25-10-2024, 11:13 PM
পর্ব: ১৪
রিজেন্ট প্লেসের তিনতলায় ফ্ল্যাটটা অনলের। অনল জয়ন্তের বন্ধু। ওর স্ত্রী তিস্তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। অনেকদিন পর আজ অনল এসেছে দেখা করতে জয়ন্তের সাথে। ইতিমধ্যে অনল বেশ পাতলা হয়ে গেছে। মাথার যেটুকু চুল ছিল উঠে গিয়ে টাঁকটা শুধু রয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ে ওর পিউরই বয়সী। সেও থাকে তার মায়ের কাছে। অনলের হাত-পা ছাড়া, একাকী মানুষ।
অনল এক প্রকার জোর করেই আনলো জয়ন্তকে ওর ফ্ল্যাটে। বর্তমানে দিল্লিতে চাকরিরত অনল। একটি বহুজাতিক সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার সে। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। কোথাও একটা থিতু হবার উপায় নেই। কলকাতার ফ্ল্যাটটা পড়ে পড়ে অগোছালো হয়ে রয়েছে। ওটা সে বিক্রি করে দিতে চায়।
জয়ন্ত ঘুরে দেখল অনলের থ্রিবিএইচকে ফ্ল্যাটটা মন্দ নয়। বেশ সৌখিন করে সাজানো। অনল বললে---জয়ন্ত, যদি চাস এই ফ্ল্যাটটা তুই'ই কিনে নে। টাকা-পয়সা তো অনেক করলি। এটা তোর অ্যাসেট হয়েই থেকে যাবে। পরে বিক্রি করতে চাইলেও চড়া দাম পাবি।
জয়ন্ত হাসলো। প্রস্তাব মন্দ নয়। কিন্তু কলকাতায় তাদের অতবড় বাড়িতে তিনটি মাত্র মানুষ এখন। আর সুচির আশ্রয়ে দুটি শিশু এসে জুটেছে যা। তাও সুচির ট্রান্সফার হলে পরে বাপ-ছেলে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা। বাড়তি ফ্ল্যাট নেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তার মনে হল না।
অনলের আলমারি জুড়ে দামি মদের বোতল সাজানো। স্কচ, হুইস্কি, বিদেশি ওয়াইনের বোতল। জয়ন্ত মদ ছোঁয় না। ডাক্তার বলে নয়, চিরকালই সে এ' জিনিস থেকে দূরে থেকেছে। অনল জয়ন্তের এই গুনাগুন জানে। ও'কে ঐ মদের বোতলগুলির সুসজ্জিত থাকে চেয়ে থাকতে দেখে বললে---জয়ন্ত, এখনো কি তুই নিরামিষ নাকি?
জয়ন্ত হাসলো। বলল---এই একটা জিনিসে কোনদিন আগ্রহ পেলাম না রে। তবে তোর ফ্ল্যাটটা মন্দ নয়। ক্রেতা পেলি?
---এখনো তেমন নয়। আসলে দামটা পাচ্ছি না। যাইহোক সুচি বৌদিকে এড়িয়ে ফুর্তিটুর্তি করতে চাইলে চলে আসিস। চাবিটা যদি চাস, দিল্লি যাবার আগে তোকে দিয়ে যাবো।
চোখ টিপে হাসলো অনল। জয়ন্তের অবশ্য তৎক্ষনাৎ মিতার কথা মনে এলো। বড্ড নিরাপদ এই ফ্ল্যাট বাড়ি। নিভৃতে মিতার সাথে কাটানো যায়। কেউ ডিস্টার্ব করবার নেই।
অনলের অবশ্য একাধিক মহিলা ঘনিষ্ঠতা আছে। ওর স্ত্রী তিস্তার ওকে ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটিই। এই টাকামাথা নিয়ে কি করে যে এখনো মেয়েদের পটায় কে জানে! মনে মনে হাসলো জয়ন্ত।
---তোদের সেপারেশনের ফয়সালা কদ্দুর? জিজ্ঞেস করল জয়ন্ত।
কফি মগে কফি ঢালতে ঢালতে অনল বললে---সেপারেশনেই তো আছি। ডিভোর্সটা পাচ্ছি না। বড্ড সমস্যায় আছি।
---প্রবলেমটা কি? ভালো উকিল ধরেছিস?
