09-03-2025, 10:52 PM
বেলা বাড়তে মা স্নানে গেছে। রান্নাঘরে ডালিয়া মাসির তোড়জোড় পড়েছে রান্নার। অংশু ঢুকলে মায়ের ঘরে। বিট্টু দেখালো মায়ের কিনে দেওয়া তার নতুন বই-খাতা, রঙ পেন্সিলের বাক্স। অংশুর লক্ষ্য পড়ল মায়ের ঘরের সংলগ্ন ঐ ঘরটির দিকে। বিছানায় পিঠ উল্টে শুয়ে রয়েছে দীর্ঘদেহী গফুর। পাশে লাট্টুও শুয়ে রয়েছে। অংশু জিজ্ঞেস করলে---রাতে তোরা ও'ঘরে শুলি কখন?
বিট্টু বললে---আমি আর ভাই তো এ' খাটে শুই। মা আর আব্বা ও খাটে। ভাই দুদু খেতে চায় রাতে বলে মা ও'কে শোয়ায় নিজের কাছে।
অংশুর মনে পড়ল একদিন মধ্যরাতে ঘুমঘোরে স্বপ্ন দেখে কেঁদে উঠেছিল লাট্টু। মা ওর ঘুমন্ত মুখে স্তন জেঁকে দুধ খাইয়ে ক্ষান্ত করেছিল। তাই বোধ হয় মা রাতে ও'কে নিজের কাছে শোয়ায়। অংশু পুনরায় লক্ষ্য করল মায়ের রাতের বিছানার দিকে। বিছানার চাদর ইতস্তত সরে গেছে। মায়ের ফেলে যাওয়া বালিশ এখনো সরানো হয়নি। মা যে রাতে গফুর আর লাট্টুর মাঝে শুয়েছিল পরিত্যাক্ত বালিশ দেখেই বোঝা যায়। দুটো বালিশ উঁচু করে রাখা খানিক, মা সাধারণত এত উঁচু করে বালিশ রেখে শোয় না। বাবাকে বরং অংশু দেখেছে কখনো কখনো উঁচু বালিশে শোয়। অথচ গফুরের বালিশ মায়ের চেয়ে নীচু।
গফুরের বালিশের পাশে একটা বিড়ির প্যাকেট আর দেশলাই বাক্স রাখা। দু একটা পোড়া কাঠি মেঝেতেই পড়ে রয়েছে। এক টুকরো পোড়া বিড়িরও হদিশ পেল অংশু। লোকটা রাতে ঘরের মধ্যেই বিড়ি খায়। লোকটার কোমর অবধি একটা চাদর দেওয়া। অংশুর যেন মনে হতে লাগলো লোকটা আসলেই নগ্ন। গোটা ঘরে তীব্র পুরুষালি ঘামের উৎকট গন্ধ।
মা স্নান সেরে বেরোলো। সাবান শ্যাম্পুর স্নিগ্ধ খোলা চুলের মাকে এসময় অপূর্ব লাগে। অংশু বললে---মা তুমি ফিরবে কখন?
ডালিয়া মাসি রান্নাঘরের টেবিলে গরম ভাত বেড়ে দিল মায়ের জন্য। মা ভাতে ডাল মাখতে মাখতে বললে---আজ দুপুরের আগেই ফিরে আসবো। শনিবার যে, এমনিতে ছাত্র-ছাত্রী কম, তার ওপর শনিবার নামমাত্র এটেন্ডেন্স ছাড়া কিছু হয় না।
অংশু একা গিয়ে দাঁড়ালে দীঘির কাছে। বড় শিরীষ আর আম গাছগুলোকে রাতের আঁধারে এক একটা দৈত্য মনে হচ্ছিল। শুধু আম নয় বেশ কয়েকটা নারকেল, জামরুল, খয়ের ও তেঁতুল গাছ নজরে এলো তার। আরো অনেক গাছ চিনতে পারলো না অংশু। দীঘির বাঁধাই ঘাটে ফাটল ধরেছে, সেখানেও নানা লতা-পাতার বাস। দুপুর বেলাও বড্ড ছমছমে জায়গাটা। অকস্মাৎ বিট্টু দৌড়ে এসে বললে---দাদা, সাপ সাপ..!
---কোথায়? চমকে উঠল অংশু। লাফিয়ে সরে এলো চার কদম।
বিট্টু বললে---ঘরে ঢুকেছে!
