Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller আঁধারের শেষে
#4
দুই
দুই বোনের মধ্যে মনিকা দেবী ছোট। তার দিদি তনুকা তার থেকে বছর পাঁচেকের বড়। দেখতে দুজনেই অতিরিক্ত সুন্দরী, এছাড়া তাদের মধ্যে আর কোন মিল নেই। দুজনের সৌন্দর্যের ধরণ অবশ্য আলাদা।

মনিকা এখন ত্রিশ, একটু লম্বা, রোগা বা মোটা কোনটাই নয়। শরীরে ঠিক যতটা মেদ থাকলে তাকে পারফেক্ট বডি বলা যায়, সে ঠিক তাই। বাড়তি মেদের বাহুল্য না থাকলেও পেটে সামান্য মেদ রয়েছে, একপাশে হেলে দাঁড়ালে অথবা ডানে বাঁয়ে সামান্য ঝুঁকলে কোমরে দুটো খাঁজ বা ভাঁজ পরে। গায়ের রঙ পাকা গমের মত, খুব সাদা নয়, সাদার সাথে মিশে আছে হলদে আভা। গোল মুখ চিবুকের কাছে সরু হয়ে এসেছে, তাতে মুখের আকার পানপাতার মত হয়েছে। চোখ দুটো টানাটানা, সবসময় একটা চাঞ্চল্য ভেসে বেড়াচ্ছে। চঞ্চল হরিণীর মত দৃষ্টি তার, সবসময় কি যেন একটা খুঁজে বেড়ায়, কি যেন একটা এডভেঞ্চারের নেশা খেলা করে। সরু টিকালো নাক, পাতলা চাপা গোলাপি ঠোঁট দুটো। সব মিলিয়ে তার মুখখানি মানুষের কাছে খুব একটা নেশার বস্তু। বুকের আকার খুব বড় নয়, মাঝারি। কিন্তু অতি সুগঠিত, একটুও ঝুলে পড়েনি। ব্লাউজ আর ব্রা খুলে ফেললে মাই দুটির বোঁটা একটুও মাথা নিচু না করে সোজাসুজি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্বল্প মেদ যুক্ত নরম পেটে সুগভীর নাভিটা সামান্য লম্বাটে। কোমরের নিচের অংশ বেশ চওড়া আর ভারী। নিতম্বে যেন দুটো অর্ধেক কাটা ফুটবল যত্ন করে কেউ বসিয়ে দিয়েছে, পেছনটা একটু বেশিই ভারী। শাড়িতে তার পেছনটা যেন আরও ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। সব মিলিয়ে যে কোন মডেল বা হিন্দি ছবির সেক্সি নায়িকাদের সাথে অনায়াসে সে পাল্লা দিতে পারে।


খুব ছোট বেলা থেকেই মনিকা তার এই শরীরের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। বুঝেছিল, এই শরীরই তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। স্কুলে যাবার সময় ছেলেদের সিটি বা সুযোগ পেলেই বাড়ির কাজের ছেলের অবাধ্য হাত তার শরীরের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানোয় সে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো। সে বুঝল তার সব ক্ষমতার উৎস তার শরীর। অপরিসীম তার ক্ষমতা, এখন দরকার সেই ক্ষমতার যথাযোগ্য ব্যবহার। সে যত বড় হতে লাগলো, স্কুল পেরিয়ে কলেজে যেতে শুরু করল ততই সে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে লাগলো, বিভিন্নভাবে তার ক্ষমতার পরিচয় পেতে থাকল। প্রয়োজন মত সে তার অস্ত্র প্রয়োগ করেছে। মাঝারি মাপের ছাত্রী হয়েও কলেজের পরীক্ষা টপকাতে তার বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। অনায়াসে সে পাল্লা দিয়েছে কলেজের তাবড় তাবড় ছাত্র ছাত্রীদের সাথে। যদিও বড় পরীক্ষায় সে তার অস্ত্র আর ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারেনি, সব তো আর কলেজের হাতে থাকে না, আর তাই তার কালেজের পরীক্ষায় সাফল্যের পেছনের কারণ অনুমান করতে কারোর কোন কষ্ট হয়নি।