---প্রবলেম কিছু না। তিস্তা একটা অন্য লোকের সাথে লিভ ইনে আছে। কিন্তু মুশকিল ও' তারপরেও খোরপোষ দাবী করছে। যদি লিভ ইনেই অপরের সাথে থাকবি, তাহলে খোরপোষ দেব কেন?
জয়ন্ত হাসলো। বললে---কিসের অভাব তোর? খোরপোষ দিয়ে দে।
---কেন দেব? ও'র নাগর আছে। নাগরের সাথে ফুর্তি করছে। আমি কেন পুষব ওকে। আমি তো ডিভোর্স চাইনি।
জয়ন্ত কফিতে চুমুক দিয়ে বললে---বা রে তুই ফুর্তি করবি নানা মেয়েদের সাথে, তিস্তা করলে দোষ!
অনল বললে---তুই কি ওপেন রিলেশনশিপের কথা বলছিস? (হাসলো অনল)। বিদেশে অবশ্য আকছার হয়। বৈদিক মন্ত্র পড়ে বিয়ে করেছি, সেই বউ কিনা অন্য লোকের সাথে শোবে, আমি মেনে নেব না। আর পুরুষ মানুষের পৌরুষ থাকলে কত মেয়েছেলে আসবে। এ' এমনকি। তিস্তাকে কি কোনোদিন অভাবে রেখেছিলাম। ও' একটা ল' ফার্ম খুলতে চাইলো, নিজে পয়সা দিয়ে খুলে দিলাম। এখন আমাকেই কাঁচকলা দেখাচ্ছে।
---তুই বড্ড পিতৃতান্ত্রিক কথা বলছিস অনল। একটা দাম্পত্য সম্পর্কে উভয়কেই ফেইথফুল থাকতে হয়। তুই যদি একাধিক নারী নিয়ে ফুর্তি না করতিস, তবে তিস্তা তোকে নিশ্চই ছাড়ত না।
মৃদু হাসলো অনল। সিগারেট ধরিয়ে বললে---তুই বামুনের ছেলে। ধর্ম মতে তোর বাবা তোর বিয়ে দিয়েছে। তুই যদি আমার জায়গায় থাকতিস পারতিস? জয়ন্ত, ইউরোপের বহু দেশ আমি ঘুরলাম, ওরা পারে। আমরা এদেশের মানুষ, এখনো অতটা মডার্ন হতে পারিনি।
অদ্ভুত এক ধন্দে পড়ল জয়ন্ত। সে নিজেও তো বিশ্বাসীভঙ্গকারী। সুচির বিশ্বাস প্রতিদিন ভাঙছে। অনল যা করেছে সেও তো সেই অপরাধে অপরাধী। অনল না হয় বহু নারী আসক্ত। কিন্ত সে নিজেও তো মিতার সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত। এই তো খানিক আগেও সে ভাবছিল এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে মিতার সাথে নিভৃতে সময় কাটানোর কথা।
হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলো সে। তার ধন্দময় ভাবনার মাঝে অনল বললে---কি হল, কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
জয়ন্তের হুঁশ ফিরল। কফি মগে চুমুক দিয়ে পুরোটা শেষ করল সে এক ধাক্কায়। আর এক মুহূর্ত তার ভালো লাগছে না। নিজের পাপবোধে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। হাসপাতালের কাজের অফ টাইমেই সে এসেছে অনলের সাথে। নিজের গাড়ি ওখানেই রাখা। অনলেরই গাড়িতেই এসেছে সে। বললে---চল রে। উঠতে হবে। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। চারটেতে একটা ও.টি আছে।
অনল বললে---এই তো এলি। আরেকটু না হয় গল্প করি। কাল তো চলে যাচ্ছি দিল্লি। ওখান থেকে মাস খানেকের মধ্যে আমস্টারডাম। পাকপাকিভাবে তারপর ওখানেই কাটাবো। কাটাবো মানে কোম্পানির কাজে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতে হবে বার্লিন, ওয়ারাশ, প্রাগ, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, লিসবন, মাদ্রিদ, বার্সিলোনা, রোম, আঙ্কারা এসব শহরে। থিতু হবার জো আমার নেই। কোনোদিন ইউরোপ এলে যোগাযোগ করিস। স্বর্ণকেশী পশ্চিমী মেয়েগুলোর থেকে কালো চুলের ইহুদি মেয়েগুলো দেখে দেখে চোখ ভরে যায়। যা হোক, ওরা কিন্তু হেব্বি সেক্সি। ইহুদি মেয়েগুলোর অবশ্য ধর্ম নিয়ে একটা রক্ষণশীলতা আছে।