চমকে উঠল অংশু। বিট্টু ওকে টানতে টানতে নিয়ে এলে মায়ের ঘরের কাছে। তারপর কোমরে হাত দিয়ে বললে---এখানেই দেখলাম তো...
অংশু বিট্টুর কানটা টেনে ধরে বললে---বাঁদরামো হচ্ছে? আমাকে ভয় দেখানো?
---না না...সত্যি দাদা... এই..এইখানে ছিল।
বিট্টুর কথা যখনই ভ্রম বলে মনে করছিল সে তখনই লেজটা নজরে এলো তার। মায়ের ঘরের ভেতর যে ঘরে লাট্টু আর গফুর শুয়ে আছে, সে ঘরেই আলমারির তলা থেকে উঁকি দিচ্ছে লেজটা। অংশু ভালো করে দেখল বেশ বড় আর মোটা সাপটা। অমনি ভয় পেয়ে সে হাঁকডাক শুরু করল---মা..মা..শিগগীরি এসো। ঘরে সাপ ঢুকেছে।
এঁটো হাতে সুচি আর ডালিয়া দৌড়ে এলে কার্যত। ততক্ষণে আলমারির তলায় পূর্ন দেহটা লুকিয়েছে প্রাণীটা। অংশু আর বিট্টু দুজনেই উত্তেজিত হয়ে বললে---ঐ ঐ আলমারির তলায় আছে!
ডালিয়া বললে---বলেছিলাম না সুচি দি, এ বাড়িতে সাপের অভাব নেই! তেঁতুলে খরিশ বাস্তুসাপটা যখন তখন...
মা'ও ভয় পেয়েছে, তবে সকলকে শান্ত করে বলল---আঃ চুপ কর! একটা লাঠি আন দেখি।
ডালিয়া মাসি গেলে লাঠি আনতে। মা তক্ষুনি চেঁচামেচি করে ঠেলা দিয়ে ডাকতে লাগলো গফুরকে---কই গো? শুনছ? ওঠো ওঠো লক্ষ্মীটি?
বিরক্ত মুখে উঠে বসল গফুর। ওর কোমর অবধি জড়ানো বিছানা চাদরটা তৎক্ষনাৎ সরে যেতেই ন্যাংটো দেহকান্ড বার হয়ে এলো। কালো ময়লা উরু সন্ধির মাঝে ঝুলছে ন্যাতানো একটা পুরুষ্টু সাপ। নাঃ এ সেই আলমারির তলায় লুকানো সরীসৃপ প্রাণীটা নয়। এ সাপ অন্তত নয় সেমি লম্বা, বেশ স্ফীত, পুরুষ দেহের অহংকার। অংশুর চোখ এড়ালো না। কাল এই দানবটাকে সেই কয়েক ঝলকের জন্য মায়ের যোনিতে ধাক্কা মারতে দেখেছে। তখন যে বিশালত্ব ছিল সে ছিল দৃঢ়তায়, এখন শিথিল অবস্থাতেই টের পাওয়া যায় উত্তেজনায় এই সর্প কতখানি ভয়ানক হতে পারে। যা সর্বক্ষণের জন্য অংশুর মাকে দংশন করতে করতে বশীভূত করে ফেলেছে।
সুচি ঝট করে গফুরের লুঙ্গিটা আলনা হতে টেনে আনলে, বললে---পরে নাও, আলমারির তলায় সাপ ঢুকেছে!
নগ্ন গফুর অংশুর সামনেই লুঙ্গিটা জড়িয়ে নিল। সুচি একবার ছেলেকে দেখলে ইতস্তত ভাবে। ডালিয়া লাঠি নিয়ে এসে বলল---সুচি দি, এতে হবে?
গফুর সদ্য ঘুম ভাঙা ভারিক্কি গম্ভীর গলায় বললে---কোথায়?
বিট্টু বললে---আব্বা...আলমারির তলে..
বিট্টুকে আলমারির কাছ থেকে সরিয়ে দিলে গফুর। তারপর ডালিয়ার হাত থেকে লাঠিটা নিয়ে ঝুঁকে পড়লে আলমারির তলায়। খোঁচা মেরে টেনে আনলে খানিক বাইরে। লেজটা বার হতেই হলদে দাঁত বের করে হেসে উঠল গফুর, টেনে আনলো সাপটাকে লেজ ধরে। ডালিয়াকে দেখে বললে---গেরামের মেয়ে হয়ে সাপ চিনিস না?
