মেঠো রাস্তাটা ধরে ওরা পাহাড়ের ঢালে উঠল।
একতলা দু কামরার বাড়িটা এখনো আছে।বাড়িটা সুছন্দার দাদু অনেকটা বনবাংলোর কায়দায় বানিয়েছিলেন।তার বেড়াগুলো ভেঙে গেছে।গাছ, লতাপাতা বেয়ে উঠেছে।সুছন্দা দেখল একটা তালা দিয়ে দরজা বন্ধ।রঞ্জন লতাপাতা সরিয়ে দরজার কাছে যেতেই একটা গিরগিটি সরে গেল।
সুছন্দা বলল---তালা দেওয়া তো?
রঞ্জন বলল--ভেঙে ফেলা যায়, কিন্তু লাগাবে পরে কি?
---এর চাবি কার কাছে আছে?
ফরেস্টের গাড়ীতেই এসছে রঞ্জন-- সুছন্দারা।যদিও সুছন্দার দাদুর এই বন বাংলো রঞ্জনের পৈত্রিক বাড়ী থেকে মাত্র দশ মিনিট জঙ্গলের হাঁটা পথে।সে পথেই আগে আসত রঞ্জন সুছন্দার সাথে দেখা করতে।কিন্তু পিচ রাস্তা দিয়ে গেলে সেই পথই দশ মিনিট গাড়িতে লেগে যায়।
গাড়ীর ড্রাইভার ছেলেটা বেশ মিশুকে।ওর বাড়ী এখানে নয়।মালবাজার।ও ফরেস্টের গাড়ী চালায়।
গাড়ীর ড্রাইভার বলল---স্যার এ ঘরের চাবি আপনি একজনের কাছে পাবেন?
রঞ্জন জিজ্ঞেস করল---কে?
---নাম জানি না স্যার, কে একজন এখানে থাকে।আপনাদের বাড়ীর কেয়ারটেকার বটুকলাল তাকে চেনে।
সুছন্দা বলল---তবে যে বটুকাকা বলল এ বাড়ী এখনো দখল করেনি কেউ?
চিলাপাতার জঙ্গল ঘুরে নল রাজার বাড়ী হয়ে রঞ্জনরা যখন ফিরল তখন সন্ধ্যে হয়েছে।খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে।রঞ্জন বলল---সুছন্দা তুমি ভাতে ভাত করে নিও জলদি।
সুছন্দা শাড়ি বদলে রান্না ঘরে ঢুকে গেল।বটুকলাল এসে বলল---ছোটবাবু ঘুরে আইলেন?
---আচ্ছা বটু কাকা আপনি যে বললেন ওই বাড়ী দখল হয়নি তবে? ওখানে নাকি অন্য কে থাকে ড্রাইভার বলল।
বটুকলাল হেসে বলল---বৌমনির দাদু খুব ভালো লোক ছিলেন, জানতেন এই বাড়ীর লগে আর কেউ আসবেনি।বৌমনির মা'ও আসতেন কম।একটা ভবঘুরে আইসে জুটল।তার আস্তানা ছিল আশপাশ।দয়ালু মানুষ মরবার আগে থাকতে দিয়ে গেলেন।
----তার মানে ওই বাড়ীর চাবি আর মিলবে না?
---মিলবে না কেন?
---সে ভবঘুরে পাগলা সারাদিন জঙ্গলে ঘুইরে বেড়ায়, রাতে এসে আস্তানা গাড়ে।নিজের খেয়ালে থাকে, ভোর হবার আগেই চম্পট দেয়।তার কাছ থেকে চাবি এনে রাখব।
সুছন্দা ডাক দিলো---খাবে এসো।
খেতে বসে রঞ্জন বলল---কে এক ভবঘুরে পাগলকে থাকতে দিয়েছে তোমার দাদু ওই বাড়ী, বটুকাকা বললেন চাবি এনে দেবেন আজ রাতে।
সুছন্দা বলল---কাল তাহলে হেঁটে যাবো।
চিলাপাতা এখান থেকে বেশি দূরে নয়।রঞ্জন বহুবার হেঁটে গেছে।
ভোর বেলা বটুকাকা চাবি এনে দিল।অর্কর খুব ইচ্ছা হাতির পিঠে চড়বে।বটুকলাল বলল--তবে আমি দাদুভাইকে লিয়ে যাচ্ছি ছোট বাবু, আপনি না হয় বৌমনিকে লিয়ে চিলাপাতা হয়ে আসুন।
রঞ্জন একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট পরেছে, পায়ে স্নিকার্স।সুছন্দা হাল্কা নীলচে শাড়ি আর ছাপা ব্লাউজ।
সুছন্দা
বাড়িটার উঠোনের লতাপাতা গুলো সরিয়ে দরজার তালা খুলতে লাগল রঞ্জন।বেশ জং পড়েছে।ভবঘুরে বোধ হয় এ বাড়ীতে অনেকদিন আসেনি তাই তালার অবস্থা এই।
রঞ্জন দরজা খুলতেই ফাঁদের সম্মুখীন হল।ভীষন অন্ধকার, গুমোট ভাব।রঞ্জন মোবাইলের আলোটা জ্বাললো।সুছন্দা তার দাদুর বাড়ীর ঘরগুলো ভালো করে চেনে।শাড়ীটা গোড়ালির উপরে তুলে ও হাঁটতে লাগল।প্রথম ঘরটার লাগোয়া দরজা দ্বিতীয় ঘরটা।পাশে ছোট রান্না ঘর, পেছন দিকেও বারান্দা আছে।
প্রথম ঘরে ঢুকে রঞ্জন আর সুছন্দা চমকে গেল মোবাইলের আলোয় তারা দেখছে এ কার ছবি!!!
(চলবে)