'সেক্সি' বললেই যেন জয়ন্তের চোখে এখন কেমন একটি ছবি ভাসে। মিতার চর্বিযুক্ত পাকা গমের মত রঙা ভাঁজ পড়া পেট আর তার ওপর ঠাসা দুটি বড় বড় উদ্ধত স্তন। যেন তেলরঙে আঁকা হেমেন মজুমদারের কোনো ছবি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে সে। আর তক্ষুনি মনে পড়ল মোবাইল ফোনটায় মেসেজ ঢুকেছে মিতার। এর মাঝে তা দেখার অবকাশ পায়নি।
লিফটের মধ্যে পাশাপাশি দুজন দাঁড়িয়ে আছে। ডাঃ জয়ন্ত দাশগুপ্ত সমস্ত পরিশীলতা ভেঙে তাকালো অনলের দিকে। অনলের মুখে মুচকি হাসি। জয়ন্ত লাজ ভেঙে বললে---চাবিটা আমাকে দিয়ে যেতে পারিস।
---সে কথা আগেই বুঝেছি। পঞ্চাশ ছুঁই ডাক্তারবাবুর মোবাইলে এত ঘনঘন মেসেজ ঢোকে কেন। আর সেই মেসেজ দেখতে এতই বা আড়ষ্টতা কেন। নিশ্চিত বউ বা কোনো পেশেন্ট পার্টির নয়। তখনই বুঝেছি তুই ব্যাটা জয়ন্ত, চিরকালই ছুপা রুস্তম থেকে গেলি।
দুজনের মুখে সম অপরাধপ্রবণতার হাসি। অনল পুনরায় বললে---আর যা করিস, সামলে। আমার মত বউয়ের কাছে ধরা খাস না।
***
রিজেন্ট প্লেসের তিনতলায় ফ্ল্যাটটা অনলের। অনল জয়ন্তের বন্ধু। ওর স্ত্রী তিস্তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। অনেকদিন পর আজ অনল এসেছে দেখা করতে জয়ন্তের সাথে। ইতিমধ্যে অনল বেশ পাতলা হয়ে গেছে। মাথার যেটুকু চুল ছিল উঠে গিয়ে টাঁকটা শুধু রয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ে ওর পিউরই বয়সী। সেও থাকে তার মায়ের কাছে। অনলের হাত-পা ছাড়া, একাকী মানুষ।
অনল এক প্রকার জোর করেই আনলো জয়ন্তকে ওর ফ্ল্যাটে। বর্তমানে দিল্লিতে চাকরিরত অনল। একটি বহুজাতিক সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার সে। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। কোথাও একটা থিতু হবার উপায় নেই। কলকাতার ফ্ল্যাটটা পড়ে পড়ে অগোছালো হয়ে রয়েছে। ওটা সে বিক্রি করে দিতে চায়।
জয়ন্ত ঘুরে দেখল অনলের থ্রিবিএইচকে ফ্ল্যাটটা মন্দ নয়। বেশ সৌখিন করে সাজানো। অনল বললে---জয়ন্ত, যদি চাস এই ফ্ল্যাটটা তুই'ই কিনে নে। টাকা-পয়সা তো অনেক করলি। এটা তোর অ্যাসেট হয়েই থেকে যাবে। পরে বিক্রি করতে চাইলেও চড়া দাম পাবি।
জয়ন্ত হাসলো। প্রস্তাব মন্দ নয়। কিন্তু কলকাতায় তাদের অতবড় বাড়িতে তিনটি মাত্র মানুষ এখন। আর সুচির আশ্রয়ে দুটি শিশু এসে জুটেছে যা। তাও সুচির ট্রান্সফার হলে পরে বাপ-ছেলে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা। বাড়তি ফ্ল্যাট নেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তার মনে হল না।
অনলের আলমারি জুড়ে দামি মদের বোতল সাজানো। স্কচ, হুইস্কি, বিদেশি ওয়াইনের বোতল। জয়ন্ত মদ ছোঁয় না। ডাক্তার বলে নয়, চিরকালই সে এ' জিনিস থেকে দূরে থেকেছে। অনল জয়ন্তের এই গুনাগুন জানে। ও'কে ঐ মদের বোতলগুলির সুসজ্জিত থাকে চেয়ে থাকতে দেখে বললে---জয়ন্ত, এখনো কি তুই নিরামিষ নাকি?
