25-03-2020, 03:21 AM
(This post was last modified: 25-03-2020, 03:26 AM by eklasayan. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ্র্যাজুয়েশান সবেমাত্র শেষ হয়েছে আকাশের | খুব ঝক্কি গিয়েছে শেষ কয়েক মাস | কলকাতা ইউনিভার্সিটির আন্ডারে তিনটে বছর অনার্স টিকিয়ে রাখা, তাও আবার ফিজিক্স এ | তাই এবার ঠিক করেছে কিছুদিন আর কোনো চাপ নেবে না | চুটিয়ে ঘুম আর প্রান খুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাবে | ইচ্ছা আছে সম্ভব হলে কাছে পিঠে কদিনের ট্যুরও করে আসবে, ওই তাজপুর কিম্বা মন্দারমনি টাইপ আর কি | ঘোরার ঘোরাও হয়ে যাবে আর তার সাথে মস্তির মস্তিও | অবশ্য বাইরে সচরাচর যাওয়া হয়না কখনই আকাশের, ওই চিন্তা-ভাবনা অবধিই থেকে যায় | তার একটা বড় কারন হোলো বাড়ির একমাত্র ছেলে, মা আর বৃদ্ধা দিদাকে নিয়ে আকাশের পৃথিবী | আকাশ যখন অনেক ছোটো, মানে অনেকটাই তখন বাবা নামক উজ্জ্বল নক্ষত্রটি আকাশের আকাশ থেকে ঝোড়ে গিয়েছিলো | ক্যান্সারে মারা যান আকাশের বাবা, মানে মি: মিত্র | এক কথায় যাকে বলে অমায়িক মানুষ ছিলেন আকাশের বাবা | পাড়ার সবাই এখনও এক কথায় বলে পার্থদার মত লোক হয় না | অবশ্য আকাশ বাবার মত অতটা না হলেও অমায়িক ভদ্র বলাই চলে | মাঝে মধ্যে একটু আধটু দুষ্টুমি চলে যেটা কেউই তেমন ধর্তব্যের মধ্যে রাখে না | তাই মাকে আর দিদাকে ফেলে চট করে কোথাও যেতে পারে না আকাশ | কারন জানে, মুখে প্রকাশ না করলেও দুই মহিলাই বেশ ঝামেলার মধ্যে পরে বাড়ির একমাত্র পুরুষ সদস্যটি উপস্থিত না থাকলে |
যাই হোক, সে সব তো পরের কথা | প্ল্যান হবে, মেম্বার ঠিক হবে, তার পরে যাওয়া | আপাতত পরীক্ষা শেষের প্রথম রবিবারটা জমিয়ে কম করে ১২টা অবধি ঘুমাবেই ঠিক করে রেখেছে | আর সেই মতই আস্তাবলের সমস্ত ঘোড়া বেচে দিয়ে স্বপ্নরাজ্যের রাজকুমার হয়ে দিব্যু ঘুরে বেরাচ্ছিলো বেচারা | কিন্তু ওই যে বলে না, ওপরে একজন আছেন, যিনি ঠিক করেন যে ঠিক এর পরের মূহুর্তে ঠিক কি হতে চলেছে | আর সেই নিয়ম মেনেই স্বপ্নরাজ্যে বেশিক্ষন আর বিচরন করা হয়না রাজকুমার আকাশের | ৮:১০ নাগাদ মা এসে হাঁক ডাক শুরু করে দেয় | প্রথমে সাড়া দিচ্ছিলো না আকাশ, কিন্তু যখন দেখলো কানের পর্দারা ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি টাইপ হচ্ছে তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই চেঁচিয়ে ওঠে
"কি হোলো কি, দুদিন হতে পারলো না পরীক্ষাটা শেষ হয়েছে, বললামই তো আজ বেলা করে উঠবো"
মাও ওদিকে নাছোড়বান্দা |
"ওঠ সোনা, আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠতে হবে | খুব দরকার না হলে ডাকতাম না বাবু, প্লীজ উঠে পর"
"উফফফ!! তোমাদের এই দরকার আর জিবনেও শেষ হবে না, কিছু আনার থাকলে রাতে বলতে পারো না? বাড়ি ফেরার পথে তাহলে নিয়ে আসতে পারি তো"
মা হেসে ফেলে উত্তর দেয়
"যা আনার সেটা তো কাল রাতে নিয়ে আসতে পারতি না, এখনই আনতে যেতে হবে, নাহলে তো বলেই দিতাম সোনা"
মাথা চুলকাতে চুলকাতে এবার মুখটা একটু তুলে মার দিকে আধখোলা ঘুমন্ত চোখ নিয়ে তাকায় আকাশ |
"মানে? কিছুই তো বুঝলাম না | একটু ঝেড়ে কাশো তো, কি এমন জিনিষ যা এখনই আনতে হবে? "
"আরে বাবা, জিনিষ না রে পাগল, একজন জলজ্যান্ত মানুষ"
"কি!!! এত সকালে আবার কে আসছে? আর আমাদের আত্মীয়-স্বজন যাদের আসার মত তারা তো সবাই আমাদের বাড়ি চেনেই, এতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আমায় আনতে যেতে হবে কেনো? "
মা এবার আকাশের পাশে বসে মাথার এলোমেলো চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
"আরে না, যে আসছে সে আমাদের বাড়ি আগে কখনও আসেনি | আর বলতে গেলে কলকাতায় এসেছেই হয়ত গোটা দু-তিন বার"
এবার একটু উঠে বসে আকাশ | কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না মা কার কথা বলছে | সকাল সকাল ঘুম থেকে তোলার জন্য আবার কোনো হেঁয়ালি করছে না তো? জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে মা এর দিকে |