ডালিয়া মাসি তখনই মুখ ঝামটা দিয়ে বললে---আমি কি সাপটাকে দেখেছি নাকি?
মা বললে---এ বাবা! এ তো বিশাল। তুমি ধরে রেখেছ কেন...ছাড়ো ছাড়ো...ও মাগো...কামড় দেবে যে?
গফুর মায়ের দিকে সাপটাকে নিয়ে গিয়ে নিছক ভয় পাওয়াতেই মা সরে গেল দু' পা। গফুর বললে---ঢেমনা সাপে ভয় পাস কেন? ইঁদুর খেতে ঢুকেছে....
অংশুও বুঝলে তার এতটা ভয় পাওয়া ঠিক হয়নি না দেখে। বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত হলে সে সাহস করে লেজ ধরে এমন টেনে বের করে। ঢেমনা সাপ বিষধর নয়। বেশ ছটফটে হলেও নির্বিষ নিরীহ উপকারী সাপ। ইঁদুর খেয়ে ফসল বাঁচায়। গফুর অংশুকে দেখে বললে---দেখলি বাবু? তোর মা ভয় পেয়ে গেল কেমন? গেরামে এসেছিস জেনে রাখ, এ সাপের কোনো বিষ নেই।
অংশু বললে---হুম্ম। একে দাঁড়াশও বলে। ইংরেজিতে Rat snake।
গফুর হেসে বললে---ঠিক। তোর এই ছোট দুটো ভাইকে একটু ইংরেজীর তালিম দিয়ে দিস তো।
মা তখনও ভয় পেয়েছে। বললে---বাব্বা কি বিশাল! দেখলে গা শিরশির করে..
গফুর অশালীন ভাবে কোমর নাড়িয়ে বললে---কেন রে মাগী? রোজ যে আমার বড় সাপটাকে তোর গর্তে নিস...সেটায় গা কেমন হয় তোর?
সুচিত্রার চোখে মুখে বড্ড লজ্জা দেখা দিল। লাজুক লাল মুখে চোখ বড় বড় করে অংশুর উপস্থিতি বোঝালো গফুরকে। গফুর সাপটাকে নিয়ে চলে গেল অনেক দূরে। ছেড়ে এসে বললে---বাবু, তোর একটা মাসি ছিল জানিস, তোর মায়ের মত পড়ালেখায় ভালো না হলেও ভীতু ছিল না। সেই মাসি কিন্তু এসব সাপে ডর তো না।
অংশু বুঝতে পারছে গফুর ঝুমুর মাসির কথা বলছে। ডালিয়া বললে-- সিনু? সে তো আরও ভীতু, সুচি দি অনেক সাহসী।
গফুর দাঁত কেলিয়ে ব্যাঙ্গ করে ডালিয়ার দিকে মুখ করলে। বললে--- তুই তখন মালতী পিসির দুদু খেতিস, সে দাঁত তোর এখনো পড়েনি রে ডালি। আমি তোর মায়ের পেটের দিদির কথা বলছি।
অংশু লক্ষ্য করলে মা কথা এড়াতে বললে---হোক। আর ঘুমোতে হবে না। চা খাবে? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
গফুর লুঙ্গির কোঁচটা ভালো করে বাঁধতে বাঁধতে বললে---সে তো ঘুম চটকে দিলি মাগী। ছোটটাকে ঘুম থেকে তুলেছিস?
মা চলে গেল ঘরের ভেতর। অংশুর কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বলল গফুর---কদিন থাকবি? সাঁতার জানিস?
---না। ছোট্ট করে উত্তর দিল অংশুমান।
গফুর কি একটা ভাবলো, বলল---দাঁড়া দীঘিটা পরিষ্কার করি। যে ক'দিন থাকবি সাঁতার শিখিয়ে দেব। শহরের ছেলে বলে কি সাঁতার শিখবি না? বাগচী বাড়ির ওয়ারিশ তো তুই, এ বাড়ি তো তোরই...সব কিছু জেনে নিতে হবে না?
অংশু খানিক স্তম্ভিত হল। গফুর লোকটা কিন্তু অংশুর সাথে একবিন্দু খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং বেশ ভালোই আচরণ করল। বিট্টু বললে---দাদা, তুমি ঘুড়ি ওড়াতে পারো?