জয়ন্ত হাসলো। বলল---এই একটা জিনিসে কোনদিন আগ্রহ পেলাম না রে। তবে তোর ফ্ল্যাটটা মন্দ নয়। ক্রেতা পেলি?
---এখনো তেমন নয়। আসলে দামটা পাচ্ছি না। যাইহোক সুচি বৌদিকে এড়িয়ে ফুর্তিটুর্তি করতে চাইলে চলে আসিস। চাবিটা যদি চাস, দিল্লি যাবার আগে তোকে দিয়ে যাবো।
চোখ টিপে হাসলো অনল। জয়ন্তের অবশ্য তৎক্ষনাৎ মিতার কথা মনে এলো। বড্ড নিরাপদ এই ফ্ল্যাট বাড়ি। নিভৃতে মিতার সাথে কাটানো যায়। কেউ ডিস্টার্ব করবার নেই।
অনলের অবশ্য একাধিক মহিলা ঘনিষ্ঠতা আছে। ওর স্ত্রী তিস্তার ওকে ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটিই। এই টাকামাথা নিয়ে কি করে যে এখনো মেয়েদের পটায় কে জানে! মনে মনে হাসলো জয়ন্ত।
---তোদের সেপারেশনের ফয়সালা কদ্দুর? জিজ্ঞেস করল জয়ন্ত।
কফি মগে কফি ঢালতে ঢালতে অনল বললে---সেপারেশনেই তো আছি। ডিভোর্সটা পাচ্ছি না। বড্ড সমস্যায় আছি।
---প্রবলেমটা কি? ভালো উকিল ধরেছিস?
---প্রবলেম কিছু না। তিস্তা একটা অন্য লোকের সাথে লিভ ইনে আছে। কিন্তু মুশকিল ও' তারপরেও খোরপোষ দাবী করছে। যদি লিভ ইনেই অপরের সাথে থাকবি, তাহলে খোরপোষ দেব কেন?
জয়ন্ত হাসলো। বললে---কিসের অভাব তোর? খোরপোষ দিয়ে দে।
---কেন দেব? ও'র নাগর আছে। নাগরের সাথে ফুর্তি করছে। আমি কেন পুষব ওকে। আমি তো ডিভোর্স চাইনি।
জয়ন্ত কফিতে চুমুক দিয়ে বললে---বা রে তুই ফুর্তি করবি নানা মেয়েদের সাথে, তিস্তা করলে দোষ!
অনল বললে---তুই কি ওপেন রিলেশনশিপের কথা বলছিস? (হাসলো অনল)। বিদেশে অবশ্য আকছার হয়। বৈদিক মন্ত্র পড়ে বিয়ে করেছি, সেই বউ কিনা অন্য লোকের সাথে শোবে, আমি মেনে নেব না। আর পুরুষ মানুষের পৌরুষ থাকলে কত মেয়েছেলে আসবে। এ' এমনকি। তিস্তাকে কি কোনোদিন অভাবে রেখেছিলাম। ও' একটা ল' ফার্ম খুলতে চাইলো, নিজে পয়সা দিয়ে খুলে দিলাম। এখন আমাকেই কাঁচকলা দেখাচ্ছে।
---তুই বড্ড পিতৃতান্ত্রিক কথা বলছিস অনল। একটা দাম্পত্য সম্পর্কে উভয়কেই ফেইথফুল থাকতে হয়। তুই যদি একাধিক নারী নিয়ে ফুর্তি না করতিস, তবে তিস্তা তোকে নিশ্চই ছাড়ত না।
মৃদু হাসলো অনল। সিগারেট ধরিয়ে বললে---তুই বামুনের ছেলে। ধর্ম মতে তোর বাবা তোর বিয়ে দিয়েছে। তুই যদি আমার জায়গায় থাকতিস পারতিস? জয়ন্ত, ইউরোপের বহু দেশ আমি ঘুরলাম, ওরা পারে। আমরা এদেশের মানুষ, এখনো অতটা মডার্ন হতে পারিনি।
অদ্ভুত এক ধন্দে পড়ল জয়ন্ত। সে নিজেও তো বিশ্বাসীভঙ্গকারী। সুচির বিশ্বাস প্রতিদিন ভাঙছে। অনল যা করেছে সেও তো সেই অপরাধে অপরাধী। অনল না হয় বহু নারী আসক্ত। কিন্ত সে নিজেও তো মিতার সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত। এই তো খানিক আগেও সে ভাবছিল এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে মিতার সাথে নিভৃতে সময় কাটানোর কথা।
হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলো সে। তার ধন্দময় ভাবনার মাঝে অনল বললে---কি হল, কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
জয়ন্তের হুঁশ ফিরল। কফি মগে চুমুক দিয়ে পুরোটা শেষ করল সে এক ধাক্কায়। আর এক মুহূর্ত তার ভালো লাগছে না। নিজের পাপবোধে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। হাসপাতালের কাজের অফ টাইমেই সে এসেছে অনলের সাথে। নিজের গাড়ি ওখানেই রাখা। অনলেরই গাড়িতেই এসেছে সে। বললে---চল রে। উঠতে হবে। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। চারটেতে একটা ও.টি আছে।
অনল বললে---এই তো এলি। আরেকটু না হয় গল্প করি। কাল তো চলে যাচ্ছি দিল্লি। ওখান থেকে মাস খানেকের মধ্যে আমস্টারডাম। পাকপাকিভাবে তারপর ওখানেই কাটাবো। কাটাবো মানে কোম্পানির কাজে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতে হবে বার্লিন, ওয়ারাশ, প্রাগ, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, লিসবন, মাদ্রিদ, বার্সিলোনা, রোম, আঙ্কারা এসব শহরে। থিতু হবার জো আমার নেই। কোনোদিন ইউরোপ এলে যোগাযোগ করিস। স্বর্ণকেশী পশ্চিমী মেয়েগুলোর থেকে কালো চুলের ইহুদি মেয়েগুলো দেখে দেখে চোখ ভরে যায়। যা হোক, ওরা কিন্তু হেব্বি সেক্সি। ইহুদি মেয়েগুলোর অবশ্য ধর্ম নিয়ে একটা রক্ষণশীলতা আছে।
'সেক্সি' বললেই যেন জয়ন্তের চোখে এখন কেমন একটি ছবি ভাসে। মিতার চর্বিযুক্ত পাকা গমের মত রঙা ভাঁজ পড়া পেট আর তার ওপর ঠাসা দুটি বড় বড় উদ্ধত স্তন। যেন তেলরঙে আঁকা হেমেন মজুমদারের কোনো ছবি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে সে। আর তক্ষুনি মনে পড়ল মোবাইল ফোনটায় মেসেজ ঢুকেছে মিতার। এর মাঝে তা দেখার অবকাশ পায়নি।
লিফটের মধ্যে পাশাপাশি দুজন দাঁড়িয়ে আছে। ডাঃ জয়ন্ত দাশগুপ্ত সমস্ত পরিশীলতা ভেঙে তাকালো অনলের দিকে। অনলের মুখে মুচকি হাসি। জয়ন্ত লাজ ভেঙে বললে---চাবিটা আমাকে দিয়ে যেতে পারিস।
---সে কথা আগেই বুঝেছি। পঞ্চাশ ছুঁই ডাক্তারবাবুর মোবাইলে এত ঘনঘন মেসেজ ঢোকে কেন। আর সেই মেসেজ দেখতে এতই বা আড়ষ্টতা কেন। নিশ্চিত বউ বা কোনো পেশেন্ট পার্টির নয়। তখনই বুঝেছি তুই ব্যাটা জয়ন্ত, চিরকালই ছুপা রুস্তম থেকে গেলি।
দুজনের মুখে সম অপরাধপ্রবণতার হাসি। অনল পুনরায় বললে---আর যা করিস, সামলে। আমার মত বউয়ের কাছে ধরা খাস না।
***