কলেজ জীবনে সে প্রেম করেনি, প্রেম মানে কোন একজনের সাথে সবসময় আটকে থাকা, এই ধারনায় সে বিশ্বাস করেনি। সে সুযোগসন্ধানী, নিজের স্বার্থের জন্য সবসময় সুযোগ খুঁজে বেরিয়েছে, প্রয়োজন মত এর ওর সাথে একটা আবেগ ঘন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মনিকার জন্য ছেলেদের দল পাগল ছিল ঠিকই, কিন্তু তারাও জানত ও প্রেমে পড়বার পাত্রী নয়, ও কাউকেই ভালবাসবে না। অনেক ছেলেই নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। সব কিছু জানা সত্ত্বেও ছেলেদের কাছে মনিকার চাহিদা ছিল ভীষণ, মনিকা ছিল এমনি এক নেশার বস্তু।

কলেজে পড়ার সময় মনিকা যেখানেই গেছে, ছেলেরা হামলে পড়েছে তার ওপর। মনিকার যতটা কাছে যাওয়া যায়, যতটা কাছ থেকে ওকে দেখতে পাওয়া যায়, ছেলেরা তা নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। এক কথায় তার অসংখ্য ভক্ত ছিল, সবাই রূপমুগ্ধ। পুরুষরা তাকে কল্পনা করে তৃপ্তি পেত, বাথরুমে চলে যেত আর হানিমুনের উত্তাল সময় কাটাত। স্বাভাবিক কারণেই তাকে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প প্রচলিত ছিল, যা নিয়ে ক্যান্টিনে চায়ের আড্ডায় আর কমন রুমে টিটি খেলার সময় হাহা হিহি চলত। ছেলেরা তার অনুগ্রহ পাবার জন্য জীবন বাজি রাখত, মেয়েমহলে সে চরম ঈর্ষার পাত্রী হয়ে উঠেছিল। সেটাও খুব স্বাভাবিক, তার কারণে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কে টানাপোড়েন  হয়েছে, সম্পর্কে চিড় ধরেছে, এমন ঘটনা খুব কম ছিল না।

মনিকাকে নিয়ে প্রচলিত গল্পগুলো মুখরোচক হলেও বেশিরভাগই ছেলে মেয়েদের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনার ফসল, তাতে সত্যের পরিমাণ যৎকিঞ্চিত। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, সামান্য কোন ঘটনাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে গল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, এক কথায়, তিলকে তাল করা। কিন্তু ছাত্রমহলে যা রটে, তার কিছু তো বটেই, একেবারে ফাঁকা প্লট নিয়ে তো আর গল্প উপন্যাস লেখা যায় না। সেসব গল্পে সত্য অল্পই থাকতে পারে, কিন্তু সেও তো সত্যই। কি সেই সত্য? ওই যে বললাম, প্রয়োজনে মনিকা নিজের অস্ত্র প্রয়োগ করতে দ্বিধা করতো না। দরকারে সে তার ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতো। সিনেমা হলে গিয়ে সঙ্গীর হাত ধরা, কি কাঁধে হাত রাখা, বা ফাঁকা ক্লাস ঘরে একটা আধটা চুমু খাওয়া, কি ওই মাখন নরম স্তনের পরশ দান করা... ব্যস, তাতেই সঙ্গীটি দিওয়ানা হয়ে যেত, ঘায়েল হয়ে যেত, পাওনার অতিরিক্ত মনে করতো। কত ছেলেকে প্রয়োজনে মনিকা এভাবে ধন্য করেছে...