---না।
---আব্বা জানে। শিখিয়ে দেবে বলেছে।
রান্নাঘরে চা বসেছে। ডালিয়া মাসি চা নিয়ে গেল মায়ের ঘরে। মায়ের ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। মাসি বললে---সুচি দি, চা।
অংশু শুনতে পেলে মায়ের গলা---তুই রান্না ঘরে রেখে দে। তোর গফুর দা এখন চা খাবে না।
বিরক্ত মুখে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ডালিয়া মাসি। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো---নাঙকে ম্যানা খাওয়াবি যদি আমাকে চা করতে বললি কেন?
বিট্টু বললে---আমি আর ভাই তো এ' খাটে শুই। মা আর আব্বা ও খাটে। ভাই দুদু খেতে চায় রাতে বলে মা ও'কে শোয়ায় নিজের কাছে।
অংশুর মনে পড়ল একদিন মধ্যরাতে ঘুমঘোরে স্বপ্ন দেখে কেঁদে উঠেছিল লাট্টু। মা ওর ঘুমন্ত মুখে স্তন জেঁকে দুধ খাইয়ে ক্ষান্ত করেছিল। তাই বোধ হয় মা রাতে ও'কে নিজের কাছে শোয়ায়। অংশু পুনরায় লক্ষ্য করল মায়ের রাতের বিছানার দিকে। বিছানার চাদর ইতস্তত সরে গেছে। মায়ের ফেলে যাওয়া বালিশ এখনো সরানো হয়নি। মা যে রাতে গফুর আর লাট্টুর মাঝে শুয়েছিল পরিত্যাক্ত বালিশ দেখেই বোঝা যায়। দুটো বালিশ উঁচু করে রাখা খানিক, মা সাধারণত এত উঁচু করে বালিশ রেখে শোয় না। বাবাকে বরং অংশু দেখেছে কখনো কখনো উঁচু বালিশে শোয়। অথচ গফুরের বালিশ মায়ের চেয়ে নীচু।
গফুরের বালিশের পাশে একটা বিড়ির প্যাকেট আর দেশলাই বাক্স রাখা। দু একটা পোড়া কাঠি মেঝেতেই পড়ে রয়েছে। এক টুকরো পোড়া বিড়িরও হদিশ পেল অংশু। লোকটা রাতে ঘরের মধ্যেই বিড়ি খায়। লোকটার কোমর অবধি একটা চাদর দেওয়া। অংশুর যেন মনে হতে লাগলো লোকটা আসলেই নগ্ন। গোটা ঘরে তীব্র পুরুষালি ঘামের উৎকট গন্ধ।
মা স্নান সেরে বেরোলো। সাবান শ্যাম্পুর স্নিগ্ধ খোলা চুলের মাকে এসময় অপূর্ব লাগে। অংশু বললে---মা তুমি ফিরবে কখন?
ডালিয়া মাসি রান্নাঘরের টেবিলে গরম ভাত বেড়ে দিল মায়ের জন্য। মা ভাতে ডাল মাখতে মাখতে বললে---আজ দুপুরের আগেই ফিরে আসবো। শনিবার যে, এমনিতে ছাত্র-ছাত্রী কম, তার ওপর শনিবার নামমাত্র এটেন্ডেন্স ছাড়া কিছু হয় না।
অংশু একা গিয়ে দাঁড়ালে দীঘির কাছে। বড় শিরীষ আর আম গাছগুলোকে রাতের আঁধারে এক একটা দৈত্য মনে হচ্ছিল। শুধু আম নয় বেশ কয়েকটা নারকেল, জামরুল, খয়ের ও তেঁতুল গাছ নজরে এলো তার। আরো অনেক গাছ চিনতে পারলো না অংশু। দীঘির বাঁধাই ঘাটে ফাটল ধরেছে, সেখানেও নানা লতা-পাতার বাস। দুপুর বেলাও বড্ড ছমছমে জায়গাটা। অকস্মাৎ বিট্টু দৌড়ে এসে বললে---দাদা, সাপ সাপ..!
---কোথায়? চমকে উঠল অংশু। লাফিয়ে সরে এলো চার কদম।
বিট্টু বললে---ঘরে ঢুকেছে!
চমকে উঠল অংশু। বিট্টু ওকে টানতে টানতে নিয়ে এলে মায়ের ঘরের কাছে। তারপর কোমরে হাত দিয়ে বললে---এখানেই দেখলাম তো...
অংশু বিট্টুর কানটা টেনে ধরে বললে---বাঁদরামো হচ্ছে? আমাকে ভয় দেখানো?