"বুঝতে পারিস নি তো, বলছি শোন | আমাদের টাকির বাড়ির দুটো বাড়ি পরে নির্মল কাকুকে তোর মনে আছে? "
মাথা চুলকাতে চুলকাতে স্মৃতি রোমন্থন করার চেষ্টা চালায় আকাশ, কিন্তু কিছুতেই ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারে না | আসলে প্রায় ১২ বছর ওখানে যাওয়া হয়নি আকাশের, তাই সব কেমন যেনো ধোঁয়াশা হয়ে গিয়েছে |
মা মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আবার শুরু করে,
"আরে বাবা, তোর দিদাকে ফুলদি ফুলদি করে ডাকতো, খুব ভালোবাসতো তোকে, তুই ছোটোবেলায় গেলেই তোকে নিয়ে বিকেলে ইচ্ছামতির ধারে ঘুরতে নিয়ে যেতো আর গরম গরম মালপোয়া খাওয়াতো | আমাদের বাড়ি আসলেই তুই বলতি ওই যে মাপ্পো কাকু এসেছে আর বেড়ানোর জন্য লাফালাফি জুড়ে দিতি"
ঝাপসা হলেও এবার বেশ মনে পড়েছে আকাশের, বেঁটে করে একটু শ্যামবর্ণের মানুষটিকে | সত্যি বেশ ভালো মানুষটা আর ওকে নিয়ে সত্যি অনেক ঘোরাঘুরিও করত আর ও যা খেতে চাইতো তাই কিনে দিতো | দিদাকেও খুব স্নেহ করত আর দিদাও খুব ভালোবাসে সেটা ও জানে ভালো করে | কারণ দিদা বলত প্রায়ই নির্মল তো আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই, কারণ রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কমও ছিলো না তার থেকে |
"হ্যাঁ, মনে পড়েছে | তো কি হয়েছে বলো এবারে, উনি কলকাতা আসছেন তাই ওনাকে আনতে যেতে হবে, তাই তো? "
"আরে বাবা না না"
"তাহলে? "
"ওনার মেয়ে, বিথী |"
"বিথী?? সে আবার কোথা থেকে গজালো? "
"তোর না মনে থাকাটাই স্বাভাবিক | তখন তুই নিজেই কত ছোটো,আর ও তো তখন আরো ছোটো ছিলো"
"যাই হোক, তা সে হঠাৎ করে কলকাতা আসছে কেনো? আর আমার তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে কেনো? "
"এই তোর সমস্যা জানিস তো | পুরোটা না শুনেই বাড়ি মাথায় করিস"
"আচ্ছা বলো বলো, শুনছি"
"বিথী এবার উচ্চ মাধ্যমিকে খুব ভালো রেসাল্ট করেছে | ওর ইচ্ছা কলকাতার কোনো ভালো একটা কলেজে ভর্তি হবে | তাই নির্মল কাকু যখন এটা তোর দিদাকে জানায় তখন তোর দিদা কথা দিয়েছে যে কোনো চিন্তা নেই, এখানের কোনো একটা ভালো কলেজে ওর ভর্তির ব্যাবস্থা হয়ে যাবে এত ভালো রেসাল্ট যখন | আর ভর্তি না হওয়া অবধি বিথী আমাদের এখানেই থাকবে | আর তুই তো জানিস তোর দিদা নির্মল কাকুকে কতখানি ভালোবাসে"
পুরো ব্যাপারটা এবার অনেকখানি পরিস্কার হয় আকাশের কাছে | যেকটা দিন একটু আরাম করে ছুটি কাটাবে ভেবেছিলো সব মাথায় উঠলো, কারন ও ভালো করেই জানে দিদা এসবের ঝক্কি এবার ওর ঘাড়েই ঝোলাবে | মানে এই কলেজে কলেজে নিয়ে ঘোরা, ফর্ম তোলা, ভর্তি সবটাই ওর ওপর দিয়ে যাবে আর কি | দিদার দেওয়া কথা, সেটাও এদিকে ফেলতে পারবে না, নাহলে ভদ্রমহিলা এখনি ইমোশানাল ব্ল্যাকমেল করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে |
"যা বাবা, আর দেরি করিস না | বিথী বাসে করে ধর্মতলা আসছে, ৯:৩০টার মধ্যে চলে আসবে | তুই আর দেরি না করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পর সোনা, আজকাল যা সময় এসেছে, একা একটা মেয়ে, পথঘাট ঠিক মতন চেনে না, তাও আবার কলকাতার মত শহর | কিসের থেকে কি হয়ে যায়, বুঝিসই তো"
হেরে যাওয়া সৈনিকের মন নিয়ে অগত্যা আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লো আকাশ
"আমি রেডি হচ্ছি, তুমি শুধু একটু চা বানিয়ে দাও"
"ওমা কেনো, তুই ব্রেকফাষ্ট করে যা, তোর রেডি হতে হতে আমার হয়ে যাবে"
"না না, ওসবের দরকার নেই | তুমি শুধু একটু চা দাও, যেতে যখন হবেই তখন ধর্মতলায় গিয়েই একবারে কচুরি টচুরি কিছু খেয়ে নেবো"
মা ছেলেকে রাজি করাতে পেরেছে এই আনন্দে দিদার উদ্দেশ্যে বলতে বলতে বাইরে যায়
"তোমার নাতি রেডি হচ্ছে, চিন্তা কোরো না, বিথীকে নিয়ে ঠিক মতো চলে আসবে, আমি সব বুঝিয়ে দিয়েছি"
এদিকে রাগে গজগজ করতে করতে হাতে ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় আকাশ
"দাড়াও বুড়ি, কোনদিন সত্যি সত্যি তোমায় গ্রামের বাড়িতে রেখে আসবো | ইমোশানাল ব্ল্যাকমেল করা বেড়িয়ে যাবে তখন"