বোধহয় মেয়ের এই সব কার্যকলাপের কিছু কিছু খবর বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল, কলেজের গণ্ডি পেরোতেই মনিকার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। এই মেয়েকে কতদিন সামলে রাখা যাবে তা নিয়ে তার বাড়ির সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। কোন কেলেঙ্কারি ঘটার আগেই একটা ব্যবস্থা করা দরকার। বাড়িসুদ্ধ লোকের ঘুম উড়ে গেল। নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য মনিকাকে সময় দেওয়া হল কিন্তু ভবী ভোলবার নয়, সে শোধরাবার পাত্রী নয়। আর দেরি করা চলে না।

বিয়ের আলোচনা চলাকালীন মনিকা তার আপত্তি জানাল, এখন সে বিয়ে করবে না, কিছুতেই না। যে ধরনের জীবনযাত্রা সে অতিবাহিত করছিল, তাতে বিয়ে বড়ই বেমানান। এইসময় তার বিয়েতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, ইচ্ছে ছিল আরও কিছুদিন এই সুখ ভোগ করবে। ছেলেদের নিয়ে খেলা করাটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সে যে কত ছেলের সাথে একসাথে চ্যাট করতো তা সে নিজেও খেয়াল রাখতে পারত না। সে যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। পুরুষ তার দাস, পুরুষের দল তার পায়ের কাছে সবসময় পড়ে থাকে, সে যা চায়, তাই হয়, তার ইচ্ছে প্রকাশ পেতে না পেতেই সেটা বাস্তবের রূপ পায়। এত সুখ, এত আনন্দ...জীবন এত সুন্দর, একেই বলে বুঝি জীবন উপভোগ করা। এর থেকে আর বেশি কি পাবার আছে? সে এক রাণীর মত, মক্ষীরাণীর মত, পুরুষ পতঙ্গের দল সবসময় তার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার আগুনে পুড়ে ছেলেরা নিজেদের ধন্য মনে করছে, সে কখনও ভাবতে পারেনি সম্পদ আর ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করলে মানুষ কোথায় পৌঁছুতে পারে। বাড়ির সবাই বলছে বিপদজনক, সে বলছে ছাই। এসময় বিয়ে করা চলে না, পুরুষের দল তাকে যে সুখের সাগরে ভাসিয়ে রাখছে, একা কোনও পুরুষের দ্বারা সেই সুখ পাওয়া সম্ভব নয়। বিয়ে পরে হবেখন, আগে তো আরও কিছুদিন এভাবে কাটানো যাক। মেয়ের এই মনের খবর কোনোভাবে আঁচ করেছিলেন তার বাড়ির সবাই, সবার কানেই কিছু না কিছু ভেসে আসে।

অনেক বুঝিয়েও যখন সবাইকে হতাশ হতে হল, তখন তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া ভিন্ন অন্য কোন উপায় রইল না। তাড়াতাড়ি একটা কিছু করতে হবে, মেয়ের যা মতিগতি, তাতে কিছু উল্টোপাল্টা না করে বসে। বিয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান শুরু হল। অনেক আলোচনার পর সবাই একমত হল পাত্র পয়সাওয়ালা হোক না হোক, তাতে কিছু আসে যায় না, টাকাকড়ি মনিকাদের যথেষ্ট আছে। কিন্তু পাত্রকে হতে হবে শান্ত আর ধীরস্থির। সাত চড়ে রা করে না, এমন ছেলে চাই। নইলে মনিকার সাথে মানিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব।মনিকার একগুঁয়েমি আর জেদ কঠিন কঠোর লোকের হাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে, সে  বিয়ে না টেকার সম্ভাবনাই বেশি। এমন ছেলে চাই যে মনিকার মত উশৃঙ্খল মেয়ের সাথে চলতে পারবে মানিয়ে। গোবেচারা, মুখচোরা ছেলে। ছেলেকে টাকা পয়সায় ঢেকে দেওয়া যাবে। চেষ্টার ত্রুটি হল না। পাত্রের সন্ধানে লোক গেল দিকে দিকে। মনিকাকে যে দেখে সেই পছন্দ করে, তাদের দোষ দেওয়া যায় না কিছুতেই, মনিকার মত মেয়েকে অন্তত চোখের দেখায় পছন্দ না হলে ছেলের পৌরুষের দোষ আছে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু বাড়ির লোকের কিছুতেই পাত্র পছন্দ হয় না। তাদের আরও শান্ত আরও ধীরস্থির পাত্র চাই।