---না না...সত্যি দাদা... এই..এইখানে ছিল।
বিট্টুর কথা যখনই ভ্রম বলে মনে করছিল সে তখনই লেজটা নজরে এলো তার। মায়ের ঘরের ভেতর যে ঘরে লাট্টু আর গফুর শুয়ে আছে, সে ঘরেই আলমারির তলা থেকে উঁকি দিচ্ছে লেজটা। অংশু ভালো করে দেখল বেশ বড় আর মোটা সাপটা। অমনি ভয় পেয়ে সে হাঁকডাক শুরু করল---মা..মা..শিগগীরি এসো। ঘরে সাপ ঢুকেছে।
এঁটো হাতে সুচি আর ডালিয়া দৌড়ে এলে কার্যত। ততক্ষণে আলমারির তলায় পূর্ন দেহটা লুকিয়েছে প্রাণীটা। অংশু আর বিট্টু দুজনেই উত্তেজিত হয়ে বললে---ঐ ঐ আলমারির তলায় আছে!
ডালিয়া বললে---বলেছিলাম না সুচি দি, এ বাড়িতে সাপের অভাব নেই! তেঁতুলে খরিশ বাস্তুসাপটা যখন তখন...
মা'ও ভয় পেয়েছে, তবে সকলকে শান্ত করে বলল---আঃ চুপ কর! একটা লাঠি আন দেখি।
ডালিয়া মাসি গেলে লাঠি আনতে। মা তক্ষুনি চেঁচামেচি করে ঠেলা দিয়ে ডাকতে লাগলো গফুরকে---কই গো? শুনছ? ওঠো ওঠো লক্ষ্মীটি?
বিরক্ত মুখে উঠে বসল গফুর। ওর কোমর অবধি জড়ানো বিছানা চাদরটা তৎক্ষনাৎ সরে যেতেই ন্যাংটো দেহকান্ড বার হয়ে এলো। কালো ময়লা উরু সন্ধির মাঝে ঝুলছে ন্যাতানো একটা পুরুষ্টু সাপ। নাঃ এ সেই আলমারির তলায় লুকানো সরীসৃপ প্রাণীটা নয়। এ সাপ অন্তত নয় সেমি লম্বা, বেশ স্ফীত, পুরুষ দেহের অহংকার। অংশুর চোখ এড়ালো না। কাল এই দানবটাকে সেই কয়েক ঝলকের জন্য মায়ের যোনিতে ধাক্কা মারতে দেখেছে। তখন যে বিশালত্ব ছিল সে ছিল দৃঢ়তায়, এখন শিথিল অবস্থাতেই টের পাওয়া যায় উত্তেজনায় এই সর্প কতখানি ভয়ানক হতে পারে। যা সর্বক্ষণের জন্য অংশুর মাকে দংশন করতে করতে বশীভূত করে ফেলেছে।
সুচি ঝট করে গফুরের লুঙ্গিটা আলনা হতে টেনে আনলে, বললে---পরে নাও, আলমারির তলায় সাপ ঢুকেছে!
নগ্ন গফুর অংশুর সামনেই লুঙ্গিটা জড়িয়ে নিল। সুচি একবার ছেলেকে দেখলে ইতস্তত ভাবে। ডালিয়া লাঠি নিয়ে এসে বলল---সুচি দি, এতে হবে?
গফুর সদ্য ঘুম ভাঙা ভারিক্কি গম্ভীর গলায় বললে---কোথায়?
বিট্টু বললে---আব্বা...আলমারির তলে..
বিট্টুকে আলমারির কাছ থেকে সরিয়ে দিলে গফুর। তারপর ডালিয়ার হাত থেকে লাঠিটা নিয়ে ঝুঁকে পড়লে আলমারির তলায়। খোঁচা মেরে টেনে আনলে খানিক বাইরে। লেজটা বার হতেই হলদে দাঁত বের করে হেসে উঠল গফুর, টেনে আনলো সাপটাকে লেজ ধরে। ডালিয়াকে দেখে বললে---গেরামের মেয়ে হয়ে সাপ চিনিস না?
ডালিয়া মাসি তখনই মুখ ঝামটা দিয়ে বললে---আমি কি সাপটাকে দেখেছি নাকি?
মা বললে---এ বাবা! এ তো বিশাল। তুমি ধরে রেখেছ কেন...ছাড়ো ছাড়ো...ও মাগো...কামড় দেবে যে?