এভাবে কয়েক মাস কাটল, শেষে এক শরতের বিকেলে মনের মত পাত্র পাওয়া গেল। যেমনটি চাই ঠিক সে রকম,  অর্থাৎ, সত্যিসত্যিই ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না। মনিকার থেকে কিছু বড় বয়সে, কিন্তু সেটা বিয়েতে বাধা হবার কোন কারণ হতে পারে না, অন্তত এই বিয়েতে। ছেলে ব্যবসায়ী, কিন্তু ব্যবসায়ী হলেও সে মদ খায় না। সে তার পোশাক তৈরির ব্যবসা চালায়। তার জীবন চলে নির্দিষ্ট নিয়মে আর নির্দিষ্ট ছন্দে। মসৃণ তার জীবন। বিস্তর খোঁজ খবর নিয়েও ছেলে সম্পর্কে কোন ফিসফাস খবর বার করা গেল না।যদিও সে তার বাবা মাকে হারিয়েছে কিশোর বয়সে। মনিকার বাবা মা চোখ টিপলেন, এত সুখ সইবে তো মেয়ের কপালে? বিয়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগোতে লাগলো, পাছে কোন উটকো ঝামেলা এসে বাধার সৃষ্টি করে, সে আশঙ্কা ছিল। মনিকার ছেলে বন্ধুদের দলে সবাই মহান আর পবিত্র লোক, একথা হলফ করে বলা যায় না। এখন ভালোয় ভালোয় শুভ কাজ মিটে গেলেই হয়।

বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে মনিকা পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল, নাওয়া খাওয়ার সাথে প্রায় কোন সম্পর্ক রাখল না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে আশায় বুক বেঁধেছিল যদি কোন বিস্ময়কর ঘটনায় সব পাল্টে যায়। কিন্তু সে রকম কোন কিছুই ঘটলো না, প্রতিদিনকার জীবনে কোন রকমের হেরফের হল না, তার আশায় ছাই পড়ল। কয়েকবার আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এসেছিল। কিন্তু জীবন ভোগের অসীম তৃষ্ণা আর অপরিসীম কামনাবাসনা শেষ পর্যন্ত তাকে বিরত করল। মনে মনে নিজের কর্তব্য সে ঠিক করে ফেলল। সে ভেসে যাবে না। নিজের পথেই চলবে, দেখি আটকায় কে?

তারপর এক শীতের সন্ধ্যায়,  শুভক্ষণ কিনা জানি না,  মনিকার সাথে ঘনশ্যাম বাবুর মালাবদল হয়ে গেল। মনিকার যেসব গুণগ্রাহী ভক্তের দল শেষ পর্যন্ত মনিকার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত  তাদের জীবন লড়িয়ে দিয়েছিল, তারা এই বিয়েতে অভিশাপ দিতে দিতে ফিরে গেল।

সবাই ফিরে গেল, শুধুমাত্র রাজ ছাড়া।
[+] 1 user Likes @sagar's post
Like Reply


Messages In This Thread
আঁধারের শেষে - by @sagar - 29-02-2020, 09:41 AM
RE: আঁধারের শেষে - by @sagar - 02-03-2020, 11:25 PM
RE: আঁধারের শেষে - by pimon - 05-03-2020, 06:27 PM
RE: আঁধারের শেষে - by pimon - 07-03-2020, 01:18 AM
RE: আঁধারের শেষে - by pimon - 11-03-2020, 05:54 PM
RE: আঁধারের শেষে - by arn43 - 31-05-2023, 07:33 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)