গফুর মায়ের দিকে সাপটাকে নিয়ে গিয়ে নিছক ভয় পাওয়াতেই মা সরে গেল দু' পা। গফুর বললে---ঢেমনা সাপে ভয় পাস কেন? ইঁদুর খেতে ঢুকেছে....
অংশুও বুঝলে তার এতটা ভয় পাওয়া ঠিক হয়নি না দেখে। বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত হলে সে সাহস করে লেজ ধরে এমন টেনে বের করে। ঢেমনা সাপ বিষধর নয়। বেশ ছটফটে হলেও নির্বিষ নিরীহ উপকারী সাপ। ইঁদুর খেয়ে ফসল বাঁচায়। গফুর অংশুকে দেখে বললে---দেখলি বাবু? তোর মা ভয় পেয়ে গেল কেমন? গেরামে এসেছিস জেনে রাখ, এ সাপের কোনো বিষ নেই।
অংশু বললে---হুম্ম। একে দাঁড়াশও বলে। ইংরেজিতে Rat snake।
গফুর হেসে বললে---ঠিক। তোর এই ছোট দুটো ভাইকে একটু ইংরেজীর তালিম দিয়ে দিস তো।
মা তখনও ভয় পেয়েছে। বললে---বাব্বা কি বিশাল! দেখলে গা শিরশির করে..
গফুর অশালীন ভাবে কোমর নাড়িয়ে বললে---কেন রে মাগী? রোজ যে আমার বড় সাপটাকে তোর গর্তে নিস...সেটায় গা কেমন হয় তোর?
সুচিত্রার চোখে মুখে বড্ড লজ্জা দেখা দিল। লাজুক লাল মুখে চোখ বড় বড় করে অংশুর উপস্থিতি বোঝালো গফুরকে। গফুর সাপটাকে নিয়ে চলে গেল অনেক দূরে। ছেড়ে এসে বললে---বাবু, তোর একটা মাসি ছিল জানিস, তোর মায়ের মত পড়ালেখায় ভালো না হলেও ভীতু ছিল না। সেই মাসি কিন্তু এসব সাপে ডর তো না।
অংশু বুঝতে পারছে গফুর ঝুমুর মাসির কথা বলছে। ডালিয়া বললে-- সিনু? সে তো আরও ভীতু, সুচি দি অনেক সাহসী।
গফুর দাঁত কেলিয়ে ব্যাঙ্গ করে ডালিয়ার দিকে মুখ করলে। বললে--- তুই তখন মালতী পিসির দুদু খেতিস, সে দাঁত তোর এখনো পড়েনি রে ডালি। আমি তোর মায়ের পেটের দিদির কথা বলছি।
অংশু লক্ষ্য করলে মা কথা এড়াতে বললে---হোক। আর ঘুমোতে হবে না। চা খাবে? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
গফুর লুঙ্গির কোঁচটা ভালো করে বাঁধতে বাঁধতে বললে---সে তো ঘুম চটকে দিলি মাগী। ছোটটাকে ঘুম থেকে তুলেছিস?
মা চলে গেল ঘরের ভেতর। অংশুর কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বলল গফুর---কদিন থাকবি? সাঁতার জানিস?
---না। ছোট্ট করে উত্তর দিল অংশুমান।
গফুর কি একটা ভাবলো, বলল---দাঁড়া দীঘিটা পরিষ্কার করি। যে ক'দিন থাকবি সাঁতার শিখিয়ে দেব। শহরের ছেলে বলে কি সাঁতার শিখবি না? বাগচী বাড়ির ওয়ারিশ তো তুই, এ বাড়ি তো তোরই...সব কিছু জেনে নিতে হবে না?
অংশু খানিক স্তম্ভিত হল। গফুর লোকটা কিন্তু অংশুর সাথে একবিন্দু খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং বেশ ভালোই আচরণ করল। বিট্টু বললে---দাদা, তুমি ঘুড়ি ওড়াতে পারো?
---না।
---আব্বা জানে। শিখিয়ে দেবে বলেছে।
রান্নাঘরে চা বসেছে। ডালিয়া মাসি চা নিয়ে গেল মায়ের ঘরে। মায়ের ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। মাসি বললে---সুচি দি, চা।
অংশু শুনতে পেলে মায়ের গলা---তুই রান্না ঘরে রেখে দে। তোর গফুর দা এখন চা খাবে না।
বিরক্ত মুখে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ডালিয়া মাসি। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো---নাঙকে ম্যানা খাওয়াবি যদি আমাকে চা করতে বললি